সারা দুনিয়ার নজর কাড়বে এমন একটি সংসদ নির্বাচন দেখতে চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে দলটির নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, তারা আগামী সংসদ নির্বাচন এমনভাবে চান, যেটাকে সারা দুনিয়া নির্বাচন বলবে।
আর নির্বাচনে গঠনমূলক সংস্কার ও জাতীয় ঐক্যের জন্য জামায়াত পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছে বলে জানান তিনি।
শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এসব কথা বলেন তাহের।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে বৈঠকে জামায়াতের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। এর নেতৃত্ব দেন তাহের।
প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, কার্যনিবার্হী সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, সেটাকে সারা দুনিয়া নির্বাচন বলবে। যাকে দেশের মানুষ নির্বাচন বলবে।
জামায়াতের এই নায়েবে আমীর বলেন, “জামায়াত গঠনমূলক, ইতিবাচক, বাস্তবসম্মত সংস্কারের প্রতি পূর্ণ সহযোগিতা করবে এবং দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য দলীয় ও ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে চেষ্টা করবে।”
আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “বাংলাদেশ একটি নতুন দিশা দেখতে চায়। জনগণের দীর্ঘ সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের পর অর্জিত স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্যায়ন এখন প্রয়োজন। দেশ এখন গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে এবং এর সমাধানে জামায়াত দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।”
দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ জামায়াতের স্বপ্ন এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান দুরবস্থার জন্য দুর্নীতি প্রধান দায়ী। জামায়াত একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চায় এবং দেশের উন্নয়ন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
“এই জাতি একটি নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়। ৫৪ বছরের বাংলাদেশের ব্যাপারে দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক হতাশা আছে। তারা কিছুটা হলেও বঞ্চিত। এই জাতি একটি বীরের জাতি। আমরা যখনই বঞ্চিত হয়েছি তখনই প্রতিবাদ হয়েছে। মানুষ রক্ত এবং জীবন দিয়ে সেখানে পরিবর্তন এনেছে।”
জামায়াতের এই নেতা বলেন, “আমরা ৪৭ সালে স্বাধীন হয়েও স্বাধীনতা পাইনি। ৭১ সালে দীর্ঘ সংগ্রাম লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম কিন্তু স্বাধীনতা পাইনি। আমরা আবার জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন স্বাধীনতা বা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি, কিন্তু আসলেই স্বাধীন হয়েছি কি না সেটা সময় বলে দেবে।
“আমরা আশা করি এই যে পরিবর্তন হয়েছে, যেটাকে আমরা সুযোগ মনে করি। এটা যেন অতীতের মতো হারিয়ে না যায় সেজন্য আমাদের সাবধান হতে হবে। প্রয়োজনে খানিকটা কঠোর হতে হবে এবং প্রয়োজনে মৌলিক বিষয়গুলোকে পরিবর্তনের জন্য সংশোধনের জন্য সেইভাবে ভূমিকা রাখতে হবে।”
সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জামায়াত কোনো রক্তচক্ষুকে পরোয়া করে না জানিয়ে দলটির এই নায়েবে আমীর বলেন, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কিছু বিষয়ে খুব দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং অঙ্গীকারবদ্ধ।
“প্রথম হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে আমরা কোনো রাষ্ট্রের রক্তচক্ষুকে ভয় করি না। এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে কারও ইন্টারফেয়ারেন্স আমরা স্বীকার করি না এবং করব না। ক্রেডিবল এবং সাসটেইনেবল ডেমোক্রেসির বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী অঙ্গীকারবদ্ধ।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, “আমরা আমাদের দলে গণতান্ত্রিক চর্চা করি। নির্ধারিত সময়ে আমাদের নির্বাচন হয়, ক্যাম্পেইন করা হয়, প্রার্থী ছাড়া হয়, প্যানেল ছাড়া হয়। গোপন ব্যালটে হয়, যেটা আমরা বলি নো ক্যাম্পেইন নো ক্যানডিডেট, নো প্যানেল। এরকম গণতান্ত্রিক চর্চা যেন দেশে করতে পারি।
“আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যেটাকে দেশের মানুষ নির্বাচন বলবে। আমি মনে করি গত তিনটি টার্মে কোনো নির্বাচন হয়নি। আমরা একটি সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং সঠিক নির্বাচন চাই। এতে আমাদের সহযোগিতা থাকবে।
বৈঠকে স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, কমিশন দ্রুত একটি জাতীয় সনদে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে। “এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক, যা দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনে একটি নতুন দিশা দেখাতে পারে।”
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh