
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সংবাদ সম্মেলন
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেছেন, এবার শ্যামাপূজায় দীপাবলি উৎসব বর্জন করা হয়েছে। তবে প্রতিমা পূজা করা হবে।
দুর্গাপূজার সময় বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ। শুক্রবার (২২ অক্টোবর) সকালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান নেতারা। নেতাদের অভিযোগ, হামলা ঠেকাতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যর্থ হয়েছে।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি জানান, ৪ নভেম্বর শ্যামাপূজায় দীপাবলির উৎসব বর্জন করা হবে, তবে প্রতিমাপূজার কর্মসূচি পালিত হবে। সেদিন কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে মন্দিরে নীরবতা পালন করা হবে।
শারদীয় দুর্গাপূজার সময় সারা দেশের পূজামণ্ডপে সাম্প্রদায়িক শক্তির হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে কিছু প্রশ্ন তুলে ধরেন নেতারা।
লিখিত বক্তব্যে নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেন, ১৩ অক্টোবর রাত ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে কিছু সময়ের জন্য কুমিল্লার নানুয়া দীঘিপাড়ের মণ্ডপ এলাকায় বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কী কারণে ওই সময় এমন হলো, তা তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে কি না। আরো বলেন, কোতোয়ালি থানার ওসি আনওয়ারুল আজিম হনুমান মূর্তির কোলের ওপর রাখা পবিত্র কোরআন শরিফটি সরিয়ে নেয়ার পরও কেন ভিডিও করার সুযোগ দিলেন, যা পরে ভাইরাল হয়েছে। এটা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আট দাবি-
১. ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির, বাড়িঘর সরকারি খরচে পুনর্নির্মাণ করে দেয়া, গৃহহীনদের দ্রুত পুনর্বাসন করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
২. নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৩. দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে প্রকৃত দোষীদের বিচারের পদক্ষেপ নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো ক্ষেত্রেই নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না।
৪. সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে এবং তদন্ত কমিশনের প্রকাশিত রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫. হিন্দুধর্মীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে, তা প্রতিবিধানে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য ও পূর্ণাঙ্গ শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি করা হয়েছে।
৬. ২০০১ সালের সাম্প্রদায়িক ঘটনাসমূহের ওপর তদন্ত সম্পর্কিত সাহাবউদ্দিন কমিশন রিপোর্টের পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৭. একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত সংখ্যালঘু ও ধর্মীয় নৃগোষ্ঠীর বিষয়ে দেয়া প্রতিশ্রুতি, সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রকৃত স্বত্বাধিকারীর কাছে ফেরত দেয়া, সংখ্যালঘু ও ধর্মীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্যমূলক আইনের অবসানসহ ইশতেহারের ৩.২৯ নম্বর অনুচ্ছেদে ঘোষিত অন্যান্য প্রতিশ্রুতিও সরকারের এই মেয়াদে বাস্তবায়ন করতে হবে।
৮. সংবিধানে বিরাজমান অসংগতি দূর করে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ১৯৭২-এর সংবিধান পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত। তিনি বলেন, প্রতিটি হামলার পর রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক দোষারোপ পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে দেয়। সব সরকারই নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়িত হয়নি বেশির ভাগই।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি কাজল দেবনাথসহ সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন পূজা উদ্যাপন পরিষদের উপদেষ্টা জয়ন্ত সেন, মহানগরের উদ্যাপন পরিষদের মহানগর কমিটির সভাপতি শৈলেন মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক কিশোর মণ্ডলসহ অন্যরা।