Logo
×

Follow Us

রাজনীতি

ডাকসু জাতীয় নির্বাচনে প্রতিফলন করবে না: মান্না

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:১৬

ডাকসু জাতীয় নির্বাচনে প্রতিফলন করবে না: মান্না

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ: সংস্কার বাস্তবায়নের পথরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মাহমুদুর রহমান মান্না

ডাকসু নির্বাচন জাতীয় ভোটে প্রতিফলন করবে না মন্তব্য করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, “আমি দুইবার ডাকসুর ভিপি হয়েছি। খুব পপুলার ছিলাম ছাত্রদের মধ্যে। কিন্ত, আমার পলিটিক্যাল পার্টি হয়নি। আমি তো ক্ষমতায় যাইনি। আমার পার্টি ক্ষমতায় যেতে পারিনি।"

বুধবার রাজধানী সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ: সংস্কার বাস্তবায়নের পথরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব বলেন।

ডাকসুর সাবে ভিপি মান্না বলেন, “ডাকসুতে জিতলেই যে তারা জাতীয় রাজনীতিতে বিরাট কিছু করে ফেলবে সেরকম নয়। কিন্তু তারপরেও মনে করে দেখেন, আমার সেই সংগঠন ছিল না। কিন্তু এবার যারা জিতেছেন তাদের তো সংগঠন আছে। তারা সেটাকে ট্রান্সলেট করতে পারবেন।”

“যেই চিন্তার ভিত্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীরা ভোট দিল, এরপর তো রাকসু হবে, জাকসু হবে, চাকসু হবে, কিসের প্রতিফলন দেখবেন ভাবেন। আমরা কী এরকম কোন কাজ করেছি? আপনারা, আমি, আমরা সবাই মিলে বলছি ওরা গুপ্ত রাজনীতি করেছে। খুবই অন্যায়।”

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “গত ১৫-১৬ বছর ধরে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে, এই দেশে যে একটা ভালো ভোট হতে পারে, শেষ পর্যন্ত ভোট শেষ হতে পারে এইরকম ধারণাই মানুষ করতে পারেনি। পরিস্থিতি তো এরকম দাঁড়িয়েছিল যে মানুষই আমাদের কাছে বলছিল, শেখ হাসিনাকে কেউ সরাতে পারবে না। সেই শেখ হাসিনাই চলে গেছে।”

“তারপরে একটা ভালো ভোট করবার জন্য আমরা সবগুলো পার্টি মিলে চর্চা করছি। এখনও মানুষ আমাদেরকে জিজ্ঞেস করে ভাই ভোট কি হবে? ভালো ভোট করবার জন্য যে সংস্কার তার জন্য ঐক্যমত কমিশন আগামীকালকে আবারও বসবে।”

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, “গতকালকে যে নির্বাচন হয়েছে যদি এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন আর গোলমাল শুরু না হয় তাহলে মানুষ মনে করবে ভালো নির্বাচন তো সম্ভব। সেটা ছাত্ররা দেখাবে। আমি এই জন্যে তাদেরকে (ছাত্রদের) ধন্যবাদ দেই। জানি এই নির্বাচনের ফলাফল অনেকের জন্য রীতিমত শকিং। অনেকেই এরকম ধারণাই করতে পারেনি। কেউ কেউ অবশ্য বলছে যে এটার মধ্যে জোচ্চুরি, জালিয়াতি ইত্যাদি আছে। কিন্তু তারপরে ফলাফলটা ঘোষণা হয়েছে।”

মান্না বলেন, “যারা কালকে বিকেল বা সন্ধ্যা থেকে বিক্ষোভ করছিলেন তারা এখন আপাতত প্রশমিত বলে মনে হচ্ছে। আমি আবার এই ডাকসু নির্বাচনের একটা মহামূল্যবান পণ্য হয়ে গেছি। আমি আবার দুইবারের ভিপি। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সবাই প্রশ্ন করে— ভাই কী হতে পারে বলেন তো? আমি কিন্তু কিচ্ছু বুঝতে পারিনি। আমি দুজন মানুষকে পেয়েছি। একজন হচ্ছেন আমার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক। উনি গতকাল সন্ধ্যার সময় আমাকে বলেছেন শিবির জিতবে। আমার বিশ্বাসই হতে চায়নি। মেয়েরা ভোট দেবে? ওরা কপালে টিপ নিতে দেয় না, সুন্দরভাবে বেরতে দেয় না, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে দেয় না, ওদের কেন ভোট দেবে? উনি বলতেন, না ওদেরকেই ভোট দেবে। তখন আমার মনে হয়েছিল আমি তো চাকসুরও জিএস ছিলাম। আমার পরে চাকসুতে ভিপিতে জিতেছিলেন জসিম। উনি গেছেন ভোটের আগে লেডিজ হলে। সব মেয়েরা ঘিরে ধরেছে। ভাই কি আপনারা নাকি আমাদেরকে বোরকা পড়তে বাধ্য করবেন? আমাদের মাথায় টিপ দিতে দেবেন না। সন্ধ্যার পরে বেরোতে যেতে দেবেন না। উনি কথা বলেছিলেন অনেকক্ষণ বসে বসে তাদের সাথে। এরপরে মেয়েরা নাকি তার কথায় কনভেন্স হয়ে তাকে ভোট দিয়েছিল।”

ছাত্রসমাজের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “জেনজি নিয়ে এত কথা হলো। নেপালে জেনজি ইতিহাস রচনা করে দিয়েছে। এই জেনজি পুরা আফ্রিকাতে ল্যাটিন আমেরিকাতে ইতিহাস তৈরি করেছে। উগান্ডাতে জেনজির একটা বক্তব্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। তারা বলেছে, এই ক্রান্তিকর অপমানজনক জীবনযাপন করতে করতে আমরা বিরক্ত। এবারে কিছু সাহস দেখাতে চাই।”

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, "মিলিয়ে দেখেন এই গেস্ট রুম কালচার, বড় ভাইদের সালাম করা, প্রোটোকল দেওয়া, ভর্তি পরীক্ষা না হলেও তারপরেও ভর্তি হতে পারবে, পরীক্ষা দিতে না দেওয়া। এ সব দেখে অপমানিত ছাত্রসমাজ মনে করেছে এই জীবনের মধ্যে আমরা সাহস দেখাব। চব্বিশে এত বড় সাহস কোথা থেকে আসলো? সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো একবারও সাহস দেখাতে পারেনি। ঘুরে দাঁড়ায়নি। বিশাল সমাবেশ হবে, সরকার (হাসিনা সরকার) বলেছে করতে দেব না।”

“এই প্রজন্ম এক বছর পরে মনে করছে, এই দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি আমরা দেখতে চাই না। এই যে মিথ্যাচারের রাজনীতি, এইযে এক বছর যেটা দেখলাম চাঁদাবাজি দখলদারিত্বের রাজনীতি এবং ক্ষমতায় যাবার আগেই ক্ষমতায়িত হয়ে গেছে এমন হাবভাব করার এই রাজনীতি দেখতে চায় না। অতএব তারা নতুন কিছু করতে চায়। ঘটনাটা এটাই ঘটল।”

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, “আমিতো দেখছি গুপ্ত রাজনীতি করে তারা (শিবির) সংগঠিত থেকেছে। ওরা আওয়ামী লীগের মধ্যে ঢুকেছে, ছাত্রলীগের মধ্যে ঢুকেছে, গালাগালি করছেন, মামলা করছে, কিন্তু ওরা মনে করছে এইভাবেই বেঁচে থেকে লড়াই করব। কারণ ওইখানে থাকবার পরে ফিরে আবার তার জায়গায় এসেছে এবং নির্বাচন করে জিতেছে। রাজনীতি একেবারে ওইরকম নয়। তালি বাজাতে বাজাতে, বগল বাজাতে বাজাতে ক্ষমতায় চলে যাব তারপরে লুটপাট করব। খুব সুন্দর একটা জীবন পেয়ে যাব। এইরকম পাওয়া যায় না। রাজনীতি একটা কঠিন সংগ্রামের বিষয়। রাজনীতি একটা বুদ্ধিবৃত্তির লড়াই। রাজনীতি একটা আন্তরিকতার প্রশ্ন। রাজনীতি একটা অঙ্গীকারের বিষয়। একেবারে হালকাভাবে নেওয়া যায় না। যারা হালকাভাবে নিয়েছিলেন তারা তিনটা থেকে প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন। তারা মনে করেছে একটা গোলমাল লাগিয়ে দেব, একটা কিছু করব। কিন্তু সেটাও করতে পারেননি।”

মান্না বলেন, “আজকে দেখেন—লড়াই করছে সেই দুটো রাজনৈতিক দল, যারা কিছুদিন আগে একসাথে ছিল। একসাথে জোটের মধ্যে ছিল। কিন্তু কী কারণে বেরিয়ে গেল? তার কোনো ব্যাখ্যাও দেয় নাই। কেন আপনাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল? মতের পার্থক্য?”

জামায়াত-শিবিরের উদ্দেশে মান্না বলেন, “ভেবে দেখেন আজ থেকে ৩০-৫০ বছর আগে একটা রাজনৈতিক দল মাথা তুলবার মত সাহস পেত না। কেউ যদি তাদের দেখে তাহলে তাদের বিপদজ্জনক পরিস্থিতি হতো। তারা এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে আসছে এবং আমাদের চাইতে বড় যারা তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করছে। যে না, আপনি যেটা বলছেন সেটা ঠিক নয় আমি যা বলছি তাই মানতে হবে। অথচ এই সত্যি, অন্তত বুদ্ধিবৃত্তির এই লড়াইয়ে আমরা যেকোনো কারো চাইতে ভালো জায়গায় আছি। আমাদের নিজের মধ্যে সব বিষয়ে ঐক্য নেই এ কথা বলেছেন কেউ কেউ। সব বিষয়ে ঐক্য কখনোই হয় না। যখন বলে ঐক্যমত কমিশন মানে সব ব্যাপারে একমত হয়ে যাব, সেরকম কথা না। যতদূর পর্যন্ত একমত হতে পারি তার ভিত্তিতে সামনে দিকে যাব এবং সেই লড়াইটা এখন করছি।”

“আমরা এখন কী চাচ্ছি? খুব সাধারণভাবে বললে আমরা একটা ভালো নির্বাচন চাই। সংস্কারটা কেন? যাতে ভালো নির্বাচন হতে পারে যেটা সবাই গ্রহণ করতে পারে। তার জন্য যতখানি দৃঢ় থাকা দরকার তাই থাকছি। তার জন্য যতখানি ছাড় দেওয়া দরকার সেই ছাড় দিতেও রাজি আছি।”

মান্না বলেন, “আমি মনে করি আজকে আমাদের সামনে যে প্রশ্নটা আসছে সেটা হচ্ছে, আমরা মনে করি এই যে লড়াই সেটার পরিচালক হচ্ছে সরকার। সেই সরকার তার দায়িত্বটা পরিপূর্ণভাবে পালন করতে পারছে না। না হলে এত বড় বড় কনস্টিটিউশন সব এক্সপার্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ তারা বলতে পারছেন না কীভাবে এই যে সনদটা তৈরি করা যাবে এবং এই সনদকে একটা আইনি ভিত্তি দেওয়া যায়।”

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে মান্না বলেন, “ব্যাপারটা খুব সোজা, তা মনে করছিলাম আমরা। কিন্তু তারপরেও আমাদের কাছে তো প্রস্তাব আছে। আমরা বলেছি আমরা যখনই সাংবিধানিক সংকটের সময় পড়ি তখন সরকারের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট, সুপ্রিম কোর্টের কাছে রায় চান। বলেন এই ক্রাইসিসে কী করতে পারি? এখন আমাদের যে সংকট হয়েছে সনদ দিয়ে সেই ব্যাপারে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের কাছে রায়টা আসতে পারে। তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে। সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দেবে যদি বিএনপি বলে মানব না, কিন্তু আমি জানি যে তারা মানবে। তারাই আমাদের কাছে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।”

আলোচনা সভায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন,গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেলসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫