
কবর জিয়ারত করা সুন্নত। এটি হৃদয়কে বিগলিত করে। নয়নযুগলকে করে অশ্রুশিক্ত। স্মরণ করিয়ে দেয় মৃত্যু ও আখিরাতের কথা। ফলে এর দ্বারা অন্যায় থেকে তাওবা এবং নেকির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি হয় পরকালীন মুক্তির প্রেরণা। এসব উদ্দেশ্যে শরিয়তে কবর জিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নতুবা ইসলামের সূচনালগ্নে কবর জিয়ারত নিষিদ্ধ ছিল। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, আমি তোমাদের এর আগে কবর জিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কেননা তা দুনিয়াবিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের স্মরণ করিয়ে দেয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৫৭১)
কবর জিয়ারতের দোয়া : আবু হুরাইরা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসুল (সা.) একটি কবর জিয়ারতে যান এবং বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম দারা ক্বাওমিম মুমিনিন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লা-হিকুন। (সহিহ মুসলিম : ২৪৯)
কবর জিয়ারতের পদ্ধতি : কবরস্থানে গেলে প্রথমে কবর জিয়ারতের দোয়া পড়বে। এরপর কবরবাসীর ইসালে সওয়াবের নিয়তে কিছু দরুদ শরিফ, সুরা ইত্যাদি পড়ে মাইয়েতের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করবে। পবিত্র হাদিসে যেমন কবর জিয়ারতের ক্ষেত্রে কিছু সুরার বিশেষ ফজিলত উল্লেখ করা হয়েছে। তেমনি দরুদ শরিফেরও ফজিলত এসেছে। তাই দরুদ শরিফ, সুরা ফাতেহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস ও যেসব সুরা সহজ মনে হয়, সেগুলো পড়ে ইসালে সওয়াব করবে। কবরের দিকে ফিরে দুই হাত তুলে দোয়া করা ঠিক নয়। তাই কবরের দিকে পিঠ দিয়ে কিবলামুখী হয়ে দোয়া করবে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩৫০, কিতাবুল কারাহিয়্যা)
কেউ চাইলে হাত না তুলেও মনে মনে দোয়া করতে পারবে।
কবরের পাশে কান্না করা : প্রিয় মানুষের কবরের পাশে গেলে মনের অজান্তে চোখে পানি চলে আসা স্বাভাবিক। তবে সেখানে গিয়ে হায়-হুতাশ করা ঠিক নয়। এই আশঙ্কার কারণেই নারীদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করা হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) তার আম্মাজানের কবর জিয়ারত করার জন্য গমন করেন। এ সময় রাসুল (সা.) কাঁদলেন এবং তার সঙ্গীরাও কাঁদল। এরপর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি আমার রবের কাছে, আমার মায়ের কবর জিয়ারত করতে চাইলে তিনি এর অনুমতি দিয়েছেন। কাজেই তোমরা কবর জিয়ারত করবে। কেননা তা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩২৩৪)
কবরের কাছে গিয়ে যা করা নিষিদ্ধ : কবরবাসীর কাছে কিছু কামনা করা, সালাত আদায় করা বা সিজদা করা, তার অসিলায় মুক্তি প্রার্থণা করা, সেখানে দান-সদকা ও মানত করা, গরু-ছাগল, মোরগ ইত্যাদি দেওয়া বা কোরবানি করা ইত্যাদি শিরকেরই অন্তর্ভুক্ত। তাই কোনো কবরকে ঘিরে এমনটি করা ঠিক নয়।