
কাজী তাহারিম তামান্না
ঈদ মানে আনন্দ ও উৎসব। একই সঙ্গে ধনী-দরিদ্র সকলের জন্য একটি মাস সিয়াম সাধনার পর, উৎসব উদযাপনের সবচেয়ে বড় আনন্দদায়ক দিন। এদিনে প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলিম তার প্রতিবেশী থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন, পরিবার-পরিজন সকলের সঙ্গে মিলে ঈদ পালন করে।
ঈদের দিনে বাড়ির বড়রা যখন অতিথিদের আপ্যায়নে ব্যস্ত থাকেন, তখন কিন্তু বাড়ির ছোটরাও কম যায় না। ওরাও ব্যস্ত থাকে বড়দের মতো। কেউ ব্যস্ত সাজতে, কেউ ব্যস্ত মা-বাবাকে কাজে সাহায্য করতে, কেউবা তার বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে ব্যস্ত, কেউ ব্যস্ত বড়দের সালাম করে সালামি নিতে, আবার কেউ ব্যস্ত তারই মতো একজন গরিব শিশুর পাশে দাঁড়িয়ে তাকে আপ্যায়ন করতে- এসবের মূল কথা হলো আনন্দ ভাগ করে নেওয়া। ছোটরা ভাবতে পারে বড়দের মতো, ছোটদের ভাবনায় থাকে আবেগ এবং সত্য, যা তাদের চোখে ধরা পড়ে, ছোটরা তা-ই বলে। এবারের ঈদ সংখ্যায় ছোটরাই ঈদ নিয়ে কথা বলেছে, লিখেছে-প্রকাশ করেছে নিজের ঈদের আনন্দ-অনুভূতি। গ্রন্থনা ও সম্পাদনা- এহসান হায়দার।
ঈদের খুশি সবার জন্য
কাজী তাহারিম তামান্না
মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
শ্রেণি : নবম, শিফট : প্রভাতী
ঈদ আসছে ভাবতেই ভালো লাগছে। একটি-দুটি করে দিন গুনছি। কবে আসবে সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটি। ছোট বেলায় ঈদ মানেই নতুন জামা, নতুন জুতা, হাতে মেহেদি দেয়া আর বেড়াতে যাওয়া। সেসব এখনো আছে; কিন্তু এখন একটু বড় হয়েছি, বুঝতে শিখেছি ঈদের আনন্দ অনেক বড় কিছু। ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হয়। এক মাস সিয়াম সাধনার পর, আত্মত্যাগের আনন্দই হচ্ছে ঈদ। আমি ছাদে উঠে ঈদের চাঁদ দেখার আনন্দটা খুব উপভোগ করি। এবারও দেখবো। দূর আকাশে এক ফালি চাঁদ। সেই চাঁদ দেখার জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে অনেকে, তারপর এক ঝলক দেখা গেলেই আনন্দ হাসিতে ভরে যায় সবার মুখ। ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক, ধ্বনি উঠতে থাকে চারদিক থেকে। আলো ঝলমল, আলোক-সজ্জিত হয় শহরময়। এসব দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। আমরা কখনো ঈদ উপলক্ষে মামা বাড়িতে যাই। সেটা গ্রামে। গ্রামে ঈদের আনন্দ অন্যরকম। সবাই সবার বাড়িতে যায়। সেমাই পায়েস খেয়ে মিষ্টি মুখ করে। বড়দের সালাম করে ঈদ সালামি পাওয়া যায়। সেই সালামির টাকা নিয়ে আমরা ছোটরা দল বেঁধে মেলায় যাই সবার সঙ্গে। নাগর দোলায় চড়ি। অন্য রকম আনন্দ হয়। শহরে এসব করতে পারি না। এবার ঈদের দিন আমরা ঢাকাতে থাকব। বাসায় দাদির সঙ্গে সবাই মিলে ঈদের নামাজ পড়ব। আমাদের ফ্ল্যাট-বাড়ির প্রতিবেশীদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবো। আর মোবাইলে বন্ধুদের ঈদের শুভেচ্ছা জানাবো এবং বাড়ির সবার সঙ্গে আম্মুর হাতের মজার মজার খাবার খাবো। দেখতে দেখতে ঈদের দিনটি ফুরিয়ে যাবে; কিন্তু সেই আনন্দের রেশ থাকবে অনেক দিন। সবাইকে ঈদ মোবারক।
আমার ঈদ
নূরজাহান মৌটুসী
ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল, ঢাকা
পঞ্চম শ্রেণি
ঈদ শব্দটি শুনলেই মনের মধ্যে এক আনন্দদায়ক অনুভূতি জেগে ওঠে। বছর ঘুরে এক বিশেষ দিনে নতুন পোশাক-আশাক, রঙ-রূপে নিজেকে সাজিয়ে তোলাই আমার ঈদ। সঙ্গে সঙ্গে ঘর সাজানো, সেমাই-মিষ্টি খাওয়া, বেড়ানো ঈদের আনন্দের একটি বড় অংশ। তাছাড়া লাল-নীল কাগজে তৈরি উপহার আর কার্ড বানিয়ে স্কুলের বন্ধুদের ঈদের শুভেচ্ছা জানাতেও আমি খুব ভালোবাসি। বিশ্বজুড়ে মহামারির কারণে কয়েকটি ঈদ বাড়ি বন্দি কাটলেও ঈদের আনন্দ ফিকে হয়ে যায়নি। বাড়িতে খেলাধুলা করে, নতুন জামা পরে ঈদ বেশ কেটেছে।
তবে এর সঙ্গেই আছে এক দুঃখের অনুভূতি। যাদের প্রিয় মানুষগুলো পৃথিবী ত্যাগ করেছেন, তাদের কাছে ঈদ শোকাবহ। আবার আমার মতো ছোটরা, যাদের মাথা গোঁজার এতটুকু ঠাঁই নেই, পরবার মতোন এক চিলতে কাপড় নেই-তাদেরকে ঈদ বিশেষ কিছুই দিতে পারে না। যারা আত্মীয়-পরিজন ছেড়ে বহুদূরে ঈদ কাটান তাদের কাছে হয়তো ঈদ আনন্দ সুখ নয় বরং শোক, বিরহ-বেদনাই নিয়ে আসে। সব মিলিয়ে ঈদ আমার কাছে দুঃখের মাঝে সুখের অনুভূতি। এবারের ঈদ সবার জন্য আনন্দদায়ক ও মঙ্গলজনক হোক এটিই আমার একান্ত কামনা।
দেশের সবাইকে ঈদ মোবারক
আয়মান আহমদ চৌধুরী
নর্থইস্ট হাইস্কুল, ব্রায়ার স্ট্রিট
ফিলাডেলফিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
দেশ থেকে আসার পর দুইবার ঈদ পেলাম। রমজানের ঈদ তবুও বোঝা যায়, রোজা রাখতে রাখতে ঈদ আসে। কোরবানির ঈদ-তো... কেউ না বললে বোঝার উপায় নাই। আর বুঝেই বা কী লাভ! এখানে তো তেমন কেউ নেই, একজন খালা আর দাদার ঘর ছাড়া তেমন কাউকে চিনিও না। আর চিনলেও ঈদে যাওয়া যায়- সেই রকম পরিচয় হয়নি। এই ঈদের দিনে বেশি মিস করি দাদা-দাদুকে। তাদেরকে ছাড়া ঈদ করতে হচ্ছে এটা মানা যায় না। তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারি না, আবার আমি কাঁদতেও পারি না, তাদের কষ্ট হবে ভেবে। ঈদ ভেবে সারাদিন কিচ্ছু করা হয় না, তেমন কাউকে চিনি না তো। দেশে থাকলে অনেকের ঘরেই যাওয়া হতো। আত্মীয়-স্বজন ছিল অনেক। বন্ধুদের ঘরেও যাওয়া যেত, ঈদি পেতাম, অনেক বেশি টাকা জমতো, এখানে ডলার জমে, তবে পরিচিত কম হওয়াতে ডলার বেশি জমে না। এবারের ঈদ হয়তো আগের চেয়ে একটু ভালো হবে। কারণ আমার বড় খালা আমাদের এখানে বেড়াতে এসেছেন। তবে দাদা-দাদুকে নিয়ে দেশের আনন্দ এখানে কোনো দিনই হবে না। দেশের সবাইকে ঈদ মোবারক।
ঈদ আমার ভীষণ আনন্দের দিন
রোজা ফিরোজ
জোহরা খাতুন শিশু বিদ্যানিকেতন, খুলনা
শ্রেণি : প্লে-গ্রুপ
শাখা : সি
ঈদের দিনের ভোরে আমি ঘুম থেকে উঠে আব্বু আম্মুকে ঈদ মোবারক বলে দিনটা শুরু করব। তারপর ফ্রেশ হয়ে, গোসল করে নতুন জামা পরে সুন্দর করে সেজে বড়দের সালাম করে তাদের দোয়া নেবো। এরপর আব্বু-আম্মুর সঙ্গে আত্মীয় স্বজনদের নতুন জামা কাপড় দেবো। এবার ঈদের মাঠে ঘুরতে যাব। আব্বু নামাজ পড়ে বের হলে, আব্বুর সঙ্গে অনেক ছবি তুলবো। আব্বু-আম্মু, দাদা-দাদি, ফুফা-ফুফি, ভাইয়া-ভাবি, আপু-দুলাভাই সবাইকে নিয়ে ছবি তুলব, অনেক মজা করব। তারপর সেমাই, ফিরনি, পায়েশ, খিচুড়ি খেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াবো এবাড়ি-ওবাড়ি। আরও একটা কাজ করব, আমাদের প্রতিবেশী যারা আছে- তাদেরও দাওয়াত করবো ঈদের দিনে খাওয়ার জন্য। আমি খুব আনন্দ করবো, আর এই দিন তো ছুটি তাই পড়ালেখা একদম থাকবে না। সবমিলিয়ে ঈদ আমার ভীষণ আনন্দের দিন।
ঈদ মানেই আনন্দ, খুশির মেলা
তানভীর হোসেন নীল
মির্জাপুর সরকারি এসকে পাইলট উচ্চবিদ্যালয়
৮ম শ্রেণি, টাঙ্গাইল
ঈদ মুসলমান ধর্মের একটি পবিত্র দিন। ঈদ মানেই আনন্দ, খুশির মেলা। তাই ঈদ আমার কাছে খুশির দিন, আনন্দের দিন। এই ঈদ বছরে দু’বার আসে। দুটি ঈদ-ই আমি খুব আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করি। একটি ঈদুল ফিতর, অপরটি ঈদুল-আযহা। রোজা শেষে সাওয়াল মাসের প্রথম দিন ঈদুল ফিতর পালন করা হয়। আমি ঈদের আগে থেকেই আমার নতুন জামা-কাপড়, পাঞ্জাবি-পাজামা কিনি। আবার আমি বিভিন্ন পটকা কিনি যেমন : আতশবাজি, চকলেট বোম। বেশিরভাগ ঈদ-ই দাদুবাড়িতে কাটানো হয়। তবে মাঝে মাঝে বাবার কাজের ব্যস্ততায় গ্রামে ঈদ পালন করতে যাওয়া হয় না। ঈদের আগের দিন আমি বন্ধুবান্ধব নিয়ে অনেক কিছু প্ল্যান পরিকল্পনা করি। যেমন : কোথায় ঘুরতে যাব, কী কী করব নানান কিছু। আম্মু সকালে সেমাই-পায়েস, পোলাও, কোর্মাসহ আরও অনেক খাবার রান্না করে। তারপর পাঞ্জাবি-পাজামা পরে আব্বু ও ভাইয়ার সঙ্গে জামায়াতে নামাজ আদায় করি। এরপর সকলে সকলের শত্রুতা ভুলে গিয়ে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে বুকের সঙ্গে বুক মিলিয়ে কোলাকুলি করি। আমি আমার বন্ধুবান্ধবকে ঈদের দিন দাওয়াত দিয়ে খাওয়াই। আম্মু-আব্বু ভাইয়া, চাচা-চাচি সকলেই আমাকে সালামি দেন। এরপর চাচাতো ভাই-বোন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ঘুরতে যাই। সন্ধ্যা বা রাতে আমরা সকলে মিলে গল্প করি ও বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করি। সব মিলিয়ে আমার এই দিনটি খুব আনন্দের সঙ্গে কাটে। তাই আসছে ঈদে আমি খুবই উত্তেজিত। সকলের জন্য ঈদ হোক আনন্দের। ঈদের সওয়াব বর্ষিত হোক সকলের ওপর আমি এ কামনা করি।
আনন্দ থাকবে যতদিন পৃথিবীতে শিশুরা আছে
মায়িশা ফাহমিদা বিনতে জাহাঙ্গীর
ভারতেশ্বরী হোমস্, মির্জাপুর, টাঙ্গাইল
শ্রেণি : নবম, বিভাগ : বিজ্ঞান
শাখা : ক
বছর ঘুরে এক মাস সাওম ব্রত পালনের পরে আসে ঈদ। ঈদ শব্দের অর্থ যে উৎসব তা বোধ হয় সবচেয়ে বেশি অনুভব ও উপলব্ধি করি আমরা শিশুরা। ঈদের দিনের নতুন জামা-জুতো, চাঁদরাতে সব ভাই-বোন মিলে চাঁদ দেখা, মেহেদী দেওয়া আরও কত কী! প্রতিটি বাড়িতে যেন খুশির ফোয়ারা। ঈদের জামা-জুতো কেনার পর ঈদের আগের দিন পর্যন্ত কাউকে না দেখানো। আগের দিন রাতে নতুন জিনিসের ঘ্রাণ নেওয়া, এমন সব মধুর স্মৃতিই ভেসে ওঠে ঈদের কথা শুনলে। চাঁদরাতে সব বোনেরা এক হয়ে জমজমাট ভাবে চলে মেহেদি দেওয়া। কার হাতে মেহেদির রঙ কত গাঢ় তা নিয়ে প্রতিযোগিতাও চলে বেশ। আর সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামের ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’- এই গান না শুনলে মনেই হয় না যে ঈদ এসে গেছে। ভোরে উঠে শ্যাম্পু-সাবান দিয়ে গোসল করে নতুন জামা কাপড় পরেই শুরু হয় সালাম করা ও সালামি নেওয়ার পালা। গ্রামের বাড়িতে সব আত্মীয় এক হয়ে চলে খাওয়া-দাওয়ার আরেক উৎসব। ফিরনি, সেমাই আর মলিদা না খেলে ঈদটাই যেন অসম্পূর্ণ থাকে। বাড়ির সব ছেলে একত্র হয়ে যখন ঈদগাহে যায় তখনও আমরা (মেয়েরা) সাজতে ব্যস্ত। এমনই মধুর কাটে আমার মতো শিশুদের ঈদ। তবে ইদানিং ঈদের আনন্দ আছে ঠিকই; কিন্তু তা আর নির্ভেজাল নয়। ঈদের দিন বাবা-মা, ভাই-বোনের সঙ্গে আনন্দ করলেও আত্মীয় স্বজনকে একটি মেসেজ দিয়েই ঈদের শুভেচ্ছা জানানো শেষ হচ্ছে। পরদিন সব ভাই-বোনদের সঙ্গে সালামি নিয়ে আলোচনা না করে ‘এ প্লাসের’ চোখ রাঙানির ভয়ে পড়তে বসছি, মন অন্য কোথাও রেখে। ঈদ মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব, তবুও কেন সব শিশুর নতুন জামা নেই তা নিয়ে ভাবতে শিখছি ঈদ থেকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঈদ যেন পরিবর্তিত হচ্ছে একটু করে, বদলাচ্ছে আমাদের চিন্তাধারা। সকলকিছুর পরও ঈদ মানে আজও খুশি, তাই আনন্দ থাকবে যতদিন পৃথিবীতে শিশুরা আছে। সেই খুশিকে ছড়িয়ে দিতে চাই সবার মাঝে।
ঈদ মানে সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়া
আসমীর হাসান কাইফা
ভারতেশ্বরী হোমস্, মির্জাপুর, টাঙ্গাইল
দশম শ্রেণি, বিজ্ঞান শাখা
আমার কাছে ঈদ মানে প্রচুর হৈ চৈ, মিলন, সব ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে কাছে টেনে নেওয়া। বড়দের থেকে সালামি পাওয়া, দল বেঁধে ভাই-বোনদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া। এক কথায় ঈদ হচ্ছে একটি বিশেষ দিন, যে দিনটির প্রতিটা পলকে থাকে আনন্দের ছোঁয়া। আর এই ঈদের আনন্দগুলোকে আরও বেশি করে জমিয়ে দেয় রোজা, রমজান মাস। রোজার বা রমজানের ১ মাস হলো সংযম এর মাস। আমরা এই রমজান মাসে গরিবদের জন্য ইফতার বিতরণ করি। সেই সঙ্গে ঈদে পথ শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে কিছু খাবার বা জামাকাপড় আমাদের সাধ্যমতো দিয়ে থাকি। সারাবছর আমরা সবাই অপেক্ষায় থাকি রমজান মাসের জন্য। সারাদিন সংযমের মধ্যে থাকার পর যখন সাজানো খাবারগুলো দেখি খুবই অন্যরকম অনুভূতি হয় তখন। রোজার মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়টি হলো ঈদের বাজার করা। আমরা ঈদের সাত দিন আগে থেকে ঈদের বাজার শুরু করি। ইফতারি করেই আমরা বেরিয়ে পড়ি। আজ আমার তো কাল ভাইয়ের জামা, জুতা আরও কত কী! এভাবে কেটে যায় এক সপ্তাহ। প্রতি বছর ঈদের ৩-৪ দিন আগে গ্রামে দাদা-দাদিদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গ্রামে যাই। এই সময় অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয়-স্বজনরা আসে। এরপর আসে চাঁদ রাত বা ঈদের আগের রাত। এই রাতে আমরা সবাই আনন্দ নিয়ে চাঁদ খুঁজে বেড়াই। চাঁদ দেখার পর সব বোনেরা মিলে হাতে মেহেদি পরি এবং গ্রামের ছোট বাচ্চাদেরও পরিয়ে দিই। আর কত রকমের যে গল্প করি। এ এক অন্যরকম আনন্দ।
তারপর আমাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আসে খুশির ঈদ। ‘ঈদুল ফিতর’ খুশির এই দিনে সকাল থেকে শুরু হয় আমাদের ব্যস্ততা। আমরা সব ভাই-বোনেরা ঈদের দিন খুব সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠি। তরপর গোসল করে নতুন জামা পরি। এরপর ভাইয়েরা যায় বড়দের সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়তে এবং আমরা বোনেরা সেই সময় বসি সাজতে। সবাই নামাজ পড়ে আসার পর এক সঙ্গে খেতে বসি মজার মজার সব খাবার। ঈদের দিনের বিশেষ খাবার নিমকি, পায়েস, সেমাই, মিষ্টি, রুটি হালুয়া। খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ করে আমরা যাই বড়দের কাছ থেকে দোয়া এবং সালামি নিতে। তারপর খানিকক্ষণ চলে ছবি তোলার পর্ব। এই দিনে বাড়ির বড়রাও যেন শিশু হয়ে যায়। এরপর সারাদিনটি কাটে হৈ চৈ করে এবং আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ঘুরে বেড়াতেই। আমার কাছে ঈদ মানে সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়া। সবার মাঝে খুশি বিলিয়ে দেওয়া। আল্লাহর কাছে সবার জন্য দোয়া করা।