নবীজি (সাঃ) এর নামে কোরবানি দেওয়ার বিষয়ে দলিল

মুহাম্মদ রওশন আলী, ইসলামী ব্লগার
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৩, ১৭:২৮

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই উম্মতদের ওছিয়ত করে গেছেন যে উনার সম্মানীত তরফ থেকে আমরা যেন কুরবানী করি। তবে প্রশ্ন হচ্ছে এই আদেশ পালন কি ঐচ্ছিক?
চলুন বিষয়টা জেনে আসি হাদীস শরিফের দলিল অনুযায়ী।
এ বিষয়ে ইসলাম বলছে, কিছু সময় তা নিয়ে ফিকির করা ৬০ বছর বেরিয়া নফল ইবাদতের চাইতে শ্রেষ্ঠ।
হাদীস শরীফ ১
عَنْ حَضْرَتْ حَنَشٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ اِمَامِ الْاَوَّلِ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ اَمَرَنِـىْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْ اُضَحِّىَ عَنْهُ فَاَنَا اُضَحِّىْ عَنْهُ اَبَدًا
অর্থ: “বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হানাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে সম্মানিত আদেশ মুবারক করেছেন আমি যেনো উনার পক্ষ থেকে সম্মানিত কোরবানী মুবারক অনন্তকাল ধরে যেন করি অর্থাৎ আবাদুল আবাদ ধরে যেন করি। সেজন্য আমি সব সময় অর্থাৎ দায়িমীভাবে প্রতি বছর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে সম্মানিত কুরবানী মুবারক করি।” সুবহানাল্লাহ!
(মুসনাদে আহমদ ১/১০৭, ফাদ্বাইলুছ ছাহাবা লি আহমদ ইবনে হাম্বল ২/৬৯৮)
হাদীস শরীফ ২
عَنْ حَضْرَتْ حَنَشٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ رَاَيْتُ حَضْرَتْ امام الاول كرم الله وجهه عَلِيْهِ السَّلَامُ يُضَحِّى بِكَبْشَيْنِ فَقُلْتُ لَهُ مَا هٰذَا فَقَالَ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوْصَاِنْى اَنْ اُضَحِّى عَنْهُ فَانَا اُضَحِّى عَنْهُ.
অর্থ: “হযরত হানাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে দু’টি দুম্বা কোরবানী মুবরাক করতে দেখলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কি? (দু’টি কেন?) জবাবে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে ওছিয়ত মুবারক করে গিয়েছেন যে, আমি যেন উনার পক্ষ হতে পবিত্র কুরবানী করি। সুতরাং আমি উনার পক্ষ থেকে (একটি) পবিত্র কোরবানী করছি। ” (আবূ দাঊদ শরীফ ২য় খ- ২৯ পৃষ্ঠা, তিরমিযী শরীফ ১ম খ- ১৮০ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ১২৮ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ হতে এটা স্পষ্ট যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরফ থেকে পবিত্র কুরবানী করার জন্য বলা হয়েছে।
আর ১ম হাদীস শরীফে অনন্তকাল এই কোরবানী জারি রাখার জন্য বলা হয়েছে। অন্যদিকে ২য় হাদীস শরীফে ওছিয়ত মুবারক করেছেন।
তাহলে ফিকিরের বিষয় হচ্ছে, সাধারণ একজন উম্মত যদি তার সন্তানদেরকে ওছিয়ত করেন তবে সন্তানের জন্য তা মান্য করা ফরয-ওয়াজিব হয়ে যায়। সন্তান যদি সামর্থ থাকা সত্ত্বেও সে ওছিয়ত পূর্ণ না করেন তাহলে শরীয়ত অনুযায়ী গুনাহগার সাব্যস্ত হবে।
কাজেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে মহাসম্মানিত ওছিয়ত মুবারক করেছেন, উক্ত ওছিয়ত মুবারক পালনের গুরুত্ব কত বেশি এবং তা উম্মতের জন্য ফরয হিসেবে পরিগণিত।
এতে বুঝা যাচ্ছে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই চাচ্ছেন উম্মতরা উনার সম্মানীত তরফ থেকে কুরবানী করুক। কেননা তখনই উম্মতরা আশ্চর্জজনক কামিয়াবী লাভ করবেন।
তাই একা হোক, শরীক হোক, একজনে হোক বা কয়েকজনে মিলে হোক সব মুসলমানের জন্য হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরফ থেকে কোরবানী করা দায়ীত্বের মধ্যে পড়ে।