
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার এক ঐতিহাসিক স্থানের নাম মুন্সীগঞ্জ। এই জেলায় বাংলা সাহিত্য ও তত্ত্বচর্চার নিদর্শন পাওয়া যায় প্রাচীনকালে পাল আমল থেকেই। এ ছাড়া বিভিন্ন স্বনামধন্য ব্যক্তির জন্ম থেকে শুরু করে বেড়ে ওঠা এই মুন্সীগঞ্জেই। অতীশ দীপঙ্কর থেকে শুরু করে দ্বাদশ শতকে আমরা হলায়ুধ মিশ্রের নাম পাই এই মুন্সীগঞ্জেই। তার পর থেকে নানাভাবে নানা সাহিত্যচর্চার মধ্য দিয়ে মুন্সীগঞ্জে অসংখ্য কবি-সাহিত্যিক দিনের পর দিন গড়ে উঠেছে। মুন্সীগঞ্জের মূল সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক কর্মকাণ্ড ছিল মূলত পাঠাগার ও জমিদার পরিবারকেন্দ্রিক। তখন থেকেই সেখানে সাহিত্যচর্চা গড়ে উঠেছে। দেশভাগের সময় মুন্সীগঞ্জের অনেক পাঠাগারই বন্ধ হয়ে যায়। তার পর থেকে জমিদার বাড়িগুলোকে কেন্দ্র করে যেসব উৎসব অনুষ্ঠান হতো, সেখানে যাত্রা, পালাগান ও বিভিন্ন সাহিত্য সভার আয়োজন করা হতো। শ্রীপুর, রাজনগর, তাড়াপাশা ইত্যাদি জমিদার বাড়িগুলো এসবের জন্য বেশ বিখ্যাত ছিল। বর্তমানে মুন্সীগঞ্জের সাহিত্যচর্চায় পড়েছে এক বড় ভাটা। এখানে আর আগের মতো সাহিত্যচর্চা দেখা যাচ্ছে না। কোনো সংগঠনের ঠিকমতো প্রভাবও বর্তমান সময়ে এখানে দেখা যায় না এবং নিয়মিত কোনো সাহিত্য পত্রিকাও প্রকাশিত হচ্ছে না। কিছু লিটল ম্যাগ প্রকাশিত হচ্ছে তাও বিচ্ছিন্নভাবে। এই লিটল ম্যাগগুলোর মধ্যে অ, ঢেউ, খড়কুটো ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সেখানে সাহিত্যাঙ্গনে ভাগ্যকূল পাঠাগার ও হরগঙ্গা কলেজের বর্তমানে একটি অবস্থান রয়েছে। এগুলোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পাঠচক্র ও সাহিত্য অনুষ্ঠান গড়ে উঠছে, যা ওই অঞ্চলের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পেরিফেরিতে বিশদভাবে উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ নামের একটি সংগঠন সেখানে ভালো কাজ করছে বলে জানা যায়। মুন্সীগঞ্জে জন্মে বাংলা সাহিত্যের প্রথিতযশা খ্যাতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি রয়েছেন অনেক। তাদের মধ্যে হুমায়ুন আজাদ, বুদ্ধদেব বসু, সত্যেন সেন, জিতেন ঘোষ, চাষী নজরুল ইসলাম, ইমদাদুল হক মিলন উল্লেখযোগ্য। অনেকেই এখানে জন্মে, পরবর্তিতে বেড়ে উঠেছে কলকাতায়। এদের মধ্যে ক্ষিতি মোহন সেন, গিরিশ চন্দ্র বসু, সুবোধ ঘোষ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। নানা সাহিত্যিকের জন্মস্থান থেকে শুরু করে সাহিত্যচর্চার ইতিবৃত্তের সঙ্গে প্রাচীনকাল থেকে জড়িয়ে আছে এই মুন্সীগঞ্জ।