জুলাই সনদ ও নির্বাচন নিয়ে ‘ভুল ব্যাখ্যা’ হচ্ছে: ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:৩৮
					জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
সাম্প্রতিক সংস্কার আলোচনায় ‘জুলাই সনদ’ ও ‘গণভোট’ প্রশ্নে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি দাবি করেন, যে সনদে দলগুলো স্বাক্ষর করেছিল, সেখানে মতানৈক্যগুলোতে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ হিসেবে লিপিবদ্ধ করার কথা ছিল। কিন্তু এখন আলোচনার বাইরে নতুন কিছু প্রস্তাব যোগ করা হয়েছে, যা রাজনৈতিকভাবে অসৎ উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত দেয়।
৭ নভেম্বর উপলক্ষে শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “নির্বাচনের সময়সীমা, গণভোটের সময় ও পদ্ধতি, এবং সংস্কারের ধাপগুলো স্পষ্ট হওয়া জরুরি। বিএনপি সংস্কারবিরোধী নয়; বরং তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবই ছিল রাজনৈতিক পরিবর্তনের মূল ভিত্তি। কিন্তু কিছু শক্তি এখন সংস্কারের নামে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।”
তিনি বলেন, “আমরা ২০২২ সালেই ৩১ দফা সংস্কারের কথা দিয়েছি। আমরা আগেই সংস্কারপন্থা দেখিয়েছি। আজকে যারা বলছেন বিএনপি সংস্কার চায় না, ওটা জনগণকে বোকা বানানো।”
তিনি বলেন, “গত জুলাইয়ে প্রকাশিত ‘জুলাই সনদ’–এ রাজনৈতিক দলগুলো যে অংশে সম্মত হয়েছিল, সেটিই কার্যকর করার কথা ছিল। ওই সনদে বলা ছিল, যেসব বিষয়ে সবাই একমত হবে, সেগুলো কার্যকর হবে; আর যেগুলোতে আপত্তি থাকবে, সেগুলো নোট অব ডিসেন্ট হিসেবে নথিভুক্ত থাকবে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার কাছে যে নতুন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেখানে সেই নোট অফ ডিসেন্টের কথাই নেই। পাশাপাশি নতুন কিছু শর্ত যোগ করা হয়েছে। এটি প্রতারণা।”
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “গণভোট ও নির্বাচন আলাদা করা হলে রাষ্ট্রের অতিরিক্ত হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় হবে। তাই আমরা বলেছি, নির্বাচন দিবসেই গণভোট থাকুক, একই ব্যালট স্লটে। এখন যারা বলছে আগে গণভোট, তারা নির্বাচন পেছানোর কৌশল করছে। এটি পরিকল্পিত বিভ্রান্তি।”
ফখরুল সভায় মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে বলেন, “ঐক্য বজায় রাখা ছাড়া কোনো রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব নয়। দেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়। জনগণের সঙ্গে থেকেই আমরা সব চক্রান্ত ব্যর্থ করব।”
তিনি অভিযোগ করেন, “দেশে এমন একটি রাজনৈতিক শক্তি আছে যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করতে চায়।”
ফখরুলের ভাষায়, ‘যারা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তারাই আজকে ১৯৭১-কে নিচে নামিয়ে দিতে চায়। আমরা সেটি হতে দেব না।”
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ছয় বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন-গুম-খুন চালানো হয়েছে।”
৭৫–এর পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র কাঠামোয় জিয়াউর রহমানের ভূমিকা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “বহুদলীয় রাজনীতি, সংবাদমাধ্যম ও অর্থনীতিতে যে ধারা চালু হয়েছিল তা জিয়াউর রহমানের শাসন আমল থেকেই হয়েছে। শেখ মুজিবের সময়ে সব পত্রিকা বন্ধ ছিল, মাত্র চারটি ছিল, আর সেগুলোও সরকারি নিয়ন্ত্রণে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া বহুদলীয় শাসন ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা দিয়েছেন।”
সমাবেশে সারাদেশ থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
