Logo
×

Follow Us

ধর্ম

জীবনে নির্বাণ অনুসন্ধান

Icon

আমীন আল রশীদ

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৪, ১৮:৩৯

জীবনে নির্বাণ অনুসন্ধান

‘জীবনে নির্বাণ অনুসন্ধান : বাংলার বুদ্ধ’ শিরোনামে বুদ্ধের কিছু অসাধারণ শিল্পকর্ম। ছবি: সংগৃহীত

‘জীবনে নির্বাণ অনুসন্ধান : বাংলার বুদ্ধ’ শিরোনামে বুদ্ধের কিছু অসাধারণ শিল্পকর্ম, তার সঙ্গে বুদ্ধের জীবনীনির্ভর নাটকের মঞ্চায়ন এবং চর্যাগান, সব মিলিয়ে একটি গভীর চিন্তাশীল ও মননের আয়োজন হয়ে গেল গত ২০ থেকে ২৩ মে বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে। আয়োজক প্রাচ্য-চিত্রকলা অনুশীলন সংঘ।

‘নির্বাণ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ বিলয়, সমাপ্তি, অবসান বা শেষ। সেই অর্থে মৃত্যুও। গৌতম বুদ্ধের অনুসারীরা ‘নির্বাণ’ বলতে বোঝেন বোধিপ্রাপ্তিকে। জীবনে কেউ বোধিপ্রাপ্ত হলেন মানে তিনি একজন পরিপূর্ণ মানুষ। তিনি জীবনকে বুঝেছেন।

জীবনে নির্বাণ লাভ কিংবা মোহ মুক্তি ও মোক্ষলাভ তথা বোধিপ্রাপ্তি খুব কঠিন। কঠিন বলেই নির্বাণ অনুসন্ধান। যে অনুসন্ধানের একটি ছোট অথচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাৎপর্যময় ও প্রভাববিস্তারি আয়োজন হয়ে গেল রাজধানীর আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে।

মূলত এটি বুদ্ধ বিষয়ক নিয়মিত বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর দ্বিতীয় পর্ব। এবারের পর্বে বুদ্ধের জীবন ও দর্শনের ওপর বাংলাদেশ ও ভারতের ৪২ জন শিল্পীর ৭১টি শিল্পকর্ম স্থান পায়, যার মধ্যে ছিল চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও মৃৎশিল্পের নানা করণকৌশলের বৈচিত্র্যময় শিল্পসম্ভার। ওয়াশ, গোয়াশ, টেম্পারা, মাটি ও চালের গুঁড়া প্রভৃতি বৈচিত্র্যময় কাজ যেমন ছিল, তেমনি ঐতিহ্যবাহী তালপাতা চিত্র, রিকশা, সিনেমা ব্যানার এবং সমসাময়িক ধারায় রিভার্স পেইন্টিং দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।

প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী বরেণ্য শিল্পী অধ্যাপক আব্দুস সাত্তারের আঁকা বুদ্ধের কয়েকটি সৌম্যকান্তি প্রতিকৃতি প্রদর্শনীকে আলোকিত করে। তার কাজে রেখার লালিত্য, পরিপক্ব বর্ণবিন্যাস এবং ধ্যানরত বুদ্ধের অর্ধ-নির্লিপ্ত অক্ষিযুগল নির্বাণ সাধনার অনবদ্য রূপ। লালন, বুদ্ধ ও শ্রী চৈতন্যকে জ্যোৎস্নালোকিত রাতে বোধিবৃক্ষের নিচে পারস্পরিক ভাবসাধনায় মত্ত অবস্থায় চিত্রায়ণ করেছেন প্রাচ্যধারার শিল্পী অমিত নন্দী।

এই প্রদর্শনীতে শিল্পপ্রেমী দর্শকেরা নব্য-বেঙ্গল স্কুলের শিল্প-ঐতিহ্যের বহমান ধারাকে দেখার সুযোগ পান। ওড়িশার শিল্পী প্রশান্ত মহারানা তালপাতাচিত্রে এবং তার শুরু শরৎ কুমার সাধু পটচিত্রে চমৎকারভাবে বুদ্ধের জীবনকাহিনি ফুটিয়ে তুলেছেন। বাংলাদেশি শিল্পী বাপ্পী পাল টেপা পুতুলের আদলে বাংলার বুদ্ধকে নির্মিত করেছেন।

এই প্রদর্শনীর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য, কোনো শিল্পকর্মের সঙ্গে শিল্পীর নাম পরিচয় লিপিবদ্ধ ছিল না। প্রাচ্য-চিত্রকলা অনুশীলন সংঘের তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ড. মলয় বালা মনে করেন, শিল্পকর্মের সঙ্গে শিল্পীর নাম থাকা মানেই সেখানে একধরনের পক্ষপাত থাকার সম্ভাবনা থাকে। যেমন কোনো একজন খ্যাতিমান শিল্পীর শিল্পকর্ম দেখামাত্রই দর্শকের মনে একটা ভক্তির উদ্রেক হয়। দর্শকের মনে এই প্রতীতি জন্মায় যে, এই শিল্পী কোনো খারাপ ছবি আঁকতেই পারেন না! অর্থাৎ দর্শক যেন শিল্পীর নাম নয় বরং শিল্পকে দেখেন, দেখে বোঝার চেষ্টা করেন, সেই উদ্দেশ্য মাথায় নিয়েই কোনো শিল্পকর্মের সঙ্গে শিল্পীর নাম পরিচয় যুক্ত করা হয়নি। এটিও শিল্পীর ভেতর থেকে তার অহংকার, নিজের শিল্পকর্ম নিয়ে তার অহমিকবোধ তথা আমার ভেতর থেকে আমিকে বিসর্জন দিতে পারার একটি বড় শিক্ষা।

প্রদর্শনী উপলক্ষে মঞ্চায়িত হয় ‘নির্বাণ’ নামে একটি নাটক, যেটি গৌতম বুদ্ধের নির্বাণ লাভ তথা বোধিপ্রাপ্তির ঘটনার ওপর নির্মিত। সাধনকমল চৌধুরীর ভাষান্তরিত অশ্ব ঘোষের বুদ্ধচরিত অবলম্বনে এই নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. লতা সমদ্দার। নাটকে অভিনয়ও করেছেন এই কলেজের শিক্ষার্থীরা। অনেকের কাছে এই তথ্যটি হয়তো নতুন মনে হবে যে, তেজগাঁও কলেজেও থিয়েটার স্টাডিজ বিভাগ আছে এবং সেখানের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত থিয়েটার চর্চা করেন। ফলে এই প্রদর্শনীটি শিল্পকলার অনেক দর্শকের জন্য একটা নতুন অভিজ্ঞতাই বটে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫