Logo
×

Follow Us

রাজনীতি

ঐকমত্য কমিশনের ‘জবরদস্তি’: ফের ফখরুলের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:১৬

ঐকমত্য কমিশনের ‘জবরদস্তি’: ফের ফখরুলের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব ও সুপারিশকে ‘একপেশে’ আখ্যা দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এসব সুপারিশ জবরদস্তিমূলকভাবে জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

প্রধান উপদেষ্টার কাছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জমা দেওয়া প্রতিবেদনের প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, “প্রস্তাবিত ৪৮টি দফার ওপর গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু এই দফাগুলোর বিপরীতে জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, ভিন্নমত কিংবা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ কোথাও উল্লেখ করা হয়নি।

“তাহলে এটা স্পষ্ট যে, দীর্ঘ প্রায় এক বছরব্যাপী সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ধারাবাহিক আলোচনা ছিল অর্থহীন, সময়ের অপচয়, প্রহসনমূলক এবং জাতির সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা।”

গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে এক অনুষ্ঠানে ‘জুলাই সনদে’ সই করে জুলাই গণঅভ্যুত্থনের পক্ষে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই এই সনদ তৈরি করে।

তবে সব বিষয়ে একমত হতে পারেনি দলগুলো। বিএনপিরও বেশ কিছু আপত্তি ছিল। দলগুলো সেই আপত্তির কথা উল্লেখ করেই সনদে সই করে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া চূড়ান্ত সনদে আপত্তিগুলো উল্লেখ করা হয়নি—যা ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে বিএনপির মধ্যে।

বুধবারও এক আলোচনায় বিএনপি নেতা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনেছিলেন।

বিএনপি নেতা বলেন, “গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত থাকবেই—এটাই স্বাভাবিক। সে কারণেই সংলাপের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন ভিন্নমত পোষণকে রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবেই গণ্য করেনি।”

দীর্ঘ আলোচনায় যেসব প্রসঙ্গ আসেনি, সুপারিশে তাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনে ফখরুল বলেন, “আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, এসব সুপারিশ কেবল জাতিকে বিভক্ত করবে, ঐক্যের বদলে অনৈক্য সৃষ্টি করবে।”

মনগড়া যেকোনো সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করলে জাতীয় জীবনে দীর্ঘমেয়াদে অকল্যাণ ডেকে নিয়ে আসতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানের অংশ’ হাস্যকর প্রস্তাব

সংবিধান সংস্কার পরিষদ প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ হতে ২৭০ পঞ্জিকা দিবসের মধ্যে যদি সংস্কার করতে ব্যর্থ হলে গণভোটে অনুমোদিত সংবিধান সংস্কার বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে বলে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ যে বক্তব্য দিয়েছেন তাকে ‘সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হাস্যকর’ বলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “জাতীয় সংসদে অনুমোদনের পর যে কোনো বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনপ্রাপ্তির পরই কেবল আইনে পরিণত হয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং তা গণতান্ত্রিক রীতি ও সংসদীয় সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি।“

‘জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট নয়’

জুলাই সনদ নিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনেরও বিরোধিতা করেন ফখরুল। তার প্রস্তাব, একই দিনে দুটি বিষয়ে ভোট হোক।

বিএনপি নেতা বলেন, “সময় স্বল্পতা ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিপুল অঙ্কের ব্যয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ব্যাপক লোকবল নিয়োগ এবং একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো বিশাল আয়োজনের বিবেচনায় নির্বাচনের পূর্বে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক এবং অবিবেচনাপ্রসূত।

“একই আয়োজনে এবং একই ব্যয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠান করা বাঞ্ছনীয়।”

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের যে আদেশ জারির কথা বলা হয়েছে, সেই আদেশ জারির এখতিয়ার একমাত্র রাষ্ট্রপতির—এই বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, “সরকারের এ ধরনের আদেশ জারি করার এখতিয়ার নেই।”

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫