একদফার আন্দোলন

অক্টোবরের মধ্যে ফয়সালা করতে চায় বিএনপি

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে গত ১২ জুলাই থেকে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে বিএনপিসহ তার মিত্র জোট ও দলগুলো। গণমিছিল, পদযাত্রা, সমাবেশ, গণঅবস্থান, মানববন্ধন, তারুণ্যের সমাবেশ, শ্রমিক সমাবেশ ইত্যাদি কর্মসূচি পালনের এক পর্যায়ে গত ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী এই পক্ষটি। এই সমাবেশের মাধ্যমে শোডাউন করে  পরদিন ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয় দলটি। তবে এই কর্মসূচিটি আশানুরূপ সাফল্য না-পাওয়ায় আন্দোলনকে ফের ‘ট্র্যাকে’ (পথ) আনতে বেগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। অবস্থান কর্মসূচি শেষে প্রায় ১২ দিন বিরতির পর ফের যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে মাঠে ফেরে বিএনপি। পুরো আগস্ট এবং চলতি মাসের এ পর্যন্ত গণমিছিলের কর্মসূচির মধ্যেই রয়েছে দলটি।  কিন্তু সরকারকে চাপে ফেলতে কী ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হবে তা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্তে যেতে পারছে না। এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকও করছেন তারা। কারণ বিএনপির মিত্ররা চান, সরকারকে চূড়ান্ত ধাক্কা দিতে ৫ থেকে ৭ দিনের বেশি সময় নেওয়া ঠিক হবে না। বেশি সময় নিলে সরকার পক্ষ আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার সুযোগ নিতে পারে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়েছে। সেখানে কী ধরনের কর্মসূচি নেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় অবস্থানরত স্থায়ী কমিটির বাকি সদস্যরা দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠক করেন। সেখানেও আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। এই বৈঠক থেকে আন্দোলনের একটি সম্ভাব্য কর্মসূচি তারেক রহমানের কাছে প্রস্তাব আকারে পাঠানোর কথা রয়েছে বলে জানা গেছে। 

একদফার সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মপরিকল্পনার মধ্যেই গত মঙ্গলবার সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শামা ওবায়েদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে একদফার সর্বাত্মক আন্দোলনকে সামনে রেখে সারা দেশে দলের সাংগঠনিক অবস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা আন্দোলনের এই পর্যায়ে এসে ‘তৈরি কমিটি ছাড়া’ দেশের কোথাও নতুন করে দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কোনো কমিটি না দেওয়ার পরামর্শ দেন। তাদের দাবি, নতুন করে এখন আংশিক কমিটি দেওয়া হলে সংগঠনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হতে পারে।

তারা এর কারণ হিসেবে বলেন, যোগ্য সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে আংশিক কমিটি দেওয়া সম্ভব হয় না। যার নেতিবাচক  প্রভাব আন্দোলনে পড়তে পারে। এ ছাড়া গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচির ‘ব্যর্থতায়’ একদফা আন্দোলনের আগামীর কর্মসূচিতে সমন্বয়হীনতা দূরীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন সাংগঠনিক সম্পাদকরা। কর্মসূচি সফলে যে কোনো ধরনের সমন্বয়হীনতা নিরসনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের সব স্তরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন, যাতে করে কর্মসূচি সম্পর্কে অবগত নয়- এমন অভিযোগ কেউ যেন করতে না পারে। ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করার পেছনে তখন অনেকে এমন অভিযোগ করেছিলেন। এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর হাইকমান্ডের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিবরাও আগামীর কর্মসূচি সফলে যে কোনো মূল্যে সমন্বয়হীনতা নিরসনের ওপর জোর দেন।

এদিকে আগামী সপ্তাহে মিত্র জোট ও দলগুলোর সঙ্গে আন্দোলনের কর্মসূচির ব্যাপারে বিএনপির বৈঠক করার কথা রয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু জানান, আগামী শনিবার বিএনপির সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। ১২ দলীয় জোটও বিএনপির সঙ্গে শিগগিরই বৈঠক করবে বলে জানিয়েছেন জোটটির শীর্ষ নেতা মোস্তফা জামাল হায়দার। এ ছাড়াও আগামী সপ্তাহে অন্য মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে বিএনপির। সবার পরামর্শ নিয়েই চূড়ান্ত আন্দোলনের পথনকশা তৈরি করতে চায় বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।   

এরই মধ্যে চলতি সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে দেশব্যাপী তারুণ্যের রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এর সঙ্গে একদফার কর্মসূচিও চলবে। প্রতি শুক্র ও শনিবার পদযাত্রা, গণমিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি চলতে থাকবে। এছাড়া ১৫ সেপ্টেম্বর বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকায় সমাবেশ করার কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন বিকাল তিনটায় নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া চলতি মাসের মধ্যে বিচারালয়ের সামনে আইনজীবীদের অবস্থান কর্মসূচিও হতে পারে। এর মধ্য দিয়ে সরকার যে এখন বিরোধী দল দমনে আদালতকেও ব্যবহার করছে- দলের এই বক্তব্য সব মহলের কাছে পৌঁছাতে চায়।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, চূড়ান্তভাবে দাবি আদায়ে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ ও অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে লাগাতার আন্দোলনে নামতে চান তারা। কারণ এরই মধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ পিছিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। এ কারণে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী পক্ষটি পুরো অক্টোবর মাস জুড়েই যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকতে চান। আর সে-সময় কর্মসূচি শুধু শুক্র-শনিবারে সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে।

জানা গেছে, সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে এই চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনের সূচনা হতে পারে। আর মধ্য অক্টোবর থেকে ঘেরাওয়ের কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে দলটি। নির্বাচন কমিশন, সচিবালয়, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘেরাওয়ের সঙ্গে তখন টানা অবস্থানের কর্মসূচিতে যেতে পারে বিএনপি। এছাড়া একটা পর্যায়ে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়ার ব্যাপারেও চিন্তা রয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের। তারা এর মধ্য দিয়ে দ্রুততম সময়ে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান।

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সব ধরনের কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে দেশে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //