যখন কোনো দম্পতি একই ছাদের তলায় থাকেন, কিন্তু আলাদা ঘরে আলাদাভাবে ঘুমান, তখন সেই বিষয়টিকে ‘স্লিপ ডিভোর্স’ বলা হচ্ছে। সাধারণত ভালো ঘুমের জন্য দম্পতিরা এমন পন্থা বেছে নেন। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকলিন হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. স্টেফানি কলিয়ার বলেন, স্লিপ ডিভোর্স হলো এমন একটা বিষয়, যেটি প্রাথমিকভাবে সাময়িক সময়ের জন্য করা হয়। কিন্তু যখন দম্পতিরা বুঝতে পারেন একা ঘুমালে তাদের ভালো ঘুম হয় তখন বিষয়টি আর সাময়িক থাকে না। স্লিপ ডিভোর্সের সঙ্গে স্বাস্থ্যগত কারণ জড়িত।
স্লিপোপলিসের স্লিপ হেলথের ডিরেক্টর শেলবি হ্যারিস বলেছেন, আসলে দম্পতি অথবা সঙ্গীদের ঘুমের ধরন, অভ্যাস, পছন্দ ভিন্ন। নাক ডাকা, ঘুমের মাঝে পা নাড়ানো বা অনেক বেশি নড়াচড়ার ফলে তার সঙ্গীর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে যেতে পারে। তাই তারা স্লিপ ডিভোর্সের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
অ্যামেরিকান অ্যাকাডেমি অব স্লিপ মেডিসিনের ২০২৩ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি উত্তরদাতা জানিয়েছেন যে ভালোভাবে ঘুমানোর জন্য তারা মাঝে মাঝে বা প্রায় প্রতিদিনই সঙ্গী থেকে আলাদা রুমে ঘুমায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ২৮ থেকে ৪২ বছর বয়সী (মিলেনিয়াল বা ওয়াই জেনারেশন, জন্ম ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মাঝে) উত্তরদাতাদের ৪৩ শতাংশ জানিয়েছে, তারা তাদের সঙ্গীর সঙ্গে ঘুমায় না।
ড. কলিয়ার বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের মাঝে স্লিপ ডিভোর্সের প্রবণতা বেশি কেন এর কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে ধারণা করা যায় আলাদা ঘুমানোর বিষয়টিকে তারা ততটা অসম্মানজনক মনে করে না। তারা ভাবে- যদি আমি ভালো ঘুমাই, ভালো বোধ করি, তবে কেন নয়?’
ঐতিহাসিকদের মতে, অতীতে দম্পতিদের কাছে আলাদা রুমে ঘুমানোটা খুব সাধারণ একটি বিষয় ছিল। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ ধারণাতেও পরিবর্তন এসেছে। ডাবল বিছানা (বৈবাহিক বিছানা) হলো একটি আধুনিক ধারণা এবং শিল্প যুগের বিকাশের সময় এই ধারণা বিস্তার লাভ করে।
আলাদা ঘুমানোর সুবিধা
ড. কলিয়ার বলেন, আলাদা ঘুমানোর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো যে এতে করে তারা একটা নিয়মিত এবং গভীর ঘুমের অভ্যাস গড়তে পারে। ভালো ঘুম সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। ঘুম ভালো না হলে তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে শুরু করে শরীরের অন্যান্য কার্যকারিতাকে ব্যাহত করতে পারে। সিøপ ডিভোর্স একটি সুস্থ সম্পর্ক রক্ষায় সহায়ক হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
পালমোনোলজিস্ট সীমা খোসলা এ বিষয়ে একমত পোষণ করে বলেন, ঘুম না হলে মেজাজ খারাপ হতে পারে। যারা ভালোভাবে ঘুমাতে পারে না, সঙ্গীর সঙ্গে তর্কে জড়ানোর আশঙ্কা তাদের বেশি থাকে। কেউ ঘুমে ব্যাঘাত ঘটালে, তার প্রতি বিরক্তি জন্মাতে পারে এবং এটি সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ভালো ঘুম হওয়া সুস্থতা ও খুশি থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই কোনো দম্পতি নিজেদের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য আলাদা ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নিলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
তবে এর সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো, আলাদা ঘুমাতে হলে অতিরিক্ত বিছানা এবং রুম দরকার। আবার অনেক দম্পতিই তাদের মধ্যকার ইন্টিমেসি, অর্থাৎ পারস্পরিক সংস্পর্শ হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা করেন।
ঘুম বিশেষজ্ঞ ড. ব্রকম্যান যদিও বলেন, ‘স্লিপ ডিভোর্স’ সব দম্পতির জন্য কার্যকর না। গবেষণায় দেখা গেছে, এমন অনেক দম্পতি আছে, যারা বছরের পর বছর একসঙ্গে ঘুমাচ্ছেন এবং তারা একসঙ্গে গভীরভাবে ঘুমাতে পারেন।
ড. কলিয়ার বলেন, যদি একজন চায় এবং অপরজন না চায়, তখন এটি বিরক্তির কারণ হতে পারে। অনেক মানুষ আছেন, যারা একা ঘুমাতে চান না। একাকী ঘুমালে তাদের খারাপ লাগে। তাই দম্পতিদের নিজেদের বিষয়ে সমানভাবে ভাবতে হবে। এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যেটিতে দুজনই রাজি। সূত্র: বিবিসি
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : স্লিপ ডিভোর্স দম্পতি ঘুম জীবনশৈলী
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh