Logo
×

Follow Us

ধর্ম

ইসলামের বিধান ও মানবস্বভাব

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:৩৮

ইসলামের বিধান ও মানবস্বভাব

ইসলামের বিধানাবলির পরিপালন কঠিন কিছু নয়। কেননা এ বিধানাবলি মানুষের ‘ফিতরাত’ তথা সৃষ্টিগত প্রকৃতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ইসলামী শরিয়ত ও ফিতরাত (মানবস্বভাব) পরস্পর সামঞ্জস্যশীল। এর বিপরীত অনৈসলামিক আইনসমূহ হলো ‘তবিয়ত’ তথা চরিত্রের ওপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠিত। আর তবিয়ত ও আইন পরস্পর অসামঞ্জস্যশীল। কেননা আইন জবাবদিহি চায়, আর মানবচরিত্র স্বাধীনতা ও সুবিধা গ্রহণে অভ্যস্ত। এ জন্যই আইন ও স্বভাবের মধ্যে সার্বক্ষণিক যুদ্ধ ও পরস্পর মোকাবিলা লেগে থাকে। কিন্তু ইসলামী শরিয়ত এই ত্রুটি থেকে মুক্ত। কেননা শরিয়ত ফিতরাতের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল। ফিতরাত শরিয়তের বিরুদ্ধে দ্রোহ করে না; বরং শরিয়ত মোতাবেক আমল করার জন্য ফিতরাতটি ব্যক্তিসত্তার অভ্যন্তর থেকে সহযোগিতার কাজ করে।

এ জন্যই মিরাজের রজনীর বিবরণীতে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার কাছে বোরাক আনা হলো, আমি তাতে আরোহণ করে বাইতুল মাকদিস গিয়ে পৌঁছলাম। অতঃপর আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম এবং সেখানে দুই রাকাত নামাজ পড়লাম। অতঃপর সেখান থেকে বের হলে জিবরাঈল (আ.) আমার কাছে একটি পাত্রে মদ এবং অন্য পাত্রে দুধ এনে সামনে ধরলেন। আমি দুধের পাত্র গ্রহণ করলাম। ফলে জিবরাঈল (আ.) বলেন, আপনি ‘ফিতরাত’কে গ্রহণ করেছেন...।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৯)

ইসলাম সূক্ষ্ম মানবিক চাহিদা ও আকর্ষণের প্রতি যত্নবান

খাবার মানুষের স্বভাবজাত প্রয়োজন। তবে মানুষের স্বভাব চায় যে খাবার সুস্বাদু ও সুখাদ্য হোক এবং পানি মিষ্টি ও সুপেয় হোক। কেননা মানুষ প্রয়োজন পূরণের পাশাপাশি স্বভাবজাত আকর্ষণেরও পরিতৃপ্তি চায়। ইসলাম মানুষের স্বভাবজাত আগ্রহ ও আকর্ষণের প্রতিও পরিপূর্ণ লক্ষ্য রাখে। তাই খাদ্য ও পানীয় দ্রব্য থেকে শুধু উৎকৃষ্ট, সুস্বাদু ও পছন্দনীয়গুলোকেই হালাল করা হয়েছে। আর যেগুলো নিকৃষ্ট তা হারাম। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনে কারিমে রাসুল (সা.)-এর পরিচয় ও গুণাবলি উল্লেখপূর্বক বলেন, ‘তিনি তাদের জন্য উৎকৃষ্ট বস্তু হালাল করেন আর নিকৃষ্ট বস্তু হারাম করেন।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৫৭)

উক্ত আয়াতে ‘উৎকৃষ্ট’ শব্দের ব্যাখ্যায় ইমাম রাগেব আস্ফাাহানি (রহ.) লিখেন, এর অর্থ হলো প্রত্যেক ওই বস্তু যার দ্বারা মানুষের ইন্দ্রীয় ও সত্তা স্বাদ ও আনন্দ লাভ করে। (আল-মুফরাদাত ফি গরিবিল কোরআন, পৃষ্ঠা ৫২৭)

ইবনে কাসির (রহ.) লিখেন, ‘উৎকৃষ্ট বস্তু’ মানে এমন বস্তু, যা সত্তাগতভাবে উৎকৃষ্ট এবং শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিকর নয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ১/৩৭৮)

ইসলাম মানুষের স্বভাবজাত আগ্রহ ও আকর্ষণের প্রতিও পরিপূর্ণ লক্ষ্য রাখে। কেননা ‘উৎকৃষ্ট’ শুধু পবিত্র জিনিসকেই বলা হয় না; বরং স্বভাবজাত আকর্ষণীয় বস্তুও এর অন্তর্ভুক্ত, তদ্রুপ ‘নিকৃষ্ট’ শুধু নাপাক জিনিসকেই বলা হয় না; বরং স্বভাবজাত অপছন্দনীয় বস্তুও এর অন্তর্ভুক্ত।

অতীব প্রয়োজনে বিধানে সহজীকরণ

মানব জাতির প্রয়োজনীয়তাকে ইসলাম এ পরিমাণ মূল্যায়ন করেছে যে যখন ইসলামের বিধান ও মানুষের প্রয়োজনীয়তার মধ্যে সংঘর্ষ হয়, তখন ইসলাম মানুষের প্রয়োজনীয়তাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এ জন্যই যদি প্রাণ ওষ্ঠাগত অবস্থায় হালাল খাবার না পায়, তখন প্রয়োজন পরিমাণ হারাম খাওয়ারও অনুমতি রয়েছে। শুধু অনুমতিই নয়; বরং বাধ্যতামূলক নির্দেশ। কেননা খাবার শুধু স্বভাবগত প্রয়োজনই নয়; বরং ধর্মীয় প্রয়োজনও। তাই প্রয়োজন অবস্থায়ও না খেলে যেভাবে সে স্বভাবগত প্রয়োজনের গলা টিপে ধরল, তদ্রুপ ইসলামেরও বিরুদ্ধাচরণ করল। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শুকরের গোশত এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে জবাইকৃত প্রাণী। তবে যে নিরুপায় হয়ে, অবাধ্য বা সীমা লঙ্ঘনকারী না হয়ে (তা খাবে), তাহলে তার কোনো পাপ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭৩)

এভাবে ইসলাম বিধান ও মানবিক চাহিদার মধ্যে সখ্য গড়ে তুলেছে এবং মানুষের প্রয়োজনের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বিধান সহজ করে দিয়েছে।


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫