শুক্রবার মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই ছয় দিনের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুসলমানদের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন। (ইবনে মাজা: ১০৯৮)।
একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘উম্মতে মুহাম্মদির জন্য এটি একটি মহান দিন। জুমার দিনটিকে সম্মান করার জন্য ইহুদি-নাসারাদেরকে বলা হয়েছিল, কিন্তু তারা মতবিরোধ করে এই দিনটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। অতঃপর ইহুদিরা শনিবারকে আর খ্রিস্টানরা রবিবারকে তাদের ইবাদতের দিন বানিয়েছিল। অবশেষে আল্লাহ এ উম্মতের জন্য শুক্রবারকে ফজিলতের দিন হিসেবে দান করেছেন। আর উম্মতে মুহাম্মদি তা গ্রহণ করে নিয়েছে।’ (বুখারি : ৮৭৬; মুসলিম : ৮৫৫)। এদিনের অনেক ফজিলত ও আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে বিভিন্ন হাদিসে। মুসলমানদের কর্তব্য, এ দিনের পবিত্রতা রক্ষা করা।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, জুমার দিনে বিশেষ এক প্রকার ফেরেশতা বিশেষ রেজিস্টার খাতা নিয়ে মসজিদের প্রতিটি দরজায় দাঁড়িয়ে যান। তাঁরা মসজিদে আগমনকারী মুসল্লিদের নাম পর্যায়ক্রমে লিপিবদ্ধ করতে থাকেন। অতঃপর যখন ইমাম সাহেব এসে যান, তখন তারা রেজিস্টার বন্ধ করে খুতবা শুনতে থাকেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, অতঃপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তারপর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, সে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, চুপ করে মনোযোগ সহকারে তাঁর খুতবা শুনবে- দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (আবু দাউদ : ৪৭৯)
জুমাবারের ফজিলতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো, এই দিনে এমন একটা সময় আছে, যখন মুমিন বান্দা কোনো দোয়া করলে মহান আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনে একটা এমন সময় আছে, যে সময়ে কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু প্রার্থনা করলে অবশ্যই আল্লাহ তাঁকে তা দান করবেন। (মুসলিম : ৮৫২)। জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সে মহামূল্যবান সময় কোনটা? এ সম্পর্কে একাধিক মতামত পাওয়া যায়। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময় দোয়া কবুলের সময়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনের কাঙ্ক্ষিত সময়টা হলো আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। (তিরমিজি : ৪৮৯)
জুমা নামাজ আদায় করতে যাওয়ার সময় প্রতি কদমে এক বছরের নেকি লাভ হয়। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি জুমার দিনে উত্তমরূপে গোসল করে আগে আগে মসজিদে যায় এবং বাহনে না চড়ে হেঁটে যায়। ইমামের কাছাকাছি বসে মনোযোগ দিয়ে ইমামের আলোচনা শোনে, অনর্থক কাজ না করে, তবে তার প্রতি কদমের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা এক বছর সিয়াম ও কিয়ামের সওয়াব দান করেন (তিরমিজি : ৪৫৬)। এ দিনের অন্যতম একটি আমল হচ্ছে সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা। আগেভাগে মসজিদে গিয়ে এটি তেলাওয়াত করা যায়।
রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য দুই জুমা পর্যন্ত নূর উজ্জ্বল করা হবে (আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইল : ৯৫২)। এ দিনের আরেকটি আমল হচ্ছে নবীজির (সা.) ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। এই মর্মে রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা এই দিনে আমার ওপর অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করো। কেননা তোমাদের দরুদ আমার সম্মুখে পেশ করা হয়ে থাকে। (আবু দাউদ : ১০৪৭)
জুমার দিন মসজিদে এসে জিকির, তেলাওয়াত ও ইবাদত ভিন্ন অপ্রয়োজনীয় অন্য কোনো কথা না বলাও সওয়াবের কাজ। আর কথা বলা, গল্প-গুজবে মেতে ওঠা অপছন্দনীয় কাজ। নবীজি (সা.) বলেছেন, জুমার নামাজের খুতবার সময় তুমি যদি তোমার সাথীকে চুপ থাকতে বলো, তবে এটাও তোমার অনর্থক কাজ হবে (বুখারি : ৯০৬)
অলসতাবশত কিছু মানুষ এ দিনেও নামাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ আমল ছেড়ে দেয়। হাদিসে এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) এক দিন মিম্বরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কঠোর ভাষায় বলেছেন, কোনো মুসলমান যেন জুমার নামাজ ত্যাগ না করে। অন্যথায় আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর এঁটে দেবেন, এরপর তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (মুসলিম : ৮৬৫)
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh