Logo
×

Follow Us

রাজনীতি

এনসিপিকে ‘আওয়ামী লীগ’ রোগে ধরেছে: হাফিজ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:১৭

এনসিপিকে ‘আওয়ামী লীগ’ রোগে ধরেছে: হাফিজ

প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর তরুণদের নিয়ে গঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ‘আওয়ামী লীগের রোগে’ ধরেছে বলে সমালোচনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “এনসিপি, তাদেরও আওয়ামী লীগের ওই রোগে ধরেছে। আওয়ামী লীগ (সরকারের নির্বাহী আদেশে বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) যেমন দাবি করে বাংলাদেশ তারাই স্বাধীন করেছে, এনসিপি এই সদ্য সাবালক ছাত্ররা, তারাও বলতে চায় যে, শেখ হাসিনা সরকারের নাকি তারাই পতন ঘটিয়েছে।”

বিএনপির আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এই নেতা বলেন, “বিএনপির ৫৮৮ জন সদস্য ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের দেড় মাসের সংগ্রামে জীবন দিয়েছে। এখন তারা মনে করে যে তারাই (এনসিপি) হলো এই রাষ্ট্রের কর্ণধার, তাদের এই দায়িত্ব এই দেশকে ঠিক করার।”

এনসিপির জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে ডাকসু নির্বাচন হলো, এই এনসিপির তো সবাই ছাত্র, তারা ছাত্রদের প্রতিনিধি বলে দাবি করত, তারা একশ ভোটও পায়নি ডাকসু নির্বাচনে। তারা এখন বলতে চায়, পিআর না হলে নির্বাচনই হতে দেবে না।”

‘স্বৈরাচারের দোসরদের মাঠে রেখে নির্বাচনে যেতে পারি না’

প্রশাসনে ‘স্বৈরাচারের দোসরদের’ রেখে বিএনপি নির্বাচনে যেতে পারে না বলে মন্তব্য করেন হাফিজ। নির্বাচন বানচালকারীদের রাজপথেই প্রতিরোধ করা হবে বলে হুঁশিয়ারী দেন তিনি।

হাফিজ উদ্দিন বলেন, “যারা বলছে যে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না, আমরা তাদের বলতে চাই, বিএনপি কোনো দুর্বল দল নয়। কারা নির্বাচন হতে দেবে না, ইনশাআল্লাহ আমরা রাজপথে দেখতে চাই।”

তিনি আরও বলেন, “১৭ বছরের আত্মত্যাগ তো ব্যর্থ হতে পারে না। আজকে আমরা বাংলাদেশের সবাইকে, সরকার, অন্যান্য রাজনৈতিক দল, যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, আওয়ামী লীগকে, সবাইকে মেসেজ দিতে চাই, জিয়াউর রহমান আজ নেই, কিন্তু তার দল বিএনপি এখনো বেঁচে আছে। ইনশাআল্লাহ ফেব্রুয়ারি মাসেই নির্বাচন হবে।”

প্রশাসনের বিভিন্ন পদে থাকা ব্যক্তিদের অপসারণের দাবি জানিয়ে হাফিজ বলেন, “বাংলাদেশ যে এখনো নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারছে না তার একটি কারণ বর্তমান প্রশাসন। এখানে স্বৈরাচারের দোসররা এখনো বসে আছে, এদেরকে সরানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এবং এরা থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।”

“আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি জানিয়েছি, আজকেও জানিয়ে যাব, নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থেই বর্তমান প্রশাসন ব্যবস্থাকেও নিরপেক্ষ করতে হবে। আমরা স্বৈরাচারের দোসরদেরকে মাঠে রেখে নির্বাচনে যেতে পারি না,” যোগ করেন তিনি।

‘পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে’

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির সমালোচনা করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, “পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে পারে না, এদেশের জনগণ এটা সম্পর্কে কোনো ধারণাই রাখে না। যারা পিআর নিয়ে আন্দোলন করছেন তাদের বলব, আপনারা জনগণের কাছে যান। আপনাদের ম্যানিফেস্টোতে বলেন, ইশতেহারে বলেন যে, আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চাই এই দেশে।”

তিনি বলেন, “জনগণ যদি আপনাদেরকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেয় তাহলে আপনারা এই ব্যবস্থা চালু করেন। আমরা মাথা পেতে নেব। কিন্তু এইভাবে জনগণের উপরে দুই-তিনটি রাজনৈতিক দল, ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আগত বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে এই ধরনের সিস্টেম করতে যাওয়া বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে। আমরা দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি কখনোই এটিকে সহ্য করব না।”

‘জাতিসংঘে এত বড় প্রতিনিধিদল কেন?’

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জাতিসংঘ সফরসঙ্গীর সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবকে আমরা সম্মান করি, তিনি দেশের গৌরব। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি সফলতার মুখ দেখাতে পারেননি। সফলতা পান না পান, ব্যয় সংকোচন তো করতে হবে। ১০৪ জনকে নিয়ে কেন জাতিসংঘে গেলেন?”

তিনি বলেন, “১০ মিনিটের একটা ভাষণ দেবেন। আমি জাতিসংঘে দুবার গিয়েছি এই ধরনের মিটিংয়ে, আমিও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছি। এই ধরনের অধিবেশনে ১০৪ জনের বিরাট লটবহর নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের জনগণের করদাতার অর্থের অপচয়।”

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদেশ সফরের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা এর চাইতেও বেশি প্রতিনিধি দল নিয়ে জাতিসংঘে বেড়াতে গিয়েছেন। কখনো দিনের পর দিন বাংলাদেশ বিমানের এয়ারক্রাফট ফিনল্যান্ডে, কখনো ইংল্যান্ডে, কখনো যুক্তরাষ্ট্রে বসে আছে। মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ, সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ, তারা এত সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন, তারাও নরমাল এয়ারলাইন্সে ট্রাভেল করেন।”

‘পার্বত্য চট্টগ্রামে আবার পুরোনো খেলা’

পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে হাফিজ বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে আবার শুরু হয়েছে পুরোনো খেলা। সেখানে ভারতীয় পতাকা উঠত বহু বছর আগে থেকেই। কেবলমাত্র শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেখানে বাঙালিদেরকে পাহাড়ি এলাকায় পুনর্বাসিত করার পরে জনসংখ্যার মধ্যে একটা ব্যালেন্স এসেছে, যার জন্য এখন আর তারা ভারতের পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারছে না।”

তিনি বলেন, “এইজন্য শহীদ জিয়াউর রহমান ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। তিনি বাংলাদেশের অখণ্ডতাকে রক্ষা করেছেন, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সবসময় পতাকাকে উড্ডীন রেখেছেন।”

জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের উদ্যোগে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিকল্প নাই’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫