দ্রুত নির্বাচনের পরিবেশ চান ফখরুল

রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ‘উসখুস’ করছেন বলে একজন উপদেষ্টার বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে দেশে অতি দ্রুত নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। 

আজ রবিবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকার পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি।

সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা একটা ভয়াবহ দানবের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি। বুকের ওপর থেকে পাথর গেছে। কিন্তু পাথর গেলেও এখনও কিন্তু স্বস্তি নেই। কোথায় যেন আটকে আছি। আমাদের জনগণের সরকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি।’

সংকট উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনার (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। এই সুনাম রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে বড় কাজ। যে দায়িত্ব আপনার ওপর পড়েছে, সেই দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবেন। অর্থাৎ সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন দিয়ে নিবাচিত পার্লামেন্ট এবং সরকারের কাছে ক্ষমতা দিতে হবে।’

নাম উল্লেখ না করে একজন উপদেষ্টার বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি বলেছেন, রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উসখুস করছে। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা আশা করি না এই মাপের মানুষ এ ধরনের কথা বলবেন। আমরা রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উসখুস করি না। আমরা বাংলাদেশকে হাসিনামুক্ত করার জন্য কাজ করেছি। জীবন দিয়েছি প্রাণ দিয়েছি, এখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা দ্রুত করছি।’

দ্রুত নির্বাচনের কথা কেন বলছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘যত দেরি করবেন তত হাসিনারা আবার ফিরে আসবে। তাই এখনও বলছি আবারও বলছি অতি দ্রুত নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন। জঞ্জাল যা আছে তা সাফ করে ফেলুন। দায়িত্বটা আপনাদের ওপর দেওয়া হয়েছে। আমরা সব সময় সহযোগিতা করেছি। আপনারাও সহযোগিতা করেন। পদে পদে আমরা উসখুস করছি, ক্ষমতায় যেতে চাচ্ছি– এ ধরনের কথা বলে মানুষের মনকে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না।’

কারও নাম উল্লেখ না করে মির্জা ফখরুল বলেন, আবারও চক্রান্ত করে বিএনপিকে বাদ দিয়ে কিছু করার চেষ্টা করতে যাবেন না। এটা বাংলাদেশের মানুষ কখনোই মেনে নেবে না। একবার বিরাজনীতিকরণের ‘মাইনাস টু’ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আবারও ওই রাস্তায় যাওয়ার কথা কেউ চিন্তা করবেন না।

দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এমন কিছু করবেন না যাতে দলের বিরুদ্ধে কেউ আঙুল তুলে কথা বলতে পারে। এটা করবেন না, করতে দেবেন না। সব সময় মনে রাখবেন।’

আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে এই নির্বাচন খুব তাড়াতাড়ি ওনারা দেবেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত এ দেশে আওয়ামী লীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন না, ততক্ষণ পর্যন্ত আর নির্বাচন দেবেন না।’ এই ভাবনার কারণ হিসেবে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ না করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সচিবরাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যারা বসে বসে আছেন খেয়াল করে দেখবেন ওরা কারা।

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই ঘোলাটে মনে হচ্ছে মির্জা আব্বাসের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি না, হাসিনা তো চলে গেল। কিন্তু তার দোসরেরা তো রয়ে গেল এখনও। সচিবালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সংস্থায় হাসিনার লোকজন পাকাপোক্তভাবে বসে গেছেন। একজন বিশেষ ব্যক্তি আছেন যিনি এই দেশটাকে ধ্বংসের শেষ দিকে নিয়ে যাবেন, যদি ড. ইউনূস সাহেব ওনার প্রতি কোনো ব্যবস্থা না নেন। তিনি খুব কাছাকাছি থাকেন শ্রদ্ধেয় ইউনূস সাহেবের। সেই সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশ ধ্বংসের জন্য যা কিছু করার দরকার তা করে যাচ্ছেন অবলীলায়। তবে ওই ব্যক্তির নাম বলেননি মির্জা আব্বাস।’

বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্যসচিব তানভীর আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনসহ অনেকে। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh