রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ চান নাহিদ ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ১৮:৪০

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ঘোষণার সরকারের প্রতিশ্রুত সময় পার হয়ে যাওয়ার পর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঘোষণা দিয়েছিল, ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে তারা জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ করবেন। তবে এখনও তারা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ জারি হোক সেটি চান আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
সোমবার বিকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক পোস্টে এই চাওয়ার কথা জানান নাহিদ।
নাহিদ লেখেন, “সরকারের কাছে অবশ্যই আমরা জবাবদিহি চাই। এবং আমরা চাই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এ ঘোষণাপত্র জারি করা হউক যা পরবর্তীতে সংবিধানে যুক্ত করার কমিটমেন্ট থাকবে। কিন্তু সরকার যদি কোনো উদ্যোগই না নেয় আমরা বসে থাকব না।”
জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সব পক্ষকে নিজেদের ইশতেহার তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন নাহিদ ইসলাম। বলেন, “আমাদের ইশতেহার অবশ্যই আমরা প্রকাশ করব। অন্য সকল পক্ষকেও বলব আপনাদের ইশতেহার তৈরি করুন। সকলে মিলে আমরা দলিল তৈরি করতে পারলে সরকার সেটা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে।”
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকেই পাঠ করা হবে বলে জানান নাহিদ।
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ কী সেটির উত্তরও দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির এই শীর্ষ নেতা। বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্র হচ্ছে জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, শহীদ, আহত ও নেতৃত্বদের অবদান ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা এবং জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষার সংজ্ঞায়ন নিশ্চিতে একটি জাতীয় দলিল যা পরবর্তীতে আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি পাবে।”
সরকারের অসহযোগিতার কথা উল্লেখ করে নাহিদ লেখেন, “৩১ শে ডিসেম্বর ছাত্রনেতৃত্ব জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সরকার সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে সরকারিভাবে ঘোষণাপত্র দিতে চেয়েছিল। ছাত্রনেতৃত্ব তাই তাদের উদ্যোগ থেকে সরে এসেছিল।”
তিনি লেখেন, “সরকার বিভিন্ন দল/পক্ষ থেকে খসড়া ঘোষণাপত্র চেয়েছিল। সেই সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে একটা খসড়া ঘোষণাপত্র দেওয়া হয়েছিল। সবগুলা ডকুমেন্ট মিলিয়ে একটা কমন দলিল তৈরি করার কথা ছিল যা সবপক্ষ একসাথে উদযাপনের মাধ্যমে ঘোষণা করবে।”
“কিন্তু সরকার দুই দুইবার সময় দিয়েও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। কেন করেনি, কোথায় বাধা পেল তাও স্পষ্ট করেনি” যোগ করেন নাহিদ।
পোস্টে জুলাই সনদ কী সেটির ব্যাখ্যাও দেন নাহিদ ইসলাম। বলেন, “জুলাই সনদে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা থাকবে। সংবিধানের কোন কোন জায়গায় পরিবর্তন হবে সে বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যের দলিল হবে জুলাই সনদ যেখানে সব দল স্বাক্ষর করবে।”
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি এখনো ঠিক হয়নি উল্লেখ করে নাহিদ লেখেন, “গণভোট, গণপরিষদ অথবা সংসদে সংশোধনীর মাধ্যমে এই সনদ কার্যকর হবে।
পরবর্তী নির্বাচিত সরকার জুলাই সনদ অনুযায়ী সংস্কারের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বাধ্য থাকবে।”
জুলাই-আগস্ট মাসে জুলাইয়ে ঘোষণাপত্র ও সনদ দুইটাই দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন নাহিদ।
সরকারকে অভয় দিয়ে নাহিদ বলেন, “কোনো একটি পক্ষ যদি দলীয় স্বার্থে ঐকমত্য প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে তাহলে সরকারের উচিত ভয় না করে অন্য সকল পক্ষ ও সাধারণ জনগনকে সাথে নিয়ে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করা।”
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র দিতে না পারলে জুলাই উদযাপনে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার এখতিয়ার সরকারের থাকবে না বলেও মনে করেন নাহিদ ইসলাম।
ফেসবুক পোস্টে নাহিদ লেখেন, “আমরা দৃঢ়ভাবে চাই ৫ ই আগস্ট তথা ৩৬শে জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ রচিত হোক। সকল পক্ষ সকল ধরনের ছাড় দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করুক।”