কোটা আন্দোলনে নিহতের সংখ্যার বিষয়ে সরকার যে তথ্য দিয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সত্যকে আড়াল করতে সরকার মিথ্যাচার ও অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। কারণ এই আন্দোলন সরকারের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে।
আজ সোমবার (২৯ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছে, তাদের কাছে এখন পর্যন্ত ১৪৭ জনের মৃত্যুর তথ্য আছে। আজ সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো তিনজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন মন্ত্রী। এ নিয়ে সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে এখন পর্যন্ত।
এ বিষয়ে বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার কর্তৃক চলমান আন্দোলনে নিহতদের নাম ও সংখ্যার যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে এর সংখ্যা অনেক বেশি। কিশোর ও আগে নিহতদের নাম এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। অবিলম্বে সঠিক তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আন্দোলন দমনের নামে নিষ্ঠুরভাবে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস চালিয়ে শত শত ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
যারা নিহত কিংবা আহত হয়েছে তাদের অধিকাংশই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও সরকারদলীয়দের ছোড়া গুলিতে হয়েছে।
গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘পত্রিকার তথ্য মতে, রাজধানীর ৩১টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের সংখ্যা ছয় হাজারের অধিক। যেসব শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে হতাহত করা হয়েছে তাদের পরিবারগুলোকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, সরকারের নির্দেশে মৃতদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেছে। অনেককে ময়নাতদন্ত ছাড়াই আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যৌথভাবে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করছে। সেটির সর্বশেষ প্রমাণ হলো দেশ-বিদেশের সব নাগরিক দেখার পরও রংপুরের আবু সাঈদের মৃত্যুকে গুলিতে নয়, ইটের আঘাতে হয়েছে মৃত্যু বলা হচ্ছে। এভাবে মিথ্যাচার, অপকৌশল ও নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে প্রকৃত সত্যকে জনগণ থেকে আড়াল করতে পারবে না সরকার। তাই এখনো বলি, সব দায় নিয়ে সরকারের উচিত জনদাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পদত্যাগ করা।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের মন্ত্রীরা বারবার বলছেন, প্রকৃত সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো প্রকৃত অপরাধীদের না খুঁজে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমনে উঠে পড়ে লেগেছে সরকার।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, ‘বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার, গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুরকে নির্যাতনের পর আবারও নির্যাতন চালানোর উদ্দেশ্যে তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, যা গভীর উদ্বেগ-উকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে। বিরোধী নেতাকর্মীদের গুম করে নির্যাতনের পর গ্রেপ্তার দেখিয়ে নির্যাতন চালানো, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন, একবারের পর আবার রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনা আতঙ্কজনক। বারবার রিমান্ডে নেওয়া ও রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা সংবিধানবিরোধী কাজ। সর্বোচ্চ আদালতে এ বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সরকার আইনের তোয়াক্কা করছে না। আমরা দাবি জানাব, এভাবে বারবার রিমান্ডে নেওয়া বন্ধ করুন।’
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh