
সিচুয়েশনশিপ সম্পর্কে কোনো ধারাবাহিকতা থাকে না। ছবি: সংগৃহীত
সম্পর্কের সংজ্ঞাগুলো খুব পরিচিত। কিন্তু জানলে অবাক হবেন, পরিচিত সম্পর্কের গণ্ডির মধ্যে একটি অপরিচিত শব্দ ঢুকে গেছে! আধুনিক ভাষায় তাকে এক ধরনের সম্পর্ক বলা হচ্ছে। মনোবিজ্ঞানীরা নতুন এই সম্পর্কের নাম দিয়েছেন ‘সিচুয়েশনশিপ’! এখন মনে প্রশ্ন আসতে পারে, সিচুয়েশনশিপ আবার কেমন সম্পর্ক? সেটাই স্বাভাবিক। সম্পর্কের এই টার্মটা বেশ নতুন। তাই কেউ কেউ সিচুয়েশনশিপ শব্দটি না-ও শুনে থাকতে পারেন।
সিচুয়েশনশিপ কী? : এখন এমন জুটিও দেখা যায়, যারা একসঙ্গে ঘুরছে, আড্ডা দিচ্ছে, খাওয়া-দাওয়া করছে, কখনো কখনো একসঙ্গে থাকছেও-অথচ তাদের মধ্যে কোনো দায়বদ্ধতা নেই। কেউ কাউকে কোনো প্রতিশ্রুতিও দেয়নি। এমনকি ভবিষ্যতে কী হতে পারে তা নিয়েও তারা ভাবে না। এই সম্পর্ককে আধুনিক সময়ে বলা হচ্ছে ‘সিচুয়েশনশিপ’।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও যিশিভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাবরিনা রোমানফ বলেছেন, যদি কেউ কোনো প্রতিশ্রুতি ছাড়াই কারও সঙ্গে এক ধরনের পরিস্থিতি বা সম্পর্কের মধ্যে থাকে তাহলে সেটাকেই বলা হচ্ছে ‘সিচুয়েশনশিপ’। মানে এখানে দুজন দুজনকে সময় দেবে, কিন্তু তারা কোনো দায়বদ্ধতার মধ্যে থাকবে না। এ ধরনের সম্পর্ক সবসময় বর্তমান নির্ভর, এর কোনো ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। অর্থাৎ যতক্ষণ বা যতদিন তার সঙ্গে সময় কাটানো হচ্ছে, সম্পর্ক ওই সময় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।
অধ্যাপক সাবরিনা বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের সম্পর্ক রোমান্টিকতার সঙ্গে জড়িত। তা হতে পারে কেবল সময় কাটানো। সহজ কথায় বলতে গেলে, কোনো প্রতিশ্রুতি বা দায়বদ্ধতা ছাড়া যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে সেটাই পরিস্থিতি বা সিচুয়েশনশিপ। কেউ কেউ সামাজিক দায়বদ্ধতার বাইরে এক ধরনের সম্পর্কে জড়াতে চায়, যেখানে কোনো অধিকারের প্রশ্ন থাকবে না-তারাই মূলত এ ধরনের পরিস্থিতি বা সিচুয়েশনশিপে থাকে।
আপনিও কি সিচুয়েশনশিপে আছেন : এখন কীভাবে বুঝবেন সিচুয়েশনশিপের মধ্যে আছেন কিনা? এটা বিচার করার জন্য নিজেকে নিজেই যাচাই করতে হবে। যেমন-আপনি চাইলেও সম্পর্ককে কোনো সংজ্ঞায় আনতে পারবেন না, কোনো প্রত্যাশা নির্ধারণ করতে পারবেন না। যখন একসঙ্গে ঘুরছেন, তখন হয়তো সঙ্গী প্রশ্ন করে না ‘আমরা কী?’। আবার এ ধরনের প্রশ্ন যদি সে করেও থাকে তখন হয়তো মনে হবে, সে তাড়াহুড়া করছে কিংবা তার প্রশ্নে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তাহলে বুঝে নেবেন আপনি সিচুয়েশনশিপে আছেন।
এ ধরনের সম্পর্কে কোনো ধারাবাহিকতা থাকে না। এমনকি কেউ কোনো সমস্যাতে পড়লেও তা নিয়ে কোনো আগ্রহ থাকে না। এই সম্পর্কে ভবিষ্যতের কোনো উল্লেখ নেই, বা ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা থাকে না। সাধারণত ভবিষ্যতের কোনো আলোচনা হয়ই না। এমনও হতে পারে আপনি একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন, আড্ডা দেন, সময় কাটান। কিন্তু তাদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার পর আর কাউকে নিয়ে কোনো ভাবনা আসে না-তাহলেও কিন্তু আপনি সিচুয়েশনশিপে আছেন।
সুবিধা-অসুবিধা : যেহেতু এটি সম্পর্কের নতুন ধরন। তাই এর পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত রয়েছে। তবে সিচুয়েশনশিপের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সেখানে দায়িত্ব কম। এই সম্পর্ক নিয়ে মানসিক চাপে থাকতে হয় না। কেউ কারও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে না।
তবে এর বড় অসুবিধা হলো, যদি সেটা একপাক্ষিক হয়ে যায়। অর্থাৎ একজন সিচুয়েনশিপে থাকলেও আরেকজন হয় তো সিরিয়াস সম্পর্ক ভাবছে। ফলে তার দিকে থেকে প্রত্যাশা থাকে। তাই যদি সিচুয়েশনশিপে থাকেন তাহলে নিশ্চিত হয়ে নিন, সঙ্গীও তাই কিনা। না হলে তার জন্য এটি হবে কষ্টকর, আর আপনি হবেন বিব্রত।