আলোচিত মামলায় অভিযুক্ত হয়েও আওয়ামী লীগের অন্যতম অঙ্গ সংগঠন ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তাজরীন ফ্যাশনসের মালিক দেলোয়ার হোসেন। 

গত বুধবার (১১ মে) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সংগঠনটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনেই তাকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করে মৎস্যজীবী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি।

২০১৯ সালে মৎস্যজীবী লীগকে সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা দেয় আওয়ামী লীগ। এই মর্যাদা পাওয়ার পর এবারই প্রথম ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলন হয়েছে। 

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন শ্রমিক পুড়ে মারা যান। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার মূল আসামি দেলোয়ার হোসেন। মামলাটির এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

সংগঠনটির একাধিক সূত্র জানায়, সম্মেলনে অর্থ জোগানের মূল কাজটি করেছেন দেলোয়ার হোসেন। সে কারণে আলোচিত একটি মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পরও তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে।

দেলোয়ার হোসেনকে সভাপতি করার বিষয়ে মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, ‘সম্মেলনের দিন হাজার হাজার নেতাকর্মী ছিলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা ছিলেন। সবাই মিলেই নেতা নির্বাচন করা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’

এদিকে, সংগঠনের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় তিনি আগে থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন কিনা সেই প্রশ্নটি সামনে এসেছে। এ বিষয়ে মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আজগর নস্কর বলেন, এ বিষয়ে তিনি সঠিক জানেন না। সে (দেলোয়ার হোসেন) বিগত কমিটির এক শীর্ষ নেতার মাধ্যমে সংগঠনে এসেছে। তারা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারবেন।

তিনি আরো বলেন, ‘সে আমাদের বলেছে, কারখানা থাকলে তো দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। যারা অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রত্যেককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।’

মৎস্যজীবী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে সমঝোতার মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হয়। কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইদুর রহমানের ইচ্ছায় দেলোয়ার হোসেন মহানগরের সভাপতি হন এবং কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ আজগর নস্করের চাওয়ায় আব্দুল জলিল সাধারণ সম্পাদক হন।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সাভারের আশুলিয়ায় অবস্থিত তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন শ্রমিক পুড়ে মারা যান। অনেক শ্রমিক পঙ্গু হয়ে যান। সারা বিশ্বে ঘটনাটি আলোড়ন তোলে। আলোচিত এই মামলাটির তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী তাজরীন ফ্যাশনসের চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তারসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠন করে মামলার বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

দেলোয়ার হোসেনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।