
ফাতেমা রানীর ধর্মীয় তীর্থ উৎসব। ছবি: শেরপুর প্রতিনিধি
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বিশ্বশান্তি কামনা করে শেষ হয়েছে খ্রিস্টভক্তদের দুইদিনব্যাপী ফাতেমা রানীর বার্ষিক ধর্মীয় তীর্থ উৎসব।
বৃহস্পতিবার ৩১ অক্টোবর বিকেলে পুনর্মিলন ও পাপ স্বীকারের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়ে আজ ১ অক্টোবর শুক্রবার বেলা ১২টায় সমাপনী খ্রিস্টযাগের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় ফাতেমা রানীর তীর্থউৎসব।
এবারের তীর্থ উৎসবের প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা মহাধর্ম প্রদেশের সহকারি বিশপ সুব্রত বনিফাজ গোমেজ।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের বিশপ পল পনেন। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠান শুরু হয়ে শুক্রবার দুপুরে শেষ হয় এই তীর্থ উৎসব। বৈদ্যুতিক আলোয় আলোকিত পাহাড়কে ঘিরে কয়েকদিন যাবত এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল।
তীর্থ উৎসব আয়োজকরা জানান, এখন থেকে ১০৫ বছর আগে ১৯১৭ সালে পর্তুগালের ফাতেমা নগরে মা মারিয়া ৩ জন ছেলে মেয়ের কাছে দেখা দিয়েছিলেন। মা মারিয়ার দেখা পেয়ে তারা বিশ্বাস স্থাপন করেছিল। পরে ওই বিশ্বাসীদের সংখ্যা বেড়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। সেই বিশ্বাস থেকেই বাংলাদেশী খ্রিস্টভক্তরা শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী বারমারী সাধু লিও এর খ্রিস্ট ধর্মপল্লীতে পর্তুগালের ফাতেমা নগরের আদলে ও অনুকরণে ১৯৯৮ সালে ফাতেমা রাণীর তীর্থস্থান স্থাপন করেন।
স্থাপনকাল থেকেই ভিন্ন ভিন্ন মুলসুরে প্রতিবছর বার্ষিক তীর্থ উৎসব পালিত হয়। এবার দেশ বিদেশের অর্ধ লক্ষ খ্রিস্টভক্ত নরনারী এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে বলে আয়োজকরা জানান।
বৃহস্পতিবার বিকেলে খ্রিস্টযাগের মাধ্যমে তীর্থ উৎসব শুরু হয়। রাত ৮টায় মোমবাতি জ্বালিয়ে তীর্থযাত্রীরা আলোক শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। নিজেদের পাপ মোচন করতে মোমবাতি জ্বালিয়ে হাজার হাজার খ্রিস্টভক্তরা প্রায় দুই কিলোমিটার পাহাড়ি ক্রুশের পথ অতিক্রম করে ৪৮ ফুট উঁচু মা মারিয়ার মুর্তির সামনে বিশাল প্যান্ডেলে সমবেত হয়ে নৃত্যগীত, নিরাময়, গীতিআলেখ্য ও নিশিজাগরণ পালন করেন।
রাতে নির্জন পাহাড়ে হাজার হাজার ভক্তের হাতে মোমের আলোর মিছিল পাহাড়ের বিশেষ সৌন্দর্য আবহের সৃষ্ঠি করে। পাহাড় হয়ে উঠে আলোকময়। রাত ১১টায় আরাধনা, রাত ১২টায় নিশি জাগরণসহ অত্যন্ত শৃংখলাবদ্ধ বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান পালিত হয়।
শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠিত হয় জীবন্ত ক্রুশের পথ। এতে কীভাবে যীশু খ্রিস্টকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা তার অবয়বে বাস্তবতা দেখানো হয়। যীশুর কষ্ট দেখে অংশগ্রহণকারী যুবক যুবতীসহ খ্রিস্টভক্তরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
পরে বেলা ১২ টার সময় মহা খ্রিস্টযাগের মাধ্যমে তীর্থ উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করেন প্রধান বক্তা গাব্রিয়েল কোরাইয়া।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা গাব্রিয়েল কোরাইয়া বলেন, বিশ্বে এখন মারামারি, অশান্তি ও যুদ্ধ লেগে আছে। মানুষ অশান্তিতে আছেন। তাই আমরা বিশ্ববাসীর শান্তি ও মঙ্গল কামনা করে আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি। দূরদূরান্ত থেকে আমরা পুণ্যের আশায় তীর্থযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছি। এখান থেকে নিজ গৃহে ফিরে তীর্থের শিক্ষা যাতে আমাদের খ্রিস্টীয় জীবনে প্রতিফলন ঘটিয়ে সুন্দর আদর্শ জীবন গঠন করি। এখানে তীর্থযাত্রীরা এসে আধ্যাত্বিক জ্ঞান লাভ করার জন্য তিনি খ্রিস্টভক্তদের সত্য ও ন্যায়ের পথে চলার আহবান জানান। অনুষ্ঠানকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে।