বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২২, ১৩:১১

বিএনপির লোগো। ফাইল ছবি
বিএনপির অনেক নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দুঃশাসন, কালো টাকা ও আর্থিক কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এ দরটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অনেক মামলা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির বহু জ্যেষ্ঠ নেতারা দুর্নীতি ছাড়াও লুটপাট, কমিশন বাণিজ্য, উন্নয়নের নামে বরাদ্দের টাকা ভাগাভাগি, অর্থের বিনিময়ে দেশে অবাধে অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার প্রসার ঘটানোর অভিযোগে অভিযুক্ত।
একইসাথে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিএনপি নেতারা বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছেন বলে বরাবরই অভিযোগ তোলে আওয়ামী লীগ।
সূত্র জানায়, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধেই রয়েছে প্রায় ৮৫টি মামলা। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে কয়েকটি মামলার বিচারকার্যও শুরু হয়েছে। সব মামলাতেই তিনি জামিনে আছেন। এসব মামলায় সপ্তাহে দুইদিন তাকে আদালতে হাজিরা দিতে হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে বর্তমানে ১১টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ওয়ান-ইলেভেনের সময় আটটি এবং বর্তমান সরকারের আমলে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে দুদকের করা মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেও ছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় করা মামলাগুলো এখনো বিচারাধীন রয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে দেওয়া প্রায় সব মামলার চার্জশিট হয়েছে। বিচারকার্যও শুরু হয়েছে কয়েকটির।
এই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতারও একটি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। ওমরাহ পালনের নামে সৌদি আরবের মক্কায় গিয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের এজেন্টের সাথে গোপনে বৈঠক করে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করছেন মর্মে মামলা চলমান রয়েছে।এ সংক্রান্ত কয়েকটি ফোনালাপও ফাঁস হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ৯৬টি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি অবৈধ প্লট বরাদ্দ দিয়ে সরকারের সাড়ে ১৫ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি সাধনের অভিযোগে তার নাম চার্জশিটে যুক্ত করেছে দুদক।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ৪০টি মামলার কয়েকটিতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার নামে ১৯টি ও সালাহউদ্দিন আহমেদের নামে ৪৭টি মামলা রয়েছে। দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের বিরুদ্ধে সাতটি, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নামে ৩৭টি, এজেডএম জাহিদ হোসেন ১৫টি, বরকতউল্লা বুলুর বিরুদ্ধে ৮৮টি, আবদুল আউয়াল মিন্টুর নামে ১২টি, শামসুজ্জামায়ান দুদুর ২২টি, শওকত মাহমুদের ৪৫টি, আবদুল্লাহ আল নোমানের ১৩টি, সেলিমা রহমানের ১১টি, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের ১৮টি, মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদের নামে ছয়টি মামলা রয়েছে।
এছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের নামে ১২৬টি, জয়নুল আবেদিন ফারুকের ৩১টি, মিজানুর রহমান মিনুর ১৩টি, দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নামে ৫২টি, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নামে ১৩০টি, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ১১০টি, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বিরুদ্ধে ৫০টি, ফজলুল হক মিলনের ১২টি ও নাদিম মোস্তফার নামে ২৭টি মামলা রয়েছে।
এসব মামলার বেশিরভাগেরই চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সাবেক যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের নামে ২১৫টি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ২১২টি মামলা রয়েছে। প্রয়াত স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সফিউল বারী বাবুর নামে ৩১টি মামলা রয়েছে। এসব নেতার বিরুদ্ধে দায়ের করা অনেক মামলায় ইতোমধ্যে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। বিচারকার্যও চলছে।
২০১৮ সালের এপ্রিলের শুরুতে বিএনপির শীর্ষ আট নেতাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ১২৫ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে অনুসন্ধানে নামে দুদক। মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে তারা ১২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া শীর্ষ এক ডজনের বেশি নেতার বিরুদ্ধেও সচল রয়েছে বিভিন্ন দুর্নীতির মামলা।
এদিকে দুদকের মামলায় দণ্ডিত হয়ে এখন সাজা ভোগ করছেন দলের চেয়্যারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
দলের যেসব জ্যেষ্ঠ নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে তারা হলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান ও আবদুল আওয়াল মিন্টু, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, এম মোর্শেদ খানের ছেলে ফয়সাল মোর্শেদ খান, ঢাকা মহানগর বিএনপির (দক্ষিণ) সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলসহ অন্যান্য।
দুদকের সই করা চিঠিতে আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ আট জনের বিরুদ্ধে তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে মানি লন্ডারিং ও সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে ১২৫ কোটি টাকা লেনদেনসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে কমিশন থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।