
যাকাত। প্রতীকী ছবি
আর্থিক ইবাদতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যাকাত। এটি ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ। মহান আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে ৮২ স্থানে নামাজের সাথে সাথে যাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন। ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম। যাকাতের আবিধানিক অর্থ পরিশুদ্ধ হওয়া, বৃদ্ধি পাওয়া। যাকাতের পারিভাষায়, কোন দরিদ্র মুসলমানকে শরীয়ত কর্তৃক মালের নির্ধারিত অংশের মালিক বানিয়ে দেয়া।
এ শর্তে যে উক্ত দরিদ্র মুসলমান রাসুল (সা.) এর বংশধর বা তাদের আজাদকৃত গোলাম হতে পারবে না এবং উক্ত মাল থেকে যাকাতদাতার মালিকানা পূর্ণরূপে মুক্ত হতে হবে ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করতে হবে।
স্বর্ণ এবং রৌপ্য যেকোনো রূপে বা আকারে, যে কোনো উদ্দেশ্যে, আপনার মালিকানায় থাকুক, যেমন- অলংকার হিসেবে, বাণিজ্যিক আকারে কিংবা কারো কাছে আমানত বন্ধক রাখা স্বর্ণ। যেকোনো ভাবে আপনার মালিকানায় থাকলেই এর ওপর জাকাত আসবে।
যাকাত আদায়ে গরিমসি করলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, ‘আর যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) ‘এটা তা-ই যা তোমরা নিজদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ কর।’ -(সূরা তাওবাহ, আয়াত: ৩৫, ৩৬)
যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য শর্ত হলো কারো কাছে মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ, সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা এর কোনো একটির সমমূল্যের নগদ টাকা বা ব্যবসার পণ্য থাকতে হবে।
এবং এই পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর তার মালিকানায় থাকতে হবে। তবে এই সম্পদের বছর গণনা করতে হবে চন্দ্রমাস হিসেবে। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে একজন প্রশ্ন করেছেন,
‘আমি গত বছর নভেম্বর মাসের শুরুতে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হই। আমার ইচ্ছা ছিল, এ বছর নভেম্বর মাসে আমার সম্পদের হিসাব করে যাকাত আদায় করব। কিন্তু আমার এক বন্ধুর কাছে শুনলাম, যাকাতের বছর নাকি চান্দ্রবর্ষ অনুযায়ী গণনা করতে হয়। জানতে চাচ্ছি, তার কথা কি ঠিক?
এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদেরা বলেন, হাঁ, আপনার বন্ধু ঠিক বলেছে। যাকাতবর্ষের হিসাব চান্দ্রবর্ষ অনুযায়ী করতে হয়; সৌরবর্ষ অনুযায়ী নয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গত বছরের নভেম্বর মাসের শুরুতে চান্দ্রমাসের কত তারিখ ছিল— তা জেনে সে অনুযায়ী বছর গণনা করতে হবে।
—ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ ১/৩৭০; ফাতহুল কাদীর ৪/১৩২; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯৪