
রাসেলস ভাইপার। ছবি: সংগৃহীত
আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে মানুষ ও জিনসহ অসংখ্য জীব-জন্তু সৃষ্টি করেছেন। কিছু প্রাণী স্বাভাবিক হলেও কিছু রহস্যময়। পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে,
رَبُّنَا الَّذِیۡۤ اَعۡطٰی كُلَّ شَیۡءٍ خَلۡقَهٗ ثُمَّ هَدٰی
অর্থ: ‘আমাদের প্রভু তিনি, যিনি প্রতিটি জিনিসকে তার আকার (গঠন ও অবয়ব) দিয়েছেন এবং তারপর একে সঠিক পথ প্রদর্শন করেছেন।’ (সূরা ত্বহা, আয়াত: ৫০)
আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য রহস্যময় সৃষ্টির মধ্যে সাপ অন্যতম। এই প্রাণীটির আকৃতি ও চলার ধরন মানুষকে ভীত করে তোলে। সাধারণত মানুষ সাপ দেখলেই তা মেরে ফেলার চেষ্টা করে, কিন্তু সাপ দেখলেই আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকা জরুরি। সাপের দ্বারা ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে তা মারতে বাধা নেই। তবে সাপ মারার আগে নিশ্চিত হওয়া উচিত যে, ওই সাপ আমাদের ক্ষতি করবে কি না। এ বিষয়ে হাদিসে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কোনো সাপ মারার আগে তাকে তিনবার সতর্ক করবে। এরপরও যদি সে (গর্ত থেকে) বের হয়, তখন তাকে মেরে ফেলবে। কেননা সে শয়তান।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৫১৬৮)
আরেক হাদিসে হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মদিনায় একদল জিন রয়েছে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে। যে ব্যক্তি কোনো বাড়িতে সাপ দেখতে পায়, সে যেন তাকে তিনবার সতর্ক সংকেত দেয় এরপরও যদি সে দেখা দেয়, তবে তাকে মেরে ফেলবে। কেননা সে অবাধ্য শয়তান। (মুসলিম, হাদিস: ৫৬৪৬)
হজরত সালিম (রহ.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সেই সাপ মারবে, যার পিঠে দুইটি সাদা রেখা আছে এবং যার লেজ নেই। এরা বিষধর হয়ে দর্শনশক্তি বিনষ্ট করে এবং গর্ভস্থ সন্তান ধ্বংস করে দেয়।’ বর্ণনাকারী বলেন, এরপর থেকে আবদুল্লাহ (রা.) যেকোনো সাপ দেখলে তা মেরে ফেলতেন। একবার আবু লুবাবা (রা.) অথবা জায়েদ ইবনে খাওয়াব (রা.) তাকে একটি সাপ মারতে উদ্যত দেখে বললেন, নবীজি (সা.) ঘরে বসবাসকারী সাপ মারতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ৫১৬২)
অনেক সময় নেককার জিনরা সাপের রূপ ধারণ করে। হজরত ইয়াজিদ ইবনে মাওহাব (রহ.) আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, একদা আমি আবু সাঈদ খুদরি (রা.)-এর কাছে বসে ছিলাম। এ সময় তার চৌকির নিচে কিছুর আওয়াজ শুনে দেখি একটি সাপ। তখন আমি দাঁড়ালে আবু সাঈদ (রা.) জিজ্ঞেস করেন, তোমার কী হয়েছে? আমি বললাম, এখানে একটা সাপ আছে। তিনি বলেন, তুমি কী করতে চাও? আমি বললাম, আমি তাকে মেরে ফেলব। তখন তিনি বলেন, এখানে আমার চাচাতো ভাই থাকত। খন্দকের যুদ্ধে সে রাসুল (সা.)-এর কাছ থেকে ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুমতি চায়। রাসুল (সা.) তাকে অনুমতি দেন এবং বলেন, ‘তুমি তোমার অস্ত্র নিয়ে যাও।’ সে ঘরে ফিরে তার স্ত্রীকে দরজার ওপর দাঁড়িয়ে দেখতে পায় এবং বল্লম দিয়ে ইশারা করে। তার স্ত্রী বলে, তাড়াহুড়ো করো না। ঘরে ঢুকে সে একটি কুৎসিত সাপ দেখে, তাকে বল্লম দিয়ে হত্যা করে এবং বল্লমে তার দেহ ফুঁড়ে বাইরে নিয়ে আসে।
বর্ণনাকারী বলেন, আমি জানি না এরপর কে আগে মারা গিয়েছিল লোকটি না সাপটি। তার জাতির লোকেরা রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে তার জন্য দোয়া করতে বলে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা তার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করো।’
তিনি আরও বলেন, ‘মদিনার এক দল জিন ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাই তোমরা যখন তাদের কাউকে দেখবে, তখন তাকে তিনবার ভীতি প্রদর্শন করবে যে আর বের হবে না, অন্যথায় মারা পড়বে। এরপর যদি সে (গর্ত থেকে) বের হয়, তখন তাকে মেরে ফেলবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৫১৬৭)