
প্রতীকী ছবি
মুসলিমদের পবিত্র মাস রমজান শুরু হচ্ছে এ সপ্তাহের শেষ দিকে। সূর্যোদয়ের পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা পালন করার বিধান। এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা রোজা রাখতে হবে। এজন্য আপনি কোথায় বসবাস করছেন তার ওপর ঘণ্টা নির্ধারণ করবে।
পবিত্র রমজান মাসে তাকওয়া এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য একজন মুসলিম ব্যক্তি দিনের বেলা খাবার খাওয়া, কোনো কিছু পান করা এবং যৌন সম্পর্ক স্থাপন থেকে নিজেকে বিরত রাখেন।
প্রতি বছর একই সময়ে রমজান শুরু হয় না কেন?
প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন তারিখে রমজান শুরু হওয়ার কারণ রয়েছে। প্রতি বছর ১০ থেকে ১২ দিন আগে রমজান শুরু হয়। এর কারণ হল ইসলামিক ক্যালেন্ডার শুরু হয় চন্দ্র হিজরি ক্যালেন্ডারের উপর ভিত্তি করে। চন্দ্র বর্ষ অনুযায়ী হিজরি ক্যালেন্ডার প্রতিটি মাস ২৯ কিংবা ৩০ দিন হয়ে থাকে।
এ বছর পবিত্র নগরী মক্কাতে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) থেকে রমজান শুরু হবে। তবে এটা নির্ভর করবে চাঁদ দেখার ওপর।
যেহেতু চন্দ্র বছর সৌর বছরের চেয়ে ১১ দিন কম। তাই ২০৩০ সালে দুইবার রোজা রাখতে হবে। ওই বছর ৫ জানুয়ারি থেকে রোজা শুরু হবে। এরপর ২৫ ডিসেম্বর পরবর্তী হিজরি বছরের রোজা শুরু হবে।
তবে এবছর ২৩ মার্চ রোজা শুরু হবে। এই একই তারিখে আবারও রোজা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৩৩ বছর। ২০৫৬ সালের ২৩ মার্চ এই একই তারিখে রমজান শুরু হবে।
যেসব দেশে কম সময় রোজা রাখতে হবে
চিলি বা নিউজিল্যান্ডের মতো বিশ্বের দক্ষিণের দেশগুলোতে বসবাসকারী মুসলিমরা গড়ে ১২ ঘণ্টা রোজা রাখবেন। অন্যদিকে আইসল্যান্ড বা গ্রিনল্যান্ডের মতো উত্তরের দেশগুলোতে বসবাসকারীরা মুসলিমরা রোজা রাখবেন ১৭ ঘণ্টার বেশি সময়।
উত্তর গোলার্ধে যারা বসবাস করেন তাদের সবচেয়ে কম সময় রোজা রাখতে হবে। ২০৩১ সাল পর্যন্ত তাদের জন্য সময় কমতে থাকবে। তবে উত্তর গোলার্ধে শীত শুরু হলে রোজা রাখার সময় কমবে। আর গ্রীষ্ম শুরু হলে এর পরিধি কিছুটা বাড়বে। নিরক্ষরেখার দক্ষিণে বসবাসকারী মুসলমানদের ক্ষেত্রে এর বিপরীত ঘটবে।
রোজা রাখার জন্য ভোররাতে যা পানাহার করা হয় তাকে বলা হয় সেহরী এবং সন্ধ্যা বেলা রোজা ভঙ্গ করার জন্য যা খাওয়া হয় তাকে বলে ইফতার।
এবছর রোজা রাখার সর্বনিম্ন সময় ১২ ঘণ্টা আর সর্বোচ্চ সময় ১৭ ঘণ্টা।
চরম উত্তরাঞ্চলীয় শহরগুলোতে- যেমন নরওয়ের লংইয়ারবাইন, যেখানে ২০ এপ্রিল থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত সূর্য অস্ত যায় না। সেসব দেশের মুসলিমদেরকে সৌদি আরবের মক্কা বা নিকটবর্তী মুসলিম দেশের সময় অনুসরণ করার জন্য ধর্মীয় আদেশ জারি করা হয়েছে।
যেসব দেশে বেশি সময় রোজা রাখতে হবে- গিনল্যান্ডে নুক, আইসল্যান্ডের রেজাভিক, ফিনল্যান্ডের হেলসিংকি, সুইডেনের স্কটহোম এবং স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরের বাসিন্দাদের ১৭ ঘণ্টা ব্যাপী রোজা রাখতে হবে। দিন দিন সময় কিছুটা কমতে পারে।
এছাড়া নেদারল্যান্ডের আমস্টারডাম, পোল্যান্ডের ওয়ারসো, যুক্তরাষ্ট্রের লন্ডন, কাজাখিস্তানের আস্তানা, বেলজিয়ামের বেলারুস বাসিন্দানের দিনে ১৬ ঘণ্টা রোজা পালন করতে হবে।
ফ্রান্সে প্যারিস, সুইজারল্যান্ডের জুরিখ, রোমানিয়ার বুখারেস্ট, কানাডার ওটা, বেলজিয়ামের সোফিয়া, ইতালির রোম, স্পেনের মাদ্রিদে দিনে ১৫ ঘণ্টা ব্যাপী রোজা পালন করতে হবে।
পর্তুগালের লিবসন, গ্রিসের এথেন্স, চীনের বেইজিং, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি, তুরস্কের আঙ্কারা, উত্তর কোরিয়ার পিয়ংইয়ং, মস্কোর রাবাট, জাপানোর টোকিও, পাকিস্তানের ইসলামাবাদ, আফগানিস্তানের কাবুল, ইরানের তেহেরান, ইরাকের বাগদাদ, লেবাননের বৈরুত, সিরিয়ার দামেস্ক, মিশরের কয়রো, জেরুজালেম, কুয়েত সিটি, ফিলিস্তিনের গাজা শহর, ভারতের নয়া দিল্লি, হংকং, বাংলাদেশের ঢাকা, ওমানের মাস্কাট, সৌদি আরবের রিয়াদ, কাতারের দোহা, আরব আমিরাতের দুবাই, ইয়েমেনের এডেন শহরের বাসিন্দানের রোজা পালন করতে হবে ১৪ ঘণ্টা।
ইওথোপিয়ার আদিজ আবাবা, সেনেগালের ডাকার, নাইজেরিয়ার আবুজা, শ্রীলঙ্কার কলম্বো, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, সুদানের খারতুম, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, কেনিয়ার নাইরোবি, অ্যাঙ্গোলার লুয়ান্ডা, ইন্দোনেশিয়ার জার্কাতা, ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়া, জিম্বাবুয়ের হারারে, দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেবার্গের বাসিন্দারা রোজা রাখবেন ১৩ ঘণ্টা করে।
এছাড়া আর্জেন্টিনার বুয়েন্সে, প্যারাগুয়ের সিউদাদ দেল এস্তে, দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন, উরুগুয়ের মনটেভিডিও, অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা, চিলির পুয়ের্তো মন্ট এবং নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের বাসিন্দারের ১২ ঘণ্টা করে রোজা রাখতে হবে। সূত্র: আল জাজিরা