আমলাতন্ত্রের হাতে সব ক্ষমতা দিয়ে রাখলে দুর্নীতি ও হয়রানি বাড়বে: আমীর খসরু
 
													নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:১৯
 
					বক্তব্য রাখছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
অর্থনৈতিক সংস্কার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আমলাতন্ত্রকে ঢেলে সাজানোর ওপর জোর দিয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘‘আমলাদের জবাবদিহি করার চেয়ে তাদের কাজ ও ক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে ‘সিরিয়াস ডিরেগুলেশন’ এর মাধ্যমে দুর্নীতি ও জটিলতা বহুলাংশে কমানো সম্ভব।’’
সোমবার ঢাকার গুলশানের লেকশোর হোটেলে ‘ইকোনমিক রিফর্ম সামিট ২০২৫’-এর প্রথম দিনে উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘আমলাতন্ত্রের হাতে সব দায়িত্ব ও ক্ষমতা দিয়ে রাখলে দুর্নীতি ও হয়রানি বাড়বে। আমলাদের জবাবদিহি করার চেয়ে তাদের দায়িত্ব ও কাজ কমিয়ে আনলে আপনা থেকেই সমস্যার সমাধান হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে রপ্তানিকারকদের ইউডি (ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন) সার্টিফিকেট দেওয়ার ক্ষমতা সরিয়ে বিজিএমইএ এর মতো ব্যবসায়িক সমিতির কাছে হস্তান্তর করার ফলে এতে দুর্নীতি ও হয়রানি কমেছে এবং প্রাইভেট সেক্টর স্বনিয়ন্ত্রিত হয়েছে।’’
দুর্নীতি কমাতে ‘অনলাইন সার্ভিস’ এর কথা উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘দুর্নীতি কমাতে সরকারি অফিসগুলোতে নাগরিকের দৈহিক উপস্থিতি বা ‘ফিজিক্যাল কন্ট্রাক্ট’ যত দ্রুত সম্ভব কমিয়ে আনার অথবা পুরোপুরি বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্বের কোনো সভ্য দেশে নাগরিকদেরকে ইলেকট্রিসিটি বিল, টেলিফোন বিল বা পাসপোর্ট নবায়নের মতো সাধারণ সেবার জন্য সরকারি অফিসে দৌড়াতে হয় না। সবকিছু অনলাইনে করা সম্ভব হলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে।’’
আমীর খসরু বলেন, ‘‘দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক মডেল একটি সেকশনের জন্য কাজ করেছে, সাধারণ মানুষের জন্য নয়। তাই একটি নতুন অর্থনৈতিক ভিশন দরকার। ‘অর্থনীতির গণতন্ত্রীকরণ’ এর মাধ্যমে দেশের প্রতিটি নাগরিকের অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সুফল পাওয়ার সুযোগ থাকতে হবে।’’
প্রান্তিক মানুষের জন্য বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘মেগা প্রজেক্টের পাশাপাশি গ্রামের কারিগর ও মৃৎশিল্পীদের মতো এসব মানুষের জন্য ইনপুট সাপোর্ট, ডিজাইনিং সহায়তা, ক্রেডিট সাপোর্ট, ব্র্যান্ডিং এবং অনলাইন সেলিং প্ল্যাটফর্ম তৈরির মাধ্যমে সরকারি বিনিয়োগ করা হবে।’’
কর্মসংস্থান ও জিডিপি বাড়াতে শুধু ম্যানুফ্যাকচারিং নয়, ক্রীড়া, থিয়েটার ও আইটি খাতে বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি জেলায় স্পোর্টস কমপ্লেক্স এবং ঢাকায় থিয়েটার ডিস্ট্রিক্ট তৈরি করা গেলে লাখ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হবে।’’
আমীর খসরু বলেন, ‘‘দেশের আর্থিক খাতের সুশাসন নিশ্চিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে ‘অটোনমি’ নয়, পূর্ণ ‘ইন্ডিপেন্ডেন্স’ বা স্বাধীনতা দিতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘অর্থ মন্ত্রণালয়ে থাকা ব্যাংকিং ডিভিশন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, যা দুর্নীতি ও লুটপাটের সুযোগ তৈরি করে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এই ডিভিশন বিলুপ্ত করেছিল এবং ভবিষ্যতে এলে আবার তা বিলুপ্ত করা হবে।’’
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আনতে সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘‘ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের বিকল্প হিসেবে পুঁজিবাজার থেকে ইক্যুইটি বা বন্ড-এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের উৎস তৈরি করতে হবে।’’ সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ফ্রন্টিয়ার মার্কেট থেকে ইমার্জিং মার্কেটে উন্নীত করার সুযোগ আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া নীতি প্রণয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, যা সুশাসনের জন্য অপরিহার্য।’

