বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কারে সহায়তা দিতে আগ্রহী কমনওয়েলথ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ১৭:৩৪

কমনওয়েলথের মহাসচিব শার্লি আয়োরকর বোচওয়ের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক।
কমনওয়েলথের মহাসচিব শার্লি আয়োরকর বোচওয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার লন্ডনের একটি হোটেলে এই সাক্ষাৎ হয় বলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়েছে।
বৈঠকে কমনওয়েলথ মহাসচিব জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কারে সহায়তা দিতে আগ্রহী সংস্থাটি।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ যদি চায়, বিশেষ করে সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য, তাহলে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।”
গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করাকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পাশে থাকার কথাও বলেন বোচওয়ে।
কমনওয়েলথের বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ বর্তমানে ৮৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী কয়েক বছরে তা কমপক্ষে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
“কমনওয়েলথের অনেক সদস্য রাষ্ট্র জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এবং এর মধ্যে অনেক দেশ আকারে অত্যন্ত ছোট। আমরা তাদের জলবায়ু অর্থায়নে প্রবেশাধিকার পেতে সহায়তা করার চেষ্টা করব,” বলেন তিনি।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ক্রীড়া খাতে সম্ভাবনা অন্বেষণ এবং কমনওয়েলথ সদস্য দেশগুলোর তরুণদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, “ক্রীড়া শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি একটি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও। আমরা ক্রীড়াবিদদের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছি। কমনওয়েলথের স্মরণীয় হয়ে ওঠার জন্য ক্রীড়া হতে পারে একটি ভালো মাধ্যম।”
কমনওয়েলথ মহাসচিব জানান, চলতি মাসেই ঢাকায় একটি যুব প্রোগ্রাম আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
তিনি বলেন, “কমনওয়েলথের ১.৫ বিলিয়ন জনগণ তরুণ এবং তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার জন্য আমরা কাজ করছি।”
বৃত্তি কার্যক্রম পুনর্গঠনের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি, একটি ক্ষেত্র যা বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করেন।
বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে মঙ্গলবার লন্ডনে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এয়ারবাসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াউটার ভ্যান ওয়ার্শ।
চার দিনের সরকারি সফরে ইউনূস স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫ মিনিটে লন্ডন পৌঁছান।
সফরকালে তিনি ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস, প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তার বৈঠকের কথা রয়েছে।
এর আগে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক জানান, মানুষ, প্রকৃতি ও পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সহাবস্থান এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে অধ্যাপক ইউনূসকে ‘কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হচ্ছে।
১২ জুন লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে রাজা চার্লসের হাত থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করবেন অধ্যাপক ইউনূস।
সফরসূচি অনুযায়ী, ১১ জুন তিনি রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স, চ্যাথাম হাউসে একটি বিশেষ বক্তৃতা দেবেন। এছাড়া কমনওয়েলথ এবং আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থা (আইএমও)–এর মহাসচিবদের সঙ্গেও তার সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে।
১৪ জুন ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।