Logo
×

Follow Us

রাজনীতি

হাওয়া দেখে ‘পাল তুলবে’ ইসলামী দলগুলো

Icon

সেলিম আহমেদ

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২২, ১১:৫২

হাওয়া দেখে ‘পাল তুলবে’ ইসলামী দলগুলো

বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলো। ফাইল ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনীতির মাঠে ততই বাড়ছে উত্তেজনা। বড় দলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোও মেলাচ্ছে ভোটের নানা সমীকরণ। আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি- কোন জোট থেকে নির্বাচন করবে এই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে অনেক রাজনৈতিক দল। একই সঙ্গে এই দুই দলের বাইরে গিয়ে নিজেদের মধ্যে ঐক্য বা জোট গড়ে তোলারও আলোচনা চলছে। 

ইতোমধ্যেই ইসলামী দলগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আনতে কাজ শুরু করেছে ইসলামী আন্দোলন। দলটির পক্ষ থেকে ধর্মভিত্তিক দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। এই ঐক্যকাণ্ডে সরকারও উৎসাহ দিচ্ছে বলে জানিয়েছে একাধিক রাজনৈতিক সূত্র। তবে শেষমেশ নির্বাচনের হাওয়া দেখে ইসলামী দলগুলো ‘পাল তুলবে’ বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা।

বিভিন্ন দলের দায়িত্বশীলরা জানান, আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নাকি সরকারের ধরাবাঁধা পদ্ধতিতে, সেটি এখনো দলগুলোর কাছে পরিষ্কার নয়। ফলে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হয় এবং নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে, তার ওপর ভিত্তি করে নির্বাচনী সমঝোতা হবে। এখন সব দল যার যার মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া ইতোমধ্যে ইসলামী আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোট প্রার্থী বাছাইও প্রায় শেষ করেছে। তবে নির্বাচনী সমঝোতার বিষয়ে শেষ পর্যন্ত কতটি দল একমত হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ভেতরেই। এসব দলের মধ্যে নানা বিষয়ে মতবিরোধ আছে। অন্যদিকে সরকারি মহলের নানামুখী চাপ ও নজরদারিতে স্বস্তিতে নেই ধর্মভিত্তিক ইসলামী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো। 

আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলগুলোকে এক জায়গায় আনার প্রথম উদ্যোগ আসে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে। এ লক্ষ্যে তারা ইতোমধ্যে খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি (একাংশ), মুসলিম লীগসহ (একাংশ) ছয়-সাতটি দলের সঙ্গে কথা বলেছেন।

এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। যতদূর আলোচনা হয়েছে, তা ফলপ্রসূ। জাতীয় নির্বাচনের আগে এটা প্রকাশ্যে আসবে বলে মনে করেন তিনি। 

নিরপেক্ষ সরকারের আন্দোলনে ইসলামী দলগুলোর কোনো ভূমিকা থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আমরা কথা বলে আসছি। অবৈধ, অনৈতিক, অসামাজিক, অসাংবিধানিক- এসব বিষয়ের ওপর আমাদের আলোচনা আছে। সেই হিসেবে আমাদের আলোচনায় এসব বিষয় থাকবে। এক কথায় নির্দলীয়-নিরপেক্ষ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যে নির্বাচন হবে, তাকে আমরা সমর্থন করি। ইভিএমে ভোটগ্রহণকেও সমর্থন করেন না বলে জানান রেজাউল করীম। তিনি বলেন, যতগুলো রাজনৈতিক দল আছে, তাদের সিংহভাগ রাজনৈতিক দল ইভিএমের বিরুদ্ধে মত দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, মূলত নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেই নির্বাচনী সমঝোতার প্রয়াস চলছে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইসলামপন্থি দলের সংখ্যা ১০। এর মধ্যে পাঁচটি দল একসময় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে থাকলেও বিভিন্ন সময় তারা বের হয়ে গেছে।

মূলত এই দলগুলোকে নিয়েই একটি নির্বাচনী সমঝোতার চেষ্টা হচ্ছে। দলগুলো হলো- প্রয়াত শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, মুফতি আমিনীর দল ইসলামী ঐক্যজোট, মুহাম্মদ ইসহাক ও আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস, শায়খ যিয়াউদ্দিন ও মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। এর বাইরে আছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এর বাইরে নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে আছে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক। এ ছাড়া ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (বাহাদুর শাহ), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (এম এ মতিন) ও জাকের পার্টিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে।

এসব ইসলামী দলের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট (আবদুর রকিব) ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (মনসুরুল হাসান) একটি অংশ বিএনপির সঙ্গে আছে। কিন্তু এই তিনটি দলের কোনোটিরই রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়েছে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে।

যদিও সম্প্রতি গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে, তারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকবে। নাম না প্রকাশের শর্তে দলটির একজন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির বলেছেন, জামায়াত সব দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে। অন্য দলগুলোকেও যুগপৎ আন্দোলনে শরিক করার চেষ্টা করছে।

এ প্রসঙ্গে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, দেশের রাজনীতির আকাশে ঐক্য নিয়ে একটি আলোচনা হচ্ছে এটি ভালো দিক। ঐক্য আমাদের জন্য ইবাদত। ঐক্যের মাধ্যমে ইসলামী রাজনীতি শক্তিশালী হয়। ইসলাম আলো ছড়িয়ে মানুষের সামনে উদ্ভাসিত হয়। আসলে আমাদের ব্যর্থতা হলো আমরা আমাদের সমর্থনকে ভোটে পরিণত করতে পারি না। আমাদের সমর্থনকে ভোটে পরিণত করতে হবে।

আগামী নির্বাচন নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি কী করা যায়। শীর্ষ নেতারা প্রাথমিক আলোচনা করছেন বিভিন্ন দলের সঙ্গে। এখনো তো নির্বাচনের অনেক বাকি। সামনে হয়তো কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। জামায়াতের সঙ্গে ইসলামী দলগুলোর ঐক্য হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের তো নিবন্ধন নেই। নির্বাচনকে ঘিরে ঐক্য হয় নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে।

আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ইসলামী দলগুলোর ঐক্যের সম্ভাবনা কতটুকু জানতে চাইলে খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসির আলী বলেন, এখনই ঐক্যের সময় নয়। এখন পর্যবেক্ষণের সময়। নির্বাচনের তো এখনো অনেক বাকি। আগামী জুলাই নাগাদ হয়তো কোনো ঘোষণা আসতে পারে। দেশের মানুষ ইসলামী দলগুলোর ঐক্য চায়। আসলে আমরা তো আদর্শের জায়গা থেকে এক। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের ইসলামী দলগুলোর কখনো ঐক্য হয়নি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫