বিক্ষোভের ডাক হেফাজতের, প্রয়োজনে আরেকটি ‘শাপলা চত্বর’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ২০:৫৬

ঢাকা মহানগরের আলোচনায় বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর স্থাপন হলে প্রয়োজনে আবার ‘শাপলা চত্বরে’ যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।
এই দপ্তর স্থাপনে নীতিগত অনুমতি দেওয়ার প্রতিবাদে আগামী শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে বিক্ষোভেরও ডাক দেওয়া হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসা মিলনায়তন সংগঠনের ঢাকা মহানগরের আলোচনায় বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর স্থাপন হলে প্রয়োজনে আবার ‘শাপলা চত্বরে’ যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।
এই দপ্তর স্থাপনে নীতিগত অনুমতি দেওয়ার প্রতিবাদে আগামী শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে বিক্ষোভেরও ডাক দেওয়া হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসা মিলনায়তন সংগঠনের ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে এক আলোচনায় নেতারা এই ঘোষণা দেন।
হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, “আমরা জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের নামে এদেশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার ‘নীলনকশা’ বাস্তবায়ন হতে দেব না।”
“যদি হেফাজতে ইসলাম প্রয়োজন মনে করে, তাহলে ইসলাম, দেশ ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য, এই ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে আমরা প্রয়োজনে আবার শাপলা চত্বরে যাব।”
২০১৩ সালে শাপলা চত্বর, ২০২১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে ওই আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
সর্বশক্তি দিয়ে মোকাবিলা
আলোচনায় হেফাজতের আমির শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ্ বাবুনগরীর উপস্থিতিতে তার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল ইসলাম ইসলামাবাদী।
এতে বলা হয়, “আমরা লক্ষ্য করছি, জাতিসংঘ শরিয়া ও পারিবারিক রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করছে। তারা মুসলিম দেশগুলোতে ঢুকে, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালাচ্ছে। মানবাধিকারের নামে যদি বাংলাদেশে ধর্মীয় ও সামাজিক কাঠামোতে হস্তক্ষেপ করা হয় তাহলে ঈমানদার জনতা না সর্বশক্তি দিয়ে মোকাবিলা করবে।”
“সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় এবং দূত নিয়োগে যে আবেদন সরকারের প্রতি করা হয়েছে তা আপনারা প্রত্যাখ্যান করুন। অন্যথায় আপামর তৌহিদী জনতাকে সাথে নিয়ে হেফাজতে ইসলাম তা শক্তভাবে মোকাবেলা করবে।”
গত রবিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ওএইচসিএইচআর (জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন) এর একটি শাখা অফিস উনারা বাংলাদেশে খুলতে চাচ্ছিলেন। এ লক্ষ্যে উনারা আলোচনা করছিলেন। এ আলোচনার একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এমওইউ বা সমঝোতা স্মারক উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে। সেটা আমরা কয়েকজন উপদেষ্টারা মিলে পরীক্ষা করব।”
তিনি জানান, ঢাকায় প্রাথমিকভাবে তিন বছরের জন্য চালু হবে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয়।
হেফাজত আমিরের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “সরকারের কাছে আমাদের স্পষ্ট বার্তা, মানবাধিকার সুরক্ষার দোহাই দিয়ে, বেহায়াপনা-বেলাল্লাপনা, সমকামিতা ও অবাধ যৌনাচার, মুসলিম পারিবারিক আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার যে চক্রান্ত, শুরু হয়েছে তা প্রতিহত করতে হবে।”
বিক্ষোভের ডাক
শুক্রবার বায়তুল মোকাররমের সামনে বিক্ষোভ করার ঘোষণাও দেন হেফাজতের আমির। পরে সংগঠনের মহাসচিব সাজিদুর রহমান বলেন, “পশ্চিমা ‘এজেন্ডা বাংলার মাটিতে বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে আবার রক্ত দেবো, যুদ্ধ করব।
“সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বলছি, অতি তাড়াতাড়ি এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন। নাহলে হেফাজতে ইসলাম প্রতিহত এ সিদ্ধান্তকে করবে।”
হেফাজতের ঢাকা মহানগরের সভাপতি জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, “আমাকে একজন বলেছে, গত ১৫ দেশে অসংখ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে এখানে অফিস খোলার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি বললাম, যখন মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছিল, তখন ছিল কোথায়?”
নারী ও শিশু উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ কওমি মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ‘বিষোদগার’ করেছেন বলে অভিযোগ করে তাকে অপসারণের দাবিও করেন এই হেফাজত নেতা।
হেফাজতের সহকারী মহাসচিব আতাউল্লাহ আমিন, যুগ্ম মহাসচিব সাখাওয়াত হোসেন রাজিও এ সময় বক্তব্য রাখেন।