
রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত অনেক দামি। মুমিনের জন্য কল্যাণ ও বরকতের বসন্তকাল হচ্ছে রমজান। তাই একজন মুমিন রমজানের পুরো সময় কাজে লাগাতে পারে।
পুরো মাসের কয়েকটি গুরুত্বপর্ণ আমল হচ্ছে।
তাহাজ্জুদ ও দোয়া
সেহেরির আগে যথেষ্ট সময় নিয়ে ঘুম থেকে ওঠে ইবাদতে মশগুল থাকা বিভিন্ন ইবাদত করা যায়। এ সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে তাহাজ্জুদ। আল্লাহ তাআলা মুমিনের গুণাবলি উল্লেখ করে বলেন, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের রবকে আশা ও ভয় নিয়ে ডাকে এবং আমি তাদের যা দিই তা থেকে তারা ব্যয় করে।’ (সুরা সিজদাহ, আয়াত : ১৬)।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজান মাসের পর সর্বোত্তম মাস মহররম ও ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ তাহাজ্জুদ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ১১৬৩)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাতে নামাজ আদায় করবে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করা হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৩৭)
সেহেরি
সেহেরি করা সুন্নত। রাসুল (সা.) রোজাদারকে সাহরি করতে বলেছেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সাহরি করো। কেননা, সাহরিতে বরকত আছে। (সহিহ মুসলিম : ১০৯৫)। সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময়ে সাহরি করা মুস্তাহাব। তবে এত দেরি করা যাবে না যে সুবহে সাদেক হওয়ার আশঙ্কা হয়।
জামাতে নামাজ আদায়ে বহু গুণ সওয়াব
আজানের আগে থেকে মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হয়। বাসায় অজু করে মসজিদে যাবে। মসজিদে প্রথমে ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ দুই রাকাত নামাজ পড়া সুন্নত। মুয়াজ্জিন আজান দেয়ার আগ পর্যন্ত দোয়া, কোরআন তিলাওয়াত বা জিকির করার সুযোগ থাকে। আজানের সময় আজানের জবাব দেয়া সুন্নত। মুয়াজ্জিনের বাক্যগুলোর পুনরাবৃত্তি করাই আজানের জবাব। আজান শেষ হলে আজানের দোয়া পড়া সুন্নত। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, একাকী নামাজ আদায়ের চেয়ে জামাতে নামাজ আদায়ে সাতশ গুণ বেশি সওয়াব। (বুখারি, হাদিস নং : ৬৪৫)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘নামাজের অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তি নামাজে আছেন তথা নামাজে থাকার সওয়াব পাবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৬৪)
ইফতার করালে রাজার সওয়াব
রোজাদারের ইফতারের ব্যবস্থা করা অনেক বড় পুণ্যের কাজ। রমজান মাসের কারণে এর সওয়াব অনেক বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তাআলা জান্নাতিদের গুণাবলি বর্ণনা করেন, ‘খাবারের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও তারা অভাবী, এতিম ও বন্দিকে আহার করায়।’ (সুরা দাহর, আয়াত : ৮)। জায়েদ বিন খালেদ আল জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সেও অনুরূপ সওয়াব পাবে। রোজাদারের সওয়াব থেকে কোনো অংশ কমানো হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ৮০৭)
দানের বহু গুণ প্রতিদান
দান করা সব সময় পুণ্যের কাজ। আর রমজানে দানের সওয়াব অনেক গুণ বৃদ্ধি পায়। রাসুল (সা.) সবসময় বেশি দান করতেন। আর রমজানে দানের পরিমাণ আরো বেড়ে যেত। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। আর রমজান মাসে তা আরো বেড়ে যেত।
কোরআনের সুপারিশ
রমজান মাস কোরআন তিলাওয়াতের সময়। এ মাসে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, রোজা ও কোরআন মানুষের জন্য কেয়ামতের দিন সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘ হে আমার রব, আমি তাকে খাবার ও প্রবৃত্তি পূরণে বাধা দিয়েছি। তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। আল কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলা ঘুমাতে বাধা দিয়েছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। অতঃপর উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং : ৬৫৮৯)