বন্ধুত্বের সম্পর্কটা জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। পার্থিব জীবনে মূলত সে-ই বেশি সুখী, যার ভালো বন্ধু আছে কিংবা ভালো বন্ধুর সংখ্যা বেশি। তাই আমাদের জীবনে যেমন চরিত্রবান বন্ধু প্রয়োজন, ঠিক তেমনি আমাদের ছেলে-মেয়েদের বিকাশের জন্যও প্রয়োজন সৎ ও চরিত্রবান বন্ধু নির্বাচন। ইসলাম এক্ষেত্রে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।

বন্ধুত্ব আমাদের একাকিত্বকে যেমন ভুলিয়ে দেয়, ঠিক তেমনি জীবনটাকেও আনন্দে পরিপূর্ণ করে। যেকোনো মানুষকে চেনা যায় তার বন্ধু কেমন তার মাধ্যমেই, বিপদে যে এগিয়ে আসে, দেখা হলে মহান আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, ভুলত্রুটি যে সংশোধন করে, সে-ই তো প্রকৃত বন্ধু।

যেমন বন্ধু বানাতে বলা হয়েছে

বন্ধুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আমাদের সব সময় প্রভাবিত করে। আমাদের যাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে এবং যাদের বর্জন করতে হবে, সে বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক এবং রাসুল (সা.) আমাদের পথ দেখিয়েছেন। এমনকি নিজের বাবা ও ভাই যদি অবিশ্বাসী হয়, তাহলে তাদের সঙ্গেও বন্ধুত্ব না রাখার আদেশ এসেছে।

এই মর্মে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজ পিতা ও ভাইদের অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ কোরো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরকে ভালোবাসে।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ২৩)

মানুষ তার চারপাশের পরিবেশ এবং বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়। তাই, তার হিসাব করে চলা জরুরি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর চিন্তা-চেতনার উপর (প্রভাবিত হয়ে) থাকে। সুতরাং তোমাদের লক্ষ রাখা উচিত, সে কার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে।’ (ইমাম আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৩৩; তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৮)

বনি ইসরাইলের এক লোক ৯৯টি খুন করেছিল এবং এরপর সে তাওবাহ করতে চেয়েছিল, তাকে সেসময়ের একজন আলিম উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘তুমি যে গ্রামে ছিলে তা একটি মন্দ গ্রাম। সেখান থেকে তুমি বের হয়ে অমুক উত্তম গ্রামের দিকে চলে যাও। ওই গ্রামে এমন কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর ইবাদত করে। সুতরাং সেখানে গিয়ে তাদের সাথে তুমি তোমার রবের ইবাদত করো। আর তুমি তোমার দেশে ফিরে এসো না। কেননা সেটি মন্দ এলাকা।’ (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৭০৬৬; সিলসিলা সহিহাহ, হাদিস : ২৬৪০; সহিহুত তারগিব: ৩১৫১)

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেছেন, ‘তুমি (প্রকৃত) মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হবে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৩২ তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৫)