সরকার পদত্যাগের একদফার আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিএনপি ঢাকার প্রবেশমুখগুলোয় যে অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছিল তা ব্যর্থ হয়। এখন আবার এ আন্দোলনকে বেগবান করার দিকে জোর দিয়েছে দলটি। এরই মধ্যে গণমিছিল, পদযাত্রা এবং কোথাও কোথাও সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। এভাবে আন্দোলনে গতি এনে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে সরকারকে চূড়ান্ত ‘ধাক্কা’ দিতে চায় দলটি। বিএনপির নেতাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, ঢাকা কেন্দ্রিক কর্মসূচি এবার বেশি দেওয়া হবে। কারণ গত আন্দোলনগুলো ঢাকায় তেমন জোরালোভাবে না হওয়ায় তা ব্যর্থ হয়। এজন্য এবার ঢাকার দিকে নজর বিএনপির।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ১০ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। তার সঙ্গে ডান-বাম-ধর্মীয় দল মিলে ৩৬ দল যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে। পরে গত ১২ জুলাই থেকে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফার আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা দেওয়া হয়। এর পর থেকে ঢাকায় চলছে লাগাতার কর্মসূচি। সর্বশেষ ঢাকায় গত ২৮ জলাই মহাসমাবেশ করে সরকারের পদত্যাগ দাবি করা হয়। এর পরদিন ঢাকার প্রবেশমুখগুলোয় অবস্থান কর্মসূচি দেয় দলটি। প্রতিটি অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় বিএনপি নেতাকর্মীদের। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান এই সংঘর্ষে আহত হন।
বিএনপি হাইকমান্ড অবস্থান কর্মসূচিতে দলের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। তারা মনে করেন, দলের নেতারা অবস্থান কর্মসূচিকে সফল করতে পারেনি। এজন্য ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণকে তার পদ থেকে বাদ দেওয়া, যুবদলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি ভেঙে দেওয়াসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের তিরস্কার, সতর্ক করে দেওয়াসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
অবস্থান কর্মসূচির পর দীর্ঘ প্রায় এক সপ্তাহেরও বেশি সময় এক দফার কোনো কর্মসূচি দেয়নি বিএনপি। এরপর ঢাকায় প্রথম কর্মসূচি দেয় গণমিছিল। এখন এভাবে আন্দোলনে গতি আনতে চায় সরকারবিরোধী এই দল। আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী রয়েছে। একে উপলক্ষ করে ঢাকায় শোভাযাত্রা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ঢাকায় বড় একটি শোডাউন করতে চায় বিএনপি। এর পরই ছাত্র-যুব ও পেশাজীবীদের নিয়ে ঢাকায় কনভেনশন করার চিন্তা রয়েছে তাদের। এছাড়াও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সারাদেশে একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত প্রচারপত্র বিলির চিন্তুাও করছে। এছাড়া সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলোর সমর্থনের জন্যও কাজ করছে বিএনপি। দলটি মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর তাদের আন্দোলনে সমর্থন রয়েছে। এখন ভারতকে পাশে চায় তারা। সম্প্রতি ভারতীয় পত্রিকা আনন্দবাজারে বের হওয়া প্রতিবেদন ‘বাংলাদেশের ক্ষমতায় হাসিনা না থাকলে উভয় দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে’ আমেরিকাকে দেওয়ার ভারতের এমন বার্তাকে ভিত্তিহীন বলে মনে করে বিএনপি। ভারত বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষার বাাইরে যাবে না বলে এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কিছু দিন আগে আমেরিকা সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেদেশের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও তাদের আলাপের মধ্যে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসেনি। তাছাড়া গত ৩ আগস্ট প্রেস ব্রিফিংয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন পরিকল্পিত ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে ভারত আশা করছে। তিনি বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে দাবি করে আসছে সে বিষয়ে অবশ্য কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, ‘সেখানে কীভাবে নির্বাচন হবে তা বাংলাদেশের জনগণই ঠিক করবে।’ এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি।
সব মিলিয়ে বিএনপি এক দফার আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা আন্দোলনে আছি। এ আন্দোলন তো বিএনপির একার নয়। গোটা জাতিই এর সঙ্গে জড়িত।
এক দফা দাবিতে ২৫ আগস্ট (শুক্রবার) ঢাকায় কালো পতাকা ও গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। একই দাবিতে ২৬ আগস্ট দেশের সব বিভাগ ও জেলায় একই কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh