ফখরুলের সঙ্গে শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বৈঠক, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন স্থগিতের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:০৮
-68d1200b3a3f5.jpg)
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের বৈঠক। ছবি: বাসস
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ দেড় ঘণ্টাব্যাপী এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন।
রবিবার বিকাল ৫টা থেকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন স্থগিত ও শ্রম আইন সংশোধনসহ ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজেএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, এমসিসিআই সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান, সাবেক সভাপতি তপন চৌধুরী ও নাসিম মনজুর, এফবিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি একে আজাদ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রধান আহসান খান চৌধুরী, বিকেএমইএ সভাপতি এম এ হাতেম, বিইএফ সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, বিজেএমইএর মহাসচিব রশিদ আহমেদ হোসাইনী, ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ প্রমুখ।
বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এসএম ফজলুল হক।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে যে বড় বড় ব্যবসায়ীরা আজকে এখানে আছেন। তাদের আসার পেছনে দুটো কারণ। একটা হচ্ছে আমাদের এলডিসি গ্রাজুয়েশন এবং আরেকটা লেবার ইস্যু…এটা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগে আগামী যে সম্ভাবনা আছে সেটাকে প্রটেক্ট করার জন্য, রক্ষা করার জন্য আমাদের কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, ‘‘এই ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত তাদের কথা শুনেছি। তারা তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো বলেছেন। এখান থেকে যেটা প্রতিয়মান হয় যে, এলডিসি গ্রাজুয়েশনে যাওয়া এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বর্তমান এবং আগামী দিনে ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে না।”
“কারণ বাংলাদেশ এখন একটা বড় ধরনের আপরাইজিংয়ের পরে আমরা এখন কিন্তু দেশটার অর্থনীতিকে রক্ষা করার জন্য সবাই মিলে কাজ করছে, এটা সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছে। বিগত দিনে এলডিসির গ্রেজুয়েশনের পরিপ্রেক্ষিতে যে পরিসংখ্যানগুলো দেওয়া হয়েছিল এগুলো প্রশ্নবিদ্ধ আছে”—যোগ করেন আমীর খসরু।
তিনি আরও বলেন, ‘‘সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য যদি আমরা অব্যাহতভাবে এগিয়ে যেতে চাই, যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি তাহলে এলডিসির গ্রাজুয়েশন স্থগিত রাখার প্রয়োজনীয়তা আছে।”
খসরু জানান, ব্যবসায়ীরা এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘকে একটি চিঠি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন, যাতে তারা সরেজমিনে এসে বাংলাদেশের প্রস্তুতি মূল্যায়ন করতে পারেন।
লেবার ইস্যুতে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে আমীর খসরু বলেন, ‘‘লেবার ইস্যুতে যে রেটিফিকেশনের ব্যাপারে উনাদের কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু অন্যান্য ইউনিয়নের নাম্বার নিয়ে যে বিষয়গুলো আছে সেখানে এই পরিবর্তনটা আনলে সত্যিকার অর্থে শ্রমিকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবে কি না এটা বিবেচনা করা দরকার কিংবা ইউনিয়নগুলো এফেক্টিভলি কাজ করতে পারবে কি না এটাও বিবেচনা করা দরকার।”
‘‘এগুলো বিবেচনা না করে তাড়াহুড়া করে যদি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাহলে আগামী দিনে একবার যদি একটা খারাপ মেসেজ যায় দেশের ভেতরে, দেশ বাইরে… এটা থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন হবে।”
“শিল্প টিকবে না যদি রাতারাতি ট্রেড ইউনিয়ন বাড়ে” —বিজেএমইএ সভাপতি
বিজেএমইএ‘র সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘‘আমাদের অনেকগুলা বিজনেস কনসার্ন আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় কনসার্ন হচ্ছে এলডিসি গ্রাজুয়েশনের ডেফারমেন্ট (স্থগিত রাখা) নিয়ে কথাবার্তা বলা, আরেকটি হচ্ছে লেবার ল‘ এ্যামেন্ডমেন্ট।”
কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘২০ জন শ্রমিক আবেদন করলেই ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে যেটা আছে শতকরা ২০ জন। একটা শিল্পে যদি ৫ হাজার লোক থাকে, ৩ হাজার লোক থাকে, ১০ হাজারের ওপরে লোক আছে এমন শিল্পও আছে আমাদের। সেখানে মাত্র ২০ জনের ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে দেওয়া হয় এবং একটা শিল্পে সর্বোচ্চ পাঁচটা রেজিস্ট্রেশন দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে শিল্প টিকবে না। এটা আমাদের একেবারে রুট লেভেলের বাস্তবসম্মত অভিজ্ঞতা।”
‘‘যারা শ্রমের অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেন তারা পিছিয়ে যাবেন ২০ জন করে ট্রেড রেজিস্ট্রেশন দিলে। তাতে করে দেখা যাবে যারা জুট ব্যবসা করেন, যাদের ইল মোটিভ আছে, বাড়িওয়ালা যেখানে ২০ জন ৫০ জন শ্রমিক ওখানে রাত্রে বসবাস করেন তারা ট্রেড লাইনের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে নিবে এবং রাতারাতি ব্যাঙের ছাতার মতো হাজার হাজার ট্রেড রেজিস্ট্রেশন পেয়ে যাবেন।”
এলডিসি গ্রাজুয়েশন পেছানো নয়, তিন বছরের জন্য স্থগিতের দাবি
‘‘এলডিসি গ্রাজুয়েশন আমরা পোসপোন্ড করতে চাই না, আমরা ডেফারমেন্ট চাই তিন বছরের জন্য। এই তিন বছর ডেফারমেন্টের এজন্য লাগবে যে, আমরা এখনো প্রস্তুত না। এর মধ্যে একটা আছে ফলসিফাই ডাটা যে ডাটা ডাটার ভিত্তিতে করা হয়েছিল। আমাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার এখনো রেডি না। এই বিষয়গুলো আমরা আমাদের বিএনপির নেতৃত্বকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। আশা করি, উনারা বর্তমান সরকারকে এটা বুঝাতে সক্ষম হবেন।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে বৈঠক
সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি ক্যাথেরিন সিছিল। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি চিফ অব পার্টি আমিনুল এহসান এবং প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর আবদুল আলীম।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।