গণহত্যাকারীদের রাজনীতি করার অধিকার নেই: জামায়াত আমীর

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, গণহত্যাকারীদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। কেননা রাজনীতি করতে হবে দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে, বাইরের কারও সাহায্য নিয়ে নয়।

আজ শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১ টায় নগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ আল ফারুক সোসাইটিতে খুলনা মহানগর জামায়াত আয়োজিত রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ সব কথা বলেন।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলসহ সব স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে সম্মানের সঙ্গে সরকারকে বিদায় নিতে হবে।

শিক্ষা সংস্কার কমিশনে আল্লাহকে স্বীকার করেন না এমন লোকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষা সংস্কার কমিশনে কমপক্ষে একজন আলিয়া ও একজন কওমি নেসাবের আলেমকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন চৌকস সেনা সদস্য হত্যাসহ দেশের সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং এর মাস্টার মাইন্ডদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, তা’ না হলে আবারো জালিমদের আগমন হতে পারে; তৃতীয় শক্তির উদ্ভব হতে পারে।

রুকন সম্মেলনে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, বিগত পনের বছরের আওয়ামী শাসনামলে রাষ্ট্রের কোনো নাগরিকই লুটপাট ও জুলুমের বাইরে ছিল না। হাজারো মানুষের, মা-বোনদের, শিশুর কান্নার রোল আল্লাহর আরশে পৌঁছে গেছে। যার ফলেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয় দেশের ছাত্র-জনতার মাধ্যমে।

আওয়ামী লীগের শাসনামলের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বিডিআর হত্যার মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদী শাসনের প্রথম ধাপ শুরু হয়। এরপর জামায়াতের ওপর স্টিম রোলার চালানো হয়। পর্যায়ক্রমে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিয়ে অথবা কারাগারে রেখে হত্যার মধ্যদিয়ে শেষ পর্যন্ত জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা চালানো হয়। যারা সারাজীবন ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেই ইসলাম অবমাননার কথিত অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু এরইমধ্যে জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীরা গ্রেপ্তার হতে শুরু করেছে।

বর্তমান সরকার ওইসব ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় এনে একটি বিচারিক সূচনা করবে বলেও তিনি আশা করেন।

সম্মেলনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার রুকনদের উদ্দেশ্যে বলেন, মুমিনের জান ও মাল আল্লাহর কাছে বিক্রির যে শপথ করা হয়েছে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য জামায়াতের প্রতিটি রুকনকে কাজ করতে হবে। মুমিনের প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর হুকুমে চলবে এ শপথই নিয়েছেন রুকনরা। সুতরাং আল্লাহর হুকুমের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ রুকনদের নেই।

সাম্প্রতিক দেশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বিগত পনের বছরের অনেক মজলুমের চোখের পানির ফসলই হচ্ছে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান। আওয়ামী লীগের ১৫ বছর আর মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের দুই বছর এই ১৭ বছরের জুলুম-নির্যাতনের পরও জামায়াতে ইসলামী এদেশের মানুষের প্রিয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে শুধুমাত্র আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস আর আস্থার কারণে।

ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে জামায়াতের ট্রাস্টি সম্পত্তি আল-ফারুক সোসাইটি বেদখল করা হলেও আগস্ট বিপ্লবের পর এই প্রথম ১৫ বছর পর এখানে রুকন সম্মেলন হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে জামায়াতের অনেক শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এসেছেন। যাদের মধ্যে পাঁচজনকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ আর বাকীদেরকে কারাগারে রেখে হত্যা করা হয়েছে। আজ দেশের যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি, এটিকে ধরে রাখতে প্রতিটি শপথের কর্মীকে দায়িত্ব পালন করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে রুকন সম্মেলনে বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মো. মোবারক হোসাইন ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। রুকন সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তৃতা করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমির মাওলানা মুহাম্মদ এমরান হুসাইন। দারসুল কুরআন পেশ করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক। সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন নগর সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল ও জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান।

রুকন সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জামায়াতে ইসলামীর খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যক্ষ মশিউর রহমান খান ও মাস্টার শফিকুল আলম, সাতক্ষীরা জেলা আমীর মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, বাগেরহাট জেলা আমীর মাওলানা রেজাউল করিম, মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, খুলনা জেলা নায়েবে আমির মাওলানা গোলাম সরোয়ার ও অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা জেলা নায়েবে আমির অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, বাগেরহাট জেলা নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল ওয়াদুদ, সাতক্ষীরা জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান, বাগেরহাট জেলা সেক্রেটারি শেখ মো. ইউনুস, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহ আলম ও প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম, খুলনা জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও প্রিন্সিপাল গউসুল আযম হাদী।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh