গণভোট ও পিআর দাবিতে জাতি বিভক্ত হচ্ছে: সালাহউদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:১২
-68e3b24590551.jpg)
জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সালাহউদ্দিন আহমেদসহ বক্তারা।
সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের আগে গণভোট ও পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) দাবিতে জাতি বিভক্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে গণভোট ও পিআরের দাবিতে জাতিকে বিভক্ত করছে, তা মোকাবিলাই নির্বাচনি চ্যালেঞ্জ।”
সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। নাগরিক যুব ঐক্য এ সভার আয়োজন করে।
সভায় বক্তারা রাজনৈতিক দলগুলোর বিভেদ, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিলম্ব ও গণভোট আয়োজনের বিতর্ক আসন্ন নির্বাচনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জনগণের রায় নেওয়ার পক্ষে সবাই প্রায় একমত। কেউ কেউ আগে গণভোট করতে হবে—যারা নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায় সেটা নির্বাচনি চ্যালেঞ্জ।”
যারা নির্বাচনকে জটিল করতে চাইছে তাদের সুমতি কামনা করে সালাহউদ্দিন বলেন, “গণভোট যারা জটিল করতে চাচ্ছে, আল্লাহ তাদের হেদায়েত দিন। নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার প্রয়াসকে প্রতিহত করতে হবে।”
বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা আরও বলেন, “জনগণ সুষ্ঠু ভোটের জন্য মুখিয়ে আছে। কেউ অনিয়ম করতে চাইলে জনগণই প্রতিহত করবে। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গৌণ হবে।”
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিষয়ে তিনি বলেন, “নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ প্রথা ভবিষ্যতের জন্য ভয়ংকর হবে। বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, “জনগণ ৫ আগস্ট জানিয়ে দিয়েছে, দেশে ফ্যাসিবাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। আন্তর্জাতিক বৈধতার জন্য এটা বিচারিক প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত।”
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “দেশে নির্বাচন হবে কি হবে না—এই প্রশ্ন করার পরিবেশ নেই। নির্বাচন হবেই।”
তিনি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ হলো নির্বাচন। শ্রীলঙ্কা ও নেপাল সংস্কারের পথে হাঁটেনি, তাই সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। আমরা সংস্কারের পথে হেঁটে ঝামেলা বাড়িয়ে ফেলেছি।”
মান্না আরও বলেন, “৮৬টা সংস্কার যা সমাধান হয়েছে সেখানে পিআর নেই। সংস্কার কমিশনে পিআর নিয়ে আলোচনা হয়নি, সেখানে নতুনভাবে নিয়ে আসা হয়েছে গণভোট। ভোট দুটা না তিনটা জোটে হবে তা নির্ধারণ হয়নি।”
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, “নাহিদ ইসলাম যাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছে, তারা জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। উপদেষ্টারা গণঅভ্যুত্থানের কী বোঝে, তাদের সন্তানরা? নাহিদ ইসলামরা ভুল ছিলেন, আমরা।”
তিনি আরও বলেন, “কোন উপদেষ্টা জুলাইয়ের গাদ্দার—তাদের নাম প্রকাশ করুন। যে চুক্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন, সেই চুক্তি মানছে না। তারা কি নাহিদের কথা শুনছে না?”
রাশেদ খান বলেন, “সংস্কারের জন্য কি আমাদের আবার জীবন দিতে হবে? আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়া সম্ভব নয়। আগের প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সরকার সংস্কার করতে পারে নাই।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “একই দিনে জাতীয় নির্বাচনে ভোট ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ভোটে জামায়াত রাজি হয় নাই। ঐক্যমত কমিশনের ভেতরে ইতিবাচক থাকলেও বাইরে গিয়ে পরিবর্তন হয়েছে জামায়াতের।”
তিনি আরও বলেন, “নিম্নকক্ষে পিআর দেশে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। পিআর নিয়ে আন্দোলন ফ্যাসিবাদকে সুযোগ করে দিচ্ছে। বিভাজন নিয়ে নির্বাচনে গেলে তা বানচাল করে দেবে আওয়ামী লীগ ও ভারত।”
তার আশঙ্কা, গাদ্দার উপদেষ্টারা আগামী নির্বাচন বাঞ্চাল করতে পারে। যার দায় নাহিদকে নিতে হবে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “নির্বাচন নিয়ে জোট ও তোড়জোড় চলছে। ইসলামী দলগুলো এক বাক্সে ভোট নিতে চায়। ইসলামী দলগুলোতে বিভেদ তৈরি হচ্ছে। বামপন্থী দলগুলো জোট করার চেষ্টা করছে। মধ্যপন্থারাও চেষ্টা করছে জোট করার।”
তিনি বলেন, “নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। অনিশ্চিয়তার দিকও আছে।”
মঞ্জু আরও বলেন, “ঝামেলা মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতা নেই। আওয়ামী লীগ ও হিন্দু ভোটারদের নিয়ে টানাটানি চলছে। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেবে, আর আওয়ামী লীগ লোকদের দলে ভেড়াবে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “নির্বাচনি মিছিলে আওয়ামী লীগের লোক আছে—এই অভিযোগে মারামারি হবে। যা মোকাবিলায় চিন্তা করা উচিত।”
তার মতে, বিএনপি-জামায়াতের ভেতরেও বেশি মারামারি হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে আদৌই আর নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।”
সভায় বক্তারা আসন্ন নির্বাচনে গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিতে “রাজনৈতিক ঐক্য জরুরি” বলে মত দেন।
তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণভোট আয়োজন ও পিআর বিতর্ক নিয়ে দ্বিধা দূর না হলে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ তৈরি হবে না।”
তারা বলেন, জনগণ এখন পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত, কিন্তু নেতৃত্বের বিভাজনই নির্বাচনের সবচেয়ে বড় বাধা।