
প্রতীকী ছবি
বনি আদমের ইহ ও পরকালীন মুক্তি ও সাফল্যের চূড়ান্ত নির্দেশিকা গ্রন্থ আল কুরআনুল করীম নাজিল হওয়ার মাস রমজানুল মোবারক। কুরআন মজিদ নাজিল হওয়ার মাস হিসেবে রমজানের মর্যাদা অন্যান্য মাসের চেয়ে বেশি। শুধু শেষ নবীর প্রতি নয়, অনেক নবীর প্রতি কিতাব ও সহিফা নাজিল হয়েছিল রমজান মাসে।
মুসনাদে আহমাদ গ্রন্থে হজরত ওয়াসিলা ইবনুল আসকা‘ রাযিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের ওপর সহিফা নাজিল হয়েছিল রমজানের ১ তারিখে। আর রমজানের ৬ তারিখে হজরত মুসা আলায়হিস সালামের প্রতি তাওরাত, ১৩ তারিখে হজরত ঈসা আলায়হিস সালামের প্রতি ইঞ্জিল এবং ২৪ তারিখে (প্রসিদ্ধ মতে রমজানের ২৭ তারিখের রাতে বা লায়লাতুল কদরে) শেষ নবী (সা.) প্রতি কুরআন মাজিদ নাজিল হয়েছে। কিন্তু হজরত জাবির রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদিসে আছে যে, জবুর রমজানের ১২ এবং ইঞ্জিল ১৮ তারিখে নাজিল হয়েছিল। [ইবনে কাছির]
শেষনবী মুহাম্মাদ (সা.) সত্যতা ও শ্রেষ্ঠত্বের সবচেয়ে বড় যে প্রমাণ আমাদের সামনে বিদ্যমান রয়েছে এবং চিরকাল বিদ্যমান থাকবে তা হলো কুরআন মজীদ। ইসলামের ইতিহাস যারা অবগত, এমন সবার কাছে পরিষ্কার যে, মক্কার বাসিন্দারা ও স্বয়ং কুরাইশরা প্রথমে বিশ্বাস করতে চায়নি মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর নবী এবং কুরআন মজীদ আল্লাহর কিতাব। তাই প্রথমেই মুহাম্মদ (সা.) সাথে কুরাইশ এবং অন্য সব বিরোধী-অস্বীকারকারী-বিদ্বেষীর যেসব ঘটনা ঘটেছিল, সেগুলোর মধ্যে একটি ছিল, তিনি আল্লাহর প্রত্যাদেশ অনুযায়ী তাদেরকে কুরআন নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। ইরশাদ করা হয়-বলুন, যদি মানুষ ও জিনেরা একত্র হয় এ জন্য যে, তারা এই কুরআনের অনুরূপ উপস্থাপন করবে, তাহলে তারা তা উপস্থাপন করতে পারবে নাযদিও তারা পরস্পরের সহায়ক হয়। (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৮৮)
এই চ্যালেঞ্জে বিরোধীরা নীরব হয়ে যায়। তারা এই চ্যালেঞ্জ নাকচ করতে বা এর জবাব দিতে অপারগ হয়ে যায়। তারপর আল্লাহর রাসূল তাদেরকে আবার চ্যালেঞ্জ জানালেন এবং তাদেরকে সেই কথা বললেন যা আল্লাহ তার কাছে ওয়াহি পাঠালেন। ইরশাদ হলোতারা কি বলছে যে তিনি এটিকে রচনা করেছেন? বলুন তাহলে তোমরা অনুরূপ দশটি সূরা রচনা করে উপস্থাপন করো এবং আল্লাহ ব্যতীত যাকে পার আহ্বান জানাও-যদি তোমরা সত্যবাদী হও। (সূরা হূদ, আয়াত ১৩)
তখনো তারা নীরব রইল এবং অপারগ হয়ে গেল। মহানবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে কুরাইশ ও অন্যসব বিরোধীর প্রতি ছুড়ে দেয়া চ্যালেঞ্জের পরিণতি দাঁড়িয়েছিল এই যে, তারা এর এমনকি জবাব দেয়ার চেষ্টা করতেও সক্ষম হয়নি। তারা নীরব হয়ে যায় এবং বিরোধিতার অন্য উপায় অবলম্বন করে। তা হলো মিথ্যা ও অপপ্রচার, শক্তিপ্রয়োগ ও ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে আল্লাহর পথ থেকে লোকদের বাধা দেয়া এবং নিজেদের লোকদের প্রতি এ মর্মে উপদেশ দেয়া যে, তারা যেন কুরআনের পাঠ না শোনে। কেননা এতে তারা প্রভাবিত হতে পারে। তাদের এ পদ্ধতির কথা আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে-অবিশ্বাসীরা বলে তোমরা এই কুরআন শুনবে না এবং এর আবৃত্তিতে হট্টগোল সৃষ্টি কর, হয়তো তোমরা জয়ী হবে। (সূরা হা-মীম সিজদা, আয়াত ২৬)
কুরআন মজীদ যেহেতু মহান রব্বুল আলামীনের বাণী, তাই তা আল্লাহর সত্তার মতোই অসীম তত্ত্বাবলি, অসীম জ্ঞান ও অসীম মর্মের অধিকারী, যা একটি প্রকারের নয়, বরং অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের হাজার হাজার প্রকার জ্ঞানের ধারক ও আধার।
মোটকথা রমজান মাসের সাথে আল্লাহর কিতাবের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। তাই এ মাসে অন্যান্য নেক আমলের পাশাপাশি কুরআন মজীদ পাঠ ও অধ্যয়নের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করার প্রয়োজনীয়তা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু তাই বলে কুরআনের আক্ষরিক পাঠ পর্যন্ত ক্ষান্ত হওয়া মুসলমানদের জন্য কাম্য হতে পারে না। নাতিদীর্ঘ গ্রন্থখানার অর্থ বোঝার মতো ন্যূনতম আরবি ভাষা আয়ত্ত করার চেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। বিশেষ করে শিক্ষিত মুসলমানেরা যদি অন্যান্য ভাষা ও শাস্ত্র আয়ত্ত করতে অর্থ, শ্রম, মেধা ও সাধনা ব্যয় করতে পারেন, তাহলে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের বাণী বুঝবার জন্য আরবি ভাষা আয়ত্ত করার সুযোগ না পাওয়ার অভিযোগ করতে পারেন কোন যুক্তিতে? এজন্য কুরআন মজীদের ভাষা শেখার চেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য।
অনেকে এ মাসে এতবার কুরআন মজীদ খতম করেছেন, যা আমাদের বর্তমান ব্যস্ত যুগের বিবেচনায় অতিরঞ্জন মনে হয়। এমন মহীয়সী নারীর কথাও জানা যায়, যিনি রমজানে ৪০ বার কুরআন মজীদ খতম করতেন। আর ৭, ১০ ও ১২ বার খতম করতেন এমন মুসলিম শাসক ইতিহাসে কম নয়।