রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ সব সমস্যার সমাধান নয়: গয়েশ্বর

বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করলেই ‘সব সমস্যার সমাধান হয় না’।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির এই সদস্য এ কথা বলেন।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ সব সমস্যার সমাধান নয়। সমস্যা মন-মানসিকতার। পাকিস্তান সৃষ্টির মূল কারিগর ছিল মুসলিম লীগ। আজকে তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। জাসদও বড় দল ছিল। আজ কয়েক ভাগে বিভক্ত।”

“ভাসানী-কাজী জাফরের নেতৃত্বাধীন ইউপিপিও বিলীন হয়ে গেছে। জনগণের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নেয় তারা এমনিতেই বিলীন হয়ে যায়।”

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ডাকে দ্বিতীয় দিনের মতো শাহবাগে অবরোধ চলছে।

এনসিপির আরেক নেতা সারজিস আলম শুক্রবার ফেসবুকে বিএনপিকে শাহবাগে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

বিএনপি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে স্পষ্ট করে এখনও কিছু বলেনি। তারা বলছে, জনণ চাইলে কোনো দল নিষিদ্ধ হবে। সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা চায় না অন্য কোনো দল নিষিদ্ধ হোক। তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর মতো দলকেও আওয়ামী লীগ যখন নিষিদ্ধ করেছে, আমরা বিরোধিতা করেছি।”

শাহবাগ অবরোধে যোগ দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি, জামায়াত ইসলাম, ছাত্রশিবির, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সদ্য আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস পার্টি, জুলাই ঐক্যসহ বিভিন্ন সংগঠন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে ১২ দলীয় জোটের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে সমাবেশে বক্তব্য দেন গয়েশ্বর।

গয়েশ্বর বলেন, “আইনের শাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনগণই ঠিক করে কারা গ্রহণযোগ্য বা কারা জনগণ কর্তৃক নিষিদ্ধ। আজকে আওয়ামী লীগকে যারা নিষিদ্ধ করতে চাচ্ছেন, কয়েকদিন পর তারাই যে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করতে চাইবে না তার গ্যারান্টি কী? আওয়ামী লীগ যদি দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য পয়জন হয়; মানুষ যদি মনে করে আওয়ামী লীগ দেশের জন্য, গণতন্ত্রের পয়জন তাহলে জনগণই তাদের নিষিদ্ধ করে দেবে।”

পতিত আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয় তুলে ধরে গয়েশ্বর বলেন, “জামায়াত এখনও নিষিদ্ধ দল। এখনও তারা নিবন্ধন ফিরে পায়নি। তারপরও তাদের গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এই জামায়াত কীভাবে নিষিদ্ধ হয়েছিল? আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে তা দাবি করতে হবে কেন? আজকে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কলকাঠি কারা নাড়াচ্ছেন? যারা এদেশে ১/১১ এনেছিল তারাই অদৃশ্যভাবে এ সরকার চালাচ্ছে।”

ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ চালানোর অভিযোগে নির্বাহী আদেশে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির এবং তাদের অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ।

১ আগস্টের সেই নির্বাহী আদেশ এক মাসও টেকেনি। ২৮ আগস্ট ওই আদেশ প্রত্যাহার করে নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ প্রসঙ্গে গয়েশ্বর বলেন, “হামিদ চলে গেলেন। রাষ্ট্রের দুইবার প্রেসিডেন্ট। কোনো সংস্থা জানে না তিনি যাচ্ছেন। যখন ইমিগ্রেশন ক্রস করলেন সরকার তা জানে না এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। সরকারের সম্মতি ছাড়া তিনি বাইরে যেতে পারেন না। আসলে সরকার কয়টা? আছে ইউনূস সরকার, ছাত্রদের সরকার…।”

তিনি বলেন, “আজকে আরাকান নিয়ে জনগণ ফুঁসে ওঠায় চুপ হয়ে আছে। সরকার কিন্তু এখনও একবারও বলেনি আমরা এগুলো করছি।”

তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনের প্রসঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “তারেক রহমানের দেশে ফিরতে বাধা নেই এটি আমরা সরকারের কাছ থেকে শুনতে চাই। আপনারা তো বিদেশ থেকে এনে কাউকে কাউকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বও দিয়েছেন। তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিরাপত্তা মূল কারণ নয়। মূল কারণ আমাদের জ্ঞাত হতে হবে।”

১২ দলীয় জোট প্রধান এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় পার্টির মহাসচিব সাবেক এমপি আহসান হাবিব লিংকন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, লেবার পার্টি বাংলাদেশের মহাসচিব আমিনুল ইসলাম।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh