Logo
×

Follow Us

রাজনীতি

‘মব ভায়োলেন্স’ থেকে সরে আসতে হবে’: ফখরুল

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:১২

‘মব ভায়োলেন্স’ থেকে সরে আসতে হবে’: ফখরুল

বুধবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বিএনপি’ শীর্ষক সংকলিত গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে ‘মব ভায়োলেন্স’ থেকে সরে আসতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বিএনপি’ শীর্ষক সংকলিত গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। আলোচনা সভায় গণঅভ্যুত্থানের ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র উপস্থাপন করা হয়।

তিনি বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের প্রধানতম কথা হচ্ছে, আপনাকে অন্যের মত সহ্য করতে হবে…(টলারেন্স) আমি কথা বলব, আপনার কথা সহ্য করব না, পিটিয়ে দেব, মব ভায়োলেন্স তৈরি করব, কিছু মানুষ জড়ো করে বলব যে ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও, তাকে মেরে ফেলো পিটিয়ে… দিস ইজ নট ডেমোক্রেসি।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ডেমোক্রেসির মূল কথাটা হচ্ছে, আমি তোমার সঙ্গে একমত না হতে পারি কিন্তু তোমার মত প্রকাশের যে স্বাধীনতা তাকে আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করব। দ্যাট ইজ ডেমোক্রেসি। দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা এখানে অন্যের মতকে সহ্য করতে চাই না, আমরা তাকে উড়িয়ে দিতে চাই… এই জায়গা থেকে আমাদেরকে সরে আসতে হবে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থেই যদি আমরা টেকসই একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে চাই, ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে না চাই তাহলে গণতন্ত্রকে আমাদের এখানে প্রতিপালন করতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মাণ করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, ‘‘কোন দল কে জিতল, কে হারল… এটা জরুরি নয়, জরুরি হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানটা শক্তিশালী হলো কিনা, আমাদের জুডিশিয়ারি ইন্ডিপেন্ডেন্ট কিনা, আমাদের মিডিয়া ইন্ডিপেন্ডেন্ট কিনা, আমাদের পার্লামেন্ট ইফেক্টিভ কিনা, আমাদের দেশ আইনের শাসনে চলছে কিনা, সুশাসন চলছে কিনা, মানুষের সামাজিক মর্যাদা সুরক্ষা এবং মানবাধিকার আমরা রাখতে পারছি কিনা… এই বিষয়গুলো নিয়েই আমাদের ভবিষ্যতে কাজ করতে হবে।”

‘গণতন্ত্রের মোর্চা গড়তে হবে’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘নির্বাচন আসছে। বিএনপির ওপরে দায়িত্ব বেশি পড়ছে। বিএনপিকে সত্যিকার অর্থেই এমন একটা মোর্চা গড়ে তুলতে হবে যে মোর্চা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে অতীতে, লড়াই করবে এবং গণতন্ত্রকে এখানে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেবে। এই মোর্চাই আমাদেরকে এখানে গড়তে হবে।”

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া…. তার দিকে তাকালেই তো আমরা উত্তরটা পেয়ে যাই। একজন নেত্রী যিনি গণতন্ত্রের জন্যে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য কত নির্যাতন সহ্য করেছেন এবং দীর্ঘ ছয় বছর কারা অন্তরীন থেকেছেন। এখনো অসুস্থ অবস্থায় তিনি কিন্তু এই গণতন্ত্রের কথাই বলছেন।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘৫ আগস্ট তিনি (খালেদা জিয়া) খুব ছোট্ট একটা বিবৃতি দিয়েছিলেন… ওই বিবৃতিতে খুব সুন্দর করে বলেছিলেন, প্রতিশোধ নয়, প্রতিহিংসা নয়। আসুন আমরা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে সবাই একযোগে কাজ করি… এই যে আপনার ধারণা এটাকে আমাদেরকে মূলত কাজে লাগাতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি… মনে করি যে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব তিনি নির্যাতিত হয়েছেন, তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে, অত্যাচার করা হয়েছে তারপরও বিদেশে থেকে তিনি কিন্তু আমাদের দলকে শুধু নয় গোটা জাতিকে উদ্ধুদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন, তিনি উজ্জীবিত করেছেন।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘কিছুক্ষণ আগে প্রামাণ্যচিত্রে তার বক্তব্যে আপনার দেখেছেন কীভাবে গণতন্ত্রের পক্ষে তিনি মানুষকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব যে আমরা সবাই যারা অন্তত গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমরা সবাই একজোট হয়ে সামনের দিনগুলোতে শুধু নির্বাচন নয়, নির্বাচন পরবর্তীকালে যেন গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারি, শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে পারি…এটাতে আমাদেরকে একযোগে কাজ করতে হবে।”

‘রায়ের গুরুত্বকে কমিয়ে দিতে একটি মহলের চক্রান্ত’

মির্জা ফখরুল বলেন,, ‘‘আমার মাঝে মাঝে একটু হতাশ লাগে। হতাশ লাগে যখন বাংলাদেশে চারদিকে দেখতে পাই। যখন দেখি যে আপনার একদিকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্যে রায় দেওয়া হচ্ছে কোর্টে। অন্যদিকে দেখি মব ক্রেসি, মব ভায়োলেন্স চলছে। এটা কিসের আলামত আমি জানি না।”

তিনি বলেন, ‘‘আমি তো মনে করি যে ওই রায়ের যে গুরুত্ব সেটাকে কমিয়ে দেওয়ার জন্য একটা বিশেষ মহল ভিন্ন খাতে বিশ্ব দৃষ্টিকে নেওয়ার জন্য এই কাজগুলো করেছে। এই বিষয়গুলো আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করি, লড়াই করি, আমাদের ছেলেরা যারা প্রাণ দিয়েছে। আজকে কোনো একটা মহল অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে অত্যন্ত ধূর্ততার সঙ্গে, চালাকির সঙ্গে সেটাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে কিনা এটা আমাদের দেখা উচিত। এর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করছে কিনা?”

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই বিএনপি কোনো বিপ্লবী দল নয়। বিএনপি একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং গণতন্ত্রের জন্যই সারাজীবন ধরে লড়াই করেছি এবং এই দেশের মানুষ বাংলাদেশের মানুষও তার গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্যই শত শত বছর ধরে লড়াই করেছে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘এখানে নিঃসন্দেহে যারা বিভিন্ন মতবাদে বিশ্বাস করেন করতে পারেন। কিন্তু আমরা বিএনপি খুব পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, উই আর লিবারেল ডেমোক্রেটস। এতে আমাদেরকে কেউ ভুল বোঝার কোনো সুযোগ আমি দিতে চাই না। আমি বিপ্লবী নয়। আই অ্যাম এ লিবারেল ডেমোক্রেট। আমরা সবাইকে নিয়ে এই ভূখণ্ডে যারা বাস করে তাদের সবাইকে নিয়ে সব ধর্ম, সব বর্ণ, সব মত সবাইকে একসঙ্গে করে আমরা একটা রেইনবো স্টেট নির্মাণ করতে চাই এটা আমাদের ঘোষিত নীতি।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, যুবদলের আবদুল মোনায়েম মুন্না, ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বিএনপি’ গ্রন্থের সম্পাদক বাবুল তালুকদার, প্রকাশক অধ্যাপক বিএম নাগিব হোসেন বক্তব্য রাখেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫