Logo
×

Follow Us

ধর্ম

ইতিকাফ ইমান বৃদ্ধির মুখ্য সুযোগ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৪৭

ইতিকাফ ইমান বৃদ্ধির মুখ্য সুযোগ

প্রতীকী ছবি

ইসলামি পরিভাষায় ইতিকাফ হলো ইবাদতের উদ্দেশ্যে ইতিকাফের নিয়তে নিজেকে নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আবদ্ধ রাখা। ইতিকাফ ইমান বৃদ্ধির একটি মুখ্য সুযোগ। সকলের উচিত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের ইমানি চেতনাকে শাণিত করে তোলা ও উন্নত পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করা। 

কোরআনে ইতিকাফ সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে, ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) এর কথা উল্লেখ করে এরশাদ হচ্ছে, এবং আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো’। (সুরা বাকারাহ:১২৫)

আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) আজীবন রমজানের শেষ দশকগুলো ইতিকাফ করেছেন। তাঁর ওফাতের পরও তাঁর বিবিগণ ইতিকাফ করতেন। (বুখারি ও মুসলিম; আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৪৬, পৃষ্ঠা: ১২৯)।

হাদিস শরীফে আছে, ‘নবীকারিম (সা.) রমজানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করতেন’। (বুখারী : ২০২১;মুসলিম: ১১৭১)

যে ব্যক্তি রমজানের (শেষ) দশদিন ইতিকাফ করবে, তার জন্য দুইটি হজ্ব এবং দুইটি ওমরার সমতুল্য সওয়াব হবে। (বায়হাকী শরীফ)

অন্য একটি হাদিসে পাওয়া যায়, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন ইতিকাফ করবে, আল্লাহ তাআলা তার এবং জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। অর্থাৎ আসমান ও জমিনের মাঝে যতো দূরত্ব আছে তার চেয়েও বেশি দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। (শু আবুল ঈমান,৩৯৬৫)

ইতিকাফের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে আক্ষরিক অর্থেই বাহ্যত আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যায়। রমজানের শেষ দশক তথা ২০ রমজান সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে ঈদের চাঁদ তথা শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়া বা ৩০ রমজান পূর্ণ হয়ে ওই দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত (৯ দিন বা ১০ দিন) ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ কিফায়াহ।

কোনো মসজিদে মোল্লাদের কয়েক জন বা কোনো একজন আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হবে। আর কেউই আদায় না করলে সবাই দায়ী থাকবে। তবে আদায়ের ক্ষেত্রে যিনি বা যারা আদায় করবেন, শুধু তিনি বা তারা এই সওয়াবের অধিকারী হবেন। ১০ দিনের কম যেকোনো পরিমাণ সময় ইতিকাফ করলে তা নফল ইতিকাফ হিসেবে গণ্য হবে। নফল ইতিকাফ ও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল; তাই সম্পূর্ণ সুন্নত ইতিকাফ পালন করতে না পারলে যতো দূর সম্ভব নফল ইতিকাফ করাও গুরুত্বপূর্ণ। 

ইতিকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো শবে কদর প্রাপ্তি; রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করলে শবে কদর প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। পুরুষদের মসজিদে ইতিকাফ করতে হয়; নারীরা নির্দিষ্ট ঘরে বা নির্ধারিত কক্ষে ইতিকাফ করবেন। নফল ইতিকাফ বছরের যেকোনো সময়ই করা যায়।

ইতিকাফের জন্য রোজা শর্ত; কিন্তু স্বল্প সময় (এক দিনের কম সময়) ইতিকাফ করলে তার জন্য রোজা রাখা শর্ত নয়। নফল ইতিকাফ মানত করলে বা আরম্ভ করে ছেড়ে দিলে, তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। এর জন্য রোজা শর্ত এবং এটি এক দিনের (২৪ ঘণ্টা) কমে হবে না।

কেউ যেকোনো মসজিদে ইতিকাফ করতে পারেন এবং যে কাউকে যে কেউ হাদিয়া বা উপঢৌকন দিতে পারেন। একজন পরহেজগার লোককে সম্মানিত করা বা সহযোগিতা করাতে দোষ নেই; কিন্তু এটি যেন ইবাদতের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত না করে। 

নারীরা নিজ ঘরে বা নির্দিষ্ট কক্ষে ইতিকাফ করবেন। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ও একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ওই ঘর বা কক্ষ থেকে বের হবেন না। তবে দরকার হলে ওই কক্ষের ভেতর থেকে বাইরের কাউকে ডাকতে পারবেন এবং কেউ ভেতরেএলে তার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারবেন। 

ইতিকাফ অবস্থায় ইতিকাফকারী ফরজ ইবাদতের বাইরে কোনো নফল ইবাদত না করলেও ইতিকাফের সওয়াব পাবেন। তবে অতিরিক্ত নফল ইবাদত করলে আরো বেশি ফজিলতের অধিকারী হবেন। যেমন: কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করা, নফল নামাজপড়া, কাজা নামাজ আদায় করা, দোয়া দরুদ পাঠ করা, জিকির আসকার করা, তাসবিহ তাহলিল পাঠ করা।

এছাড়া দ্বীনি কথাবার্তা ও ধর্মীয়জ্ঞান চর্চা করা ও সওয়াবের কাজ। যেমন: কোরআন, হাদিস, ফিকাহ, তাফসির ইত্যাদি পাঠ করা ও তালিম করা।

ইতিকাফ অবস্থায় এমন সব কথা বলা ও কাজ করা বৈধ, যাতে কোনো গুনাহ নেই। প্রয়োজনীয় সাংসারিক কথাবার্তা বলতেও নিষেধ নেই; তবে অহেতুক অযথা বেহুদা কথাবার্তা দ্বারা ইবাদতের পরিবেশ নষ্ট করা যাবে না। ইতিকাফকারী মসজিদের মধ্যে ইতিকাফরত অবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবেন এবং মাথায়, দাঁড়িতে ও চুলে তেল লাগাতে পারবেন। মাথার চুলে ও দাড়িতে চিরুনি করতে পারবেন। যাঁরা শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত, তারা ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদের ভেতরে তালিম দিতে পারবেন। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫