
প্রতীকী ছবি।
১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ‘সারেং বৌ’ সিনেমার একটি জনপ্রিয় গান ‘ওরে নীল দরিয়া’। গানটির দুটি চরণ এরকম- ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া/মরি আমি ধড়ফড়াইয়া রে’। অথবা কাজী নজরুল ইসলামের ওই জনপ্রিয় লোকগান- ‘বন-বিহঙ্গ যাও রে উড়ে মেঘনা নদীর পাড়ে/দেখা হলে আমার কথা কইয়ো গিয়া তারে’। গান দুটিতে প্রিয়জন বা সঙ্গীর কাছে আসার আকুলতা ও দূরে থাকার অভিমান যেন আজও ছুঁয়ে যায় শ্রোতার হৃদয়কে। চাকরি, পড়াশোনাসহ নানা কারণে সঙ্গী থেকে দূরে থাকতে হয় অনেককে। কাছাকাছি থেকেও যেখানে সম্পর্কে নানা টানাপড়েন সৃষ্টি হয়, সেখানে প্রযুক্তির উৎকর্ষের এ যুগেও দূরে থেকে সম্পর্কের বন্ধন ঠিক রাখা মোটেও সহজ নয়। চোখের আড়াল হলে যেন মনেরও আড়ালে চলে যেতে থাকে প্রিয়জন। তবে কি সঙ্গী দূরে থাকলে সম্পর্ক সুন্দর থাকবে না? দূরে থাকতে থাকতে একসময় হারিয়ে যাবে প্রিয় মানুষটি? তা কিন্তু নয়। দূরে থাকলেও প্রিয়জনকে চাইলে কাছেই রাখা সম্ভব। তবে সেজন্য অবশ্যই প্রয়োজন আরেকটু ধৈর্য, আন্তরিক প্রচেষ্টা ও প্রিয়জনের প্রতি বাড়তি মনোযোগ।
মনে নেতিবাচক চিন্তা না আনা: প্রিয়জন থেকে দূরে থাকলে সম্পর্কে বোঝাপড়ার কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়। এতে মাথায় নেতিবাচক চিন্তা আসাও স্বাভাবিক। কিন্তু সেসব কথায় কান দিয়ে নিজের সম্পর্কে টানাপড়েন তৈরি করার কোনো অর্থই হয় না। মনের মিল থাকলে এই দূরত্ব সামান্য ব্যাপার।
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করুন: দূরে থাকা সম্পর্কের কঠিনতম সত্যিটা হচ্ছে এসব সম্পর্কে বেশিরভাগ সময় সন্দেহ, নিরাপত্তাহীনতার উপস্থিতি দেখা যায়, যা ধীরে ধীরে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। এজন্য সঙ্গীর সঙ্গে মন খুলে কথা বলুন, নিজেকে প্রকাশ করুন। তার প্রশংসা করুন, তার সম্পর্কে আপনার মনোভাব প্রকাশ করুন। আপনার জীবনে তার গুরুত্ব বুঝতে দিন। আস্থা আর ভালোবাসা অটুট থাকলে এবং যোগাযোগ ঠিক রাখলে সেখানে মনের দূরত্ব কম হয়।
নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন: প্রযুক্তির উৎকর্ষের কল্যাণে এখন দূরে থেকেও প্রিয়জনের কাছে থাকা যায়। চিঠির যুগ পেরিয়ে এখন ভার্চুয়াল যুগে বাস করছি। চাইলেই প্রিয়জনকে দেখা ও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব। প্রতিদিনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ছবি কিংবা টেক্সটের মাধ্যমে শেয়ার করে অনুভূতির আদান-প্রদান করুন প্রিয়জনের সঙ্গে।
বেশি দিন দেখা না করে থাকবেন না: যদি সম্ভব হয়, তবে অন্তত দুই মাসে একবার দেখা করার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, এটা সব সময় সম্ভব নাও হতে পারে। তবে ভরসা ও পরিকল্পনা রাখুন, যাতে সে সময়ের আশপাশে দুজন দুজনকে কাছে পেতে পারেন।
মিথ্যার আশ্রয় নিতে যাবেন না: যে কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি জরুরি পরস্পরের প্রতি সৎ থাকা। পরস্পরকে সম্মান ও বিশ্বাস করা। যত বাজে অবস্থাই আসুক না কেন, যা-ই ঘটুক না কেন, সঙ্গীর প্রতি সব সময় সৎ থাকার চেষ্টা করবেন।
সঙ্গীর ব্যস্ততা বুঝতে চেষ্টা করুন: ভার্চুয়াল এই যুগে চাইলে চোখের পলক ফেলার আগেই সঙ্গীর সঙ্গে দেখা করা যায়। তবে তারও একটা সীমা রয়েছে। মেসেজ কিংবা ভিডিও কল সঙ্গী তাৎক্ষণিক ধরতে নাও পারেন। এমন পরিস্থিতিতে উত্তেজিত হয়ে গেলে চলবে না। এ ক্ষেত্রে দুই পক্ষকেই নিজেদের অবস্থা, ব্যস্ততা বুঝতে ও বোঝাতে হবে। এতে মনে নেতিবাচক চিন্তা বাসা বাঁধবে না, সম্পর্কও ভালো থাকবে।
একই শহরে থাকা যুগলদের জন্য সম্পর্কের সমস্যা সমাধান ও মান-অভিমান ভাঙা যতটা সহজ, দূরে থাকা সঙ্গীর জন্য সেটা বেশ কঠিন। ফলে এ রকম সম্পর্কে কিছু সতর্কতা ও নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। তবেই পছন্দের মানুষ বা সঙ্গী দূরে থাকলেও একটি সুন্দর সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সম্ভব।