ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না শুক্রবার (২৩ আগস্ট) মধ্যরাতে মারা গেছেন। জানা গেছে, পালিয়ে ভারতে প্রবেশের পর মেঘালয়ের শিলং পাহাড়ে ওঠার সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু ঘটে।
ভারতের কলকাতায় অবস্থান করা পান্নার এক ঘনিষ্ঠজন আজ শনিবার (২৪ আগস্ট) তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি জানান, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে থেকে ভারতে পালাতে চেয়েছিলেন ইসহাক আলী খান পান্না। সীমান্ত পার হয়ে শুক্রবার রাত ১২টায় মেঘালয়ের রাজধানী শিলং-এর একটি পাহাড়ে ওঠেন তিনি। পাহাড় পার হয়ে ওপারে যাওয়ার চেষ্টার সময়ই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। এতেই তার মৃত্যু ঘটে।
তবে পান্নার মৃত্যু কীভাবে ঘটেছে- তা নিয়ে ভিন্ন তথ্যও মিলেছে। কেউ কেউ বলছেন, পাহাড়ে ওঠার সময় পা পিছলে পড়ে তিনি মারা যান।
পান্নার বড় ভাইয়ের শ্যালক জসিম উদ্দিন খানের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল তার। জসিম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনদিন আগে পান্নার সঙ্গে তার ফোনে কথা হয়েছে। ২৫ জুলাই তিনি পিরোজপুর শহরের বাড়িতে এসে দু'দিন পর ফিরে যান।
জসিমের দেওয়া তথ্যমতে, বিভিন্ন মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছেন, সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন পান্না। ওপারেই তার মৃত্যু হয়। সেটা গুলিতে নাকি স্ট্রোকজনিত কারণে তা নিশ্চিত হতে পারেননি তারা। সীমান্তের ভারত প্রান্তের একটি থানায় তার মরদেহ রয়েছে বলে জেনেছেন।
একই তথ্য জানান, পান্নার ভাগনে ও কাউখালীর চিড়াপাড় সাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েকুজ্জমান মিন্টু।
ভিন্ন একটি সূত্র বলছে, ভারতে পালানোর সময় পান্নার সঙ্গে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনও ছিলেন। তবে বিষয়টি নিশ্চিত হতে আমিনের মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল দিয়েও বন্ধ পাওয়া গেছে। আরেকটি সূত্র বলছে, পান্নার সঙ্গে ঝালকাঠি ছাত্রলীগের একজন নেতা ছিলেন।
এদিকে, পুলিশের তরফে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পান্নার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়েও কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা জানান, কেউ বৈধ বা অবৈধ যেভাবেই ভারতে যাক, মরদেহ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। শুধু বিষয়টি যে কোনো পক্ষ থেকে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসে জানাতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিশ্চিত হবেন, মৃত ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক কি-না। পরে দূতাবাসের তহবিল থেকে বা স্বজনের খরচে মরদেহ পাঠানোর ব্যবস্থা করে দূতাবাস।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন ইসহাক আলী খান পান্না। সেদিনই তার পিরোজপুর শহরের পাড়েরহাট সড়কের বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পিরোজপুরের পৈত্রিক নিবাসে পৃথক দ্বিতল ভবন করেছিলেন পান্না, সেখানেই ভাঙচুর চলে। তার এক ভাই ওই বাড়িতে থাকলেও সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন। পান্নার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার বেকুটিয়া গ্রামে। তবে গ্রামের বাড়িতে তার যাতায়াত তেমন নেই। পিরোজপুরে গেলে শহরের বাড়িতেই থাকতেন তিনি।
১৯৯৪ সালে ছাত্রলীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন পান্না। ওই সম্মেলনে নির্বাচিত সভাপতি একেএম এনামুল হক শামীম পর্যায়ক্রমে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং একাধিকবার এমপি ও আওয়ামী লীগ সরকারের উপমন্ত্রী হলেও পান্না বরাবরই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বাইরে ছিলেন। তবে ২০১২ সালের সম্মেলনের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক এবং পরে বিভিন্ন উপ-কমিটির সদস্য হয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগপর্যন্ত ছিলেন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে পিরোজপুর-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান পান্না। অবশ্য পরে ১৪ দলীয় জোটগত নির্বাচনের কারণে সরে যেতে হয় তাকে। পেশাগত জীবনে বীমা কোম্পানি ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারমান ছিলেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা।
ইসহাক আলী পান্নার স্ত্রী আইরীন পারভীন বাঁধন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৪৫ বছর বয়সে ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল মারা যান। আইরিন সরকারের উপ-সচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শামসুন্নাহার হলের ভিপি ছিলেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর পান্না আর বিয়ে করেননি। এই দম্পতির ইফতেশাম আফতারি আরিয়ান নামক এক ছেলে রয়েছে। তবে ওই সন্তান পালিত বলে জানা গেছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh