Logo
×

Follow Us

রাজনীতি

উন্নয়নের ফাঁপা বেলুন করোনার ধাক্কায় ফুটো: রিজভী

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২০, ১৭:৫০

উন্নয়নের ফাঁপা বেলুন করোনার ধাক্কায় ফুটো: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ, অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতালের বেড আর করোনা আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা সুবিধা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ এই সরকার। উন্নয়নের ফাঁপা গল্পের মাঝে যে একটা বাতাসযুক্ত বেলুন ছিল করোনার সামান্য ধাক্কায় সেটা ফুটো হয়ে গেছে। জনগণের চিকিৎসা পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার হরণের দায় সরকারেরই।

রবিবার (৭ জুন) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে অনুষ্ঠিত এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।

অবিচার-অনাচার আর দুর্নীতিকেই সরকার নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, দুর্নীতি হয়ে গেছে তাদের মজ্জাগত। এই ভয়াল করোনা মহামারির মধ্যেও দুর্নীতি চলছে প্রায় প্রকাশ্যে। নিজেদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থে বিরোধী দল ও মতের মানুষের বিরুদ্ধে র‌্যাব-পুলিশকে লেলিয়ে দেয়া, ব্যাংক ডাকাতি, টাকা পাচার, ভোট ডাকাতি, ব্যালট চুরি করে বছরের পর বছর ধরে এভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় একের পর এক নানা অপকর্মে সমাজ ও রাষ্ট্র-ব্যবস্থা নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এমন মহাদুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তেও সরকারের দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতির চিন্তায় মগ্ন। স্বাস্থ্য খাতকে লুটপাটের আঁখড়ায় পরিণত করেছে। সেখানে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব। ক্ষমতাসীন দলের হোমরা-চোমরারা দুর্নীতিতে ভাগ বসাতে ব্যস্ত। এই মহামারির মহাদুর্দিনেও সাগরচুরির মহা উল্লাসে ওরা মেতে উঠেছে তারা।

স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির সাথে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে জড়িত দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচি বলেন, তীব্র সংকট মোকাবিলায় ভেন্টিলেটর আমদানির পরিকল্পনা নেয়া হলেও আজও ক্রয়াদেশ দেয়া হয়নি। ভেন্টিলেটর আমদানির আগেই সেখানে দুর্নীতির কালো হাতের থাবা বিস্তার করেছে। এই ক্রয়ের সাথে খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে গণমাধ্যম। খবরে বলা হয়েছে, দুর্নীতির কারণে কার্যাদেশ দিতে দেরি হচ্ছে। করোনাকালের ১২ সপ্তাহেও এই আদেশ দেয়া যায়নি। অসচ্ছতা ও দুর্নীতির কারণে আটকে আছে ভেন্টিলেটর আমদানি। দেয়া যাচ্ছে না কার্যাদেশ। এভাবে গত একদশকে এই সরকারের প্রতি ক্ষেত্রেই, প্রতিটি প্রকল্পেই চুরি-দুর্নীতি সাধারণ বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে।

রিজভী বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে যখন করোনাভাইরাসে মানুষের মৃত্যুর খবর আসছে, তখনও সরকার নিরীহ অসহায় মানুষের জীবন নিয়ে তামাশা করে চলেছে। অপরিণামদর্শী ও ভুল সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার সমগ্র দেশে করোনা ভাইরাসের চাষাবাদ বাড়াচ্ছে। ঘরে ঘরে করোনা বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে।

করোনার এই দুঃসময়ে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণাকে ‘অমানবিক’ উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, পোশাক শিল্পমালিকদের শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণায় অন্য কোনো দুরভিসন্ধি থাকতে পারে। পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমই'র সভাপতি জুন মাস থেকে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে৷ প্রণোদনার পাঁচ হাজার কোটি টাকা নেয়ার পর তাদের এই ঘোষণা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না৷ পোশাক শিল্পমালিকদের এই ঘোষণায় অন্য কোনো দুরভিসন্ধি থাকতে পারে। আপতকালীন পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার বাইরে তাদের নগদ সহায়তা দেয় সরকার। কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াত দেয়া হয়৷ এত সুবিধা পাওয়ার পরও এই চরম দুঃসময়ে তারা হঠাৎ করেই শ্রমিক ছাঁটায়ের এই ঘোষণা দিয়ে অমানবিক কাজ করেছেন।

তারেক রহমানের পরিবার করোনা আক্রান্ত হয়েছে মর্মে মিথ্যা খবর প্রচার হচ্ছে জানিয়ে রিজভী বলেন, সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার পরিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এই সম্পর্কে মনগড়া অসত্য তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে। এতদসঙ্গে জানানো যাচ্ছে যে, এ পরিবেশিত তথ্যগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট এবং বিভ্রান্তিমূলক। কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে এ ধরনের মনগড়া মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। পরম করুনাময় আল্লাহতালার অশেষ রহমতে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা সুস্থ ও সুরক্ষিত আছেন।

রিজভী আরো বলেন, ‘লকডাউন’ না বলে ‘সাধারণ ছুটি’ আখ্যা দিয়ে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে হালকা করে দেখানো, করোনা সম্পর্কে কতিপয় মন্ত্রীর স্থুল মন্তব্য, এই ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার পরিবর্তে ‘শেখ হাসিনা থাকতে কোনো চিন্তা নেই’ আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীদের এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য, বিভিন্ন অফিস-আদালত, মার্কেট-দোকানপাট-বিপণীবিতান কিংবা গার্মেন্টস শিল্প কলকারখানা ইচ্ছে হলে বন্ধ করা, ইচ্ছে হলে খুলে দেয়ার কারণে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে পরিস্থিতি। কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়া সবকিছু খুলে দেয়ার পর এখন আক্রান্ত আর মৃত্যুর ভয়াবহ বৃদ্ধির কারণে গতকাল থেকে আবার এলাকাভিত্তিক জোন ঘোষণা করে নতুন করে লকডাউন দিতে শুরু করেছে সরকার। সরকারের আচরণ এমন যে, খুলে দিলাম, ছেড়ে দিলাম, ছড়িয়ে দিলাম, এবার দিচ্ছি লক করে, মরো এবার নিজ ঘরে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫