
ইবাদত। ছবি: সংগৃহীত
দুনিয়া আখিরাতের শস্যক্ষেত্র। দুনিয়ার সব ভালোমন্দ কাজের হিসাব দিতে হবে আখিরাত।আখিরাতে ধন সম্পদ, সৌন্দর্য্য, ক্ষমতা কিছুই কাজে আসবেনা। দুনিয়ার আমলের উপর ভিত্তি করে সবাইকে তার প্রাপ্য বিচার প্রদান করা হবে।
আল্লাহকে ভয় করে, আখিরাতে শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পেতে আমরা আল্লাহর ইবাদত করি। কিন্তু অর্জিত পুণ্য কিছু কারণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে অনেকে অজ্ঞাত। আমল বিনষ্টকারী কিছু বিষয় হলো-
১. রিয়া বা লৌকিকতা: আমল হতে হবে আল্লাহর জন্য। মানুষকে দেখানোর জন্য নয়। কেউ মানুষকে দেখানোর জন্য আমল-ইবাদত করলে তা নিষ্ফল হয়। তাই আমল হতে হবে একনিষ্ঠভাবে। লৌকিকতাপূর্ণ আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। মাহমুদ ইবনে লাবিদ (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের ওপর যা ভয় করি তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে শিরকে আসগর (ছোট শিরক)। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল, শিরকে আসগর কী? তিনি বলেন, রিয়া (লোক-দেখানো আমল), আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তাদের (রিয়াকারীদের) বলবেন, যখন মানুষকে তাদের আমলের বিনিময় দেওয়া হবে তোমরা তাদের কাছে যাও, যাদের তোমরা দুনিয়ায় দেখাতে, দেখো তাদের কাছে কোনো প্রতিদান পাও কি না’ (মুসনাদে আহমাদ: ২৩৬৩৬)।
২. গোপনে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া: আল্লাহ যেসব কাজ হারাম করেছেন, তা থেকে বেঁচে থাকা একজন মুমিনের একান্ত কর্তব্য। পাহাড়সম আমল করার পর কেউ যদি একান্ত গোপনে হারাম কাজে লিপ্ত হয়, তাহলে তার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত-নবী (সা.) বলেছেন, আমি আমার উম্মতের একদল সম্পর্কে অবশ্যই জানি, যারা কেয়ামতের দিন তিহামার শুভ্র পর্বতমালার সমতুল্য নেক আমলসহ উপস্থিত হবে। মহামহিম আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন। সাওবান (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের কাছে বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বলেন, তারা তোমাদেরই ভ্রাতৃগোষ্ঠী এবং তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতো ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক যে একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত বিষয়ে লিপ্ত হবে। (ইবনে মাজাহ: ৪২৪৫)
৩. শখ করে কুকুর পোষা: ঘরে বা অফিসে শখ করে কুকুর পোষা, মানুষের চেয়ে কুকুরের যত্ন বেশি নেওয়া, এমনকি কুকুরের সঙ্গে মানবীয় সম্পর্ক স্থাপন করা ইসলামে নিষিদ্ধ। এর মাধ্যমেও নিজেদের কৃত আমল নষ্ট হয়। সাহাবি ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শিকার করা বা গবাদিপশু পাহারা অথবা শস্যক্ষেত পাহারা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ছাড়া কুকুর লালন-পালন করে, প্রতিদিন ওই ব্যক্তির দুই কিরাত পরিমাণ নেকি হ্রাস পায়’ (তিরমিজি: ১৪৮৭)। অর্থাৎ বাড়ি পাহারা, নিরাপত্তা, শিকার ইত্যাদি কারণে কুকুর পোষা যাবে। শখ করে নয়।
৪. আল্লাহর নামে মিথ্যা শপথ করা: আল্লাহর নামে মিথ্যা শপথ করা মারাত্মক গুনাহ। এই মিথ্যা শপথে বান্দার আমল বিনষ্ট হয় এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি তার ওপর বর্ষিত হয়। জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি বলল, আল্লাহর শপথ! আল্লাহ অমুক লোককে মাফ করবেন না। আর আল্লাহ তায়ালা বলেন, ওই ব্যক্তি কে? যে শপথ খেয়ে বলে যে আমি অমুককে মাফ করব না? আমি তাকে মাফ করে দিলাম এবং তোমার শপথ নষ্ট করে দিলাম। (মুসলিম: ৬৫৭৫)
৫. বিদাতের প্রচার-প্রসার: ইসলাম ধর্মে নতুন কিছু প্রবর্তন করা নিষিদ্ধ। যে ব্যক্তি তা করবে, এর দায় তাকেই বহন করতে হবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনে (ইসলাম ধর্মে) কোনো নতুন কিছু সৃষ্টি করে, যা (যার ভিত্তি) তার মধ্যে নেই তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য’ (বুখারি: ২৬৯৭)। সুতরাং আল্লাহর কাছে নিজেদের আমল গ্রহণযোগ্য করতে বিদাতি কর্মকাণ্ড থেকে বেঁচে থাকার বিকল্প নেই।
৬. মুরতাদ বা ঈমান ত্যাগকারী হওয়া: আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আনার পর তাঁকে অস্বীকার করা এবং কুফরির জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখাকে মুরতাদ বা ঈমান ত্যাগকারী বলা হয়। শরিয়তে ঈমান ত্যাগকারীর ইহলৌকিক ও পারলৌকিক অনেক শাস্তির কথা বলা হয়েছে। পার্থিব শাস্তির একটি দিক হলো যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে যাওয়া। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা নিজের দ্বীন থেকে ফিরে যাবে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর তারাই হলো দোজখবাসী। তাতে তারা চিরকাল বাস করবে’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৭)। মহান আল্লাহ আমাদের আমল বিনষ্টকারী এসব কাজ থেকে বেঁচে থাকার তওফিক দান করুন।