নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৮ পিএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪৪ পিএম
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। অডিও ক্লিপটিতে মোহাম্মদ তানভীর কায়সার নামে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ওই অডিও ক্লিপটি ছড়িয়ে পড়ে। অডিওতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নিন্দা করতে শোনা যায় শেখ হাসিনাকে। তিনি অভিযোগ করেন, ড. ইউনূস বিদেশে ২৬ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। এছাড়া শেখ হাসিনা কথা বলেছেন রূপপুর থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ ইস্যুতে।
শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তিনি বাংলাদেশের কাছাকাছিই আছেন, যে কোনো সময় দেশে চলে আসতে পারেন।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশত্যাগ করে ভারতে অবস্থান নেন শেখ হাসিনা।
অডিও ক্লিপের কথোপকথনটি সাম্প্রতিক দেশকালের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো...
তানভীর : আপা আপনার কাছে ফোন দিয়েছি একটা ব্যাপারে, নিউইয়র্ক মহানগরে আমরা এমদাদ ভাইয়ের নেতৃত্বে মিটিং মিছিল করছি। কিন্তু এলাকার পরিস্থিতি খুব খারাপ। কামরাঙ্গীর চর-কেরাণীগঞ্জের সকল নেতাকর্মী এলাকার বাইরে।
এরপর শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, সব মার্ডার কেস। সবার বিরুদ্ধে মার্ডার কেস।
তানভীর : এলাকার ছাত্রলীগ-যুবলীগকে আমি সহায়তা করছি। আপনি যদি বলেন তুমি এখানে থেকে ওদের হেল্প করো, করলাম। আর যদি বলেন তুমি দেশে গিয়ে দল গোছানোর চেষ্টা করো তাহলে করবো আপা। আপনার সিদ্ধান্ত আপা।
শেখ হাসিনা বলেন, এখানে বসে এখন সাহায্য করো। এটিই সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে। দেশে পরে গেলেও হবে।
তানভীর : আইনজীবীরা দাঁড়াতে পারছে না। এই বিষয়ে যদি আপনি পরামর্শ দিতেন...
শেখ হাসিনা বলেন, আইনজীবীদের বলো লোকজনকে অরগানাইজ করে যেন আইনজীবীরা সেখানে যায়। তাছাড়া তো আর কোনো...
এরপরে শেখ হাসিনাকে আবার বলতে শোনা যায়, তুমি যেখানে আছো সেখানে তো ইলেকশন চলছে। তাদের ক্যাম্পেইনিংয়ের সময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, ক্যাম্পেইনিংয়ে সহযোগিতা করার সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়গুলো জানিয়ে রাখো।
তানভীর: আমার মনে হয় এবার ট্রাম্প আসবে। ট্রাম্প এলে আমাদের জন্য খুবই ভালো আপা।
শেখ হাসিনা বলেন, সে যেই আসুক। তাদের ক্যাম্পেইনিংয়ে থাকলে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হলে ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। এটি আমি সবাইকে বলেও দিয়েছি।
তানভীর : আপা বাংলাদেশে একটা নিউজ আসছে, আপনাকে গাজিয়াবাদ থেকে দিল্লিতে ট্রান্সফার করছে হেলিকপ্টারে করে।
হাসিনা অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন হেলিকপ্টার দিয়ে? বলেন, কোন দেশের হেলিকপ্টার। ছবি পাঠাইও দেখবোনে। কী একটা আজগুবি কথা বলে ওরা। আমি দেশের খুব কাছাকাছি আছি। অতদূরে নাই। আমি খুব কাছাকাছিই আছি, যাতে আমি চট করে ঢুকে পড়তে পারি।
এ সময় কাঁদতে কাঁদতে তানভীর বলেন, আপা কষ্ট লাগে, আপনি যে মিডিয়াদের দিয়ে আসছেন, এরা সত্য বলে না, এরা কাজ করে না আপা। কই যাবো আপা। আল্লাহ আপনারে বাঁচাই রাখুক। আমরা আছি আপা। আপনি যখন নির্দেশ দেবেন, তানভীর তুমি আমেরিকা থেকে দেশে চলে আসো, এসে কামরাঙ্গীর চর-কেরাণীগঞ্জে দলীয় নেতৃত্ব গোছাও, আপনি বললে সাথে সাথে দৌঁড় দেব আপা।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন গেলেই দেবে একখানা মামলা, শেষে কিছুই করতে পারবা না। আমার বিরুদ্ধে ১১৩টা মামলা। এইসব জিনিসগুলো নিয়ে জাতিসংঘ থেকে সবার কাছে বলা দরকার, ফলস মামলা দিচ্ছে। আমার পরিবারের কেউ বাকি নাই। সবার নামে মামলা।
উল্লেখ, গত ২৯ আগস্ট খবর প্রকাশ হয়, ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে এবার গাজিয়াবাদ থেকে সরিয়ে নিয়েছে ভারত। তাকে গভীর রাতে হেলিকপ্টারে দিল্লির কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়। তবে স্থানটি কোথায়, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দিল্লির বিভিন্ন সূত্র ব্যবহার করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
হেলিকপ্টারে গাজিয়াবাদ থেকে দিল্লি স্থানান্তরের খবর আর শেখ হাসিনার সঙ্গে তানভীরের টেলিফোনে যোগাযোগ হয় আগস্ট মাসের শেষের দিকে বা সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে।
এরপর শেখ হাসিনা বলেন, যারা প্রেসে চাকরি করে সবার নামে মামলা। যারা হিউম্যান রাইটসের কথা বলতো, যারা অপজিশনকে স্পেস দেওয়ার কথা বলতো তারা তো নেই। এই কথাগুলো তো তাদের সামনে তুলতে হবে। আমরা থাকতে দেশের যে অবস্থা ছিল, এখন তো দেশের অবস্থা খারাপ। মানুষ আবার সেই দরিদ্রসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। মানুষের খাবার নাই।
তানভীর : জ্বী আপা।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, সব টাকা লুটে খাচ্ছে। ব্যাংকের টাকা সব লুটে খাচ্ছে।
তানভীর : মিডিয়া কতটুকু অন্ধকার আপা দেখেন। আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের। রাশিয়া সরাসরি বলছে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওইটা ওরা প্রচার করে না আপা।
শেখ হাসিনা বলেন, না করলো তাতে কিচ্ছু আসে যায় না। শোনো মানুষ যদি গাধা হয় আমার কিছু বলার নাই। ১৩ বিলিয়ন ডলার থেকে যদি আমি ৫শ ডলারই নিয়ে নেই তাহলে কীভাবে...মানুষ এত বোকা যদি হয় আমার কিছু বলার নেই। টিউলিপকে জড়িয়েছে, সে তখন বাচ্চা একটা মেয়ে, এমপিও না কিছু না। আমাদের দাওয়াত দিছে, গেছি। ও এত শক্তিশালী যে ১৭ বছরের একটা মেয়ে যে পুতিনের সঙ্গে আমারে নেগোসিয়েশন করাইয়া দিছে। সিঙ্গাপুরে ব্যাংকে গিয়ে খোঁজ নিক। কোকোর টাকা আনছি তো ব্যাক করে। সেটি তোমাদের লেখা উচিত যে কারা মানি লন্ডারিং করে।
তানভীর : আপা আমি ফেসবুকে যেভাবে ইনডিভিজ্যুয়ালি লিখতেছি..
শেখ হাসিনা বলেন, আমার ফেসবুক নাই।
তানভীর : কোনো দিন যদি আল্লাহতায়ালা আপনার কাছে নিয়া যায়, যদি দেখাইতে পারি আপা আপনি আমাকে বুকে জড়াইয়া ধরবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা মানি লন্ডারিং করছে তারা খুব লাফাচ্ছে। গ্রামীণ ব্যাংকের যত টাকা...ইউনূস কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেনি। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করছে এরশাদ। ইউনূসকে চাকরি দিছিল এমডির পদে। এমডির পদে থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের ২৬ হাজার কোটি টাকা সে মানিলন্ডারিং করে বিদেশে নিয়ে গেছে। ২৬ হাজার কোটি টাকা। যা দিয়ে বিদেশে সে সোশ্যাল বিজনেস, অমুক তমুক, যত বিজনেস সব...অত টাকা পায় কোত্থেকে।
তানভীর: দেশের মানুষ বুঝতাছে আপা। আপনি বিশ্বাস করেন আপা। দেশের মানুষ হাড়ে হাড়ে বুঝতাছে আপা।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষকে জানতে হবে। অলিম্পিকের মশাল ধরতে কত টাকা সে ডোনেশন দিয়েছে। ওদের ডোনেশন লিস্ট খুঁজলে পাওয়া যাবে। ক্লিন্টন ফাউন্ডেশন কত টাকা ডোনেশন দিচ্ছে নোবেলের আগে সেটা ওদের লিস্ট খুঁজলে পাওয়া যাবে। মহাচোর বইসা কত্ত কথা শোনাচ্ছে। গরিবের রক্তচোষা টাকা নিয়ে বড়লোক হইছে, সুদখোর একটা।
তানভীর : আপনি ছাড়া বাংলাদেশের কোনো বিকল্প নাই আপা।
শেখ হাসিনা বলেন, যথেষ্ট করছি বাংলাদেশের জন্য। দিন নাই রাত নাই খাওয়া নাই নাওয়া নাই। দিন রাত করেছি। কোথায় উঠাইছিলাম বাংলাদেশের সম্মান, সব ধুলায় মিশাইয়া দিছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : ড. ইউনূস শেখ হাসিনা অডিও ক্লিপ তানভীর
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh