সাম্য ও সম্প্রীতির ঈদুল ফিতর সমাগত

মহিমান্বিত মাস শেষের পথে। সামনে ঈদুল ফিতর। যারা মাহে রমজানকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পেরেছেন, তাদের জন্য খুশির বার্তা নিয়ে আসে ঈদ। মুসলিম মিল্লাতের বার্ষিক প্রধান দুটি আনন্দ উৎসবের একটি ঈদুল ফিতর। ঈদ অর্থ আনন্দ। আর ফিতর বলতে রোজার সমাপ্তি কিংবা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্য।

রমজানুল মোবারকে একজন মুসলমানকে নিজের সাধারণ জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যে এবং তার সন্তুষ্টি অর্জনের ওপর বিশেষ জোর দিতে হয়। আল্লাহর ইবাদতে সাধনার সঙ্গে কিছু বিধিনিষেধ সহকারে পালন করতে হয় দিন-রাতের কর্মসূচি। তার ফলস্বরূপ মহান প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। এই সন্তুষ্টির একটি তাৎক্ষণিক আলামত ঈদুল ফিতরের পুরস্কার। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনায় নিয়োজিত থাকার পর তাতে সমাপ্তি ঘটানো ও দিনের বেলায় পানাহারের স্বাভাবিক নিয়মে ফিরে যাওয়া উপলক্ষে আনন্দ উপভোগের ব্যবস্থা দিয়েছে ইসলামি শরিয়ত। এটি শুধু অনুমতি নয়, বরং অনেকটা বাধ্যতামূলক নির্দেশ। কেননা শাওয়ালের প্রথম দিনে রোজা রাখাই নিষিদ্ধ। দুই ঈদের দিনে পানাহার করা ও আল্লাহর নিয়ামতের স্বাদ গ্রহণ করা অবশ্য পালনীয় এবং এর তাৎপর্য অনেক। 

হাদিসের গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত আছে, মহানবী (সা.) হিজরত করে মদিনায় এসে দেখলেন এখানকার বাসিন্দারা বছরের দুটি দিন আনন্দ-উৎসবে কাটায়। যদিও এর আগে এখানকার অনেকে মুসলমান হয়েছিল, কিন্তু প্রথাটি চালু ছিল। যেহেতু এতে পৌত্তলিকতার ছাপ ছিল, এ জন্য মুসলমানদের তাতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় আল্লাহর নবী (সা.) তাদের জানালেন, আল্লাহ মুসলমানদের আরো উন্নত ও উত্তম দুটি উপলক্ষ দান করেছেন আনন্দ-উৎসবের জন্য। একটি রমজান মাসের শেষে শাওয়ালের প্রথম তারিখে, আরেকটি জিলহজ মাসের দশম তারিখে বা হজের পরের দিন।

ইসলামে ঈদের খুশি শুধু ধনীরা পাবে তা নয়, বরং গরিব-অসহায়রাও ঈদের খুশি ভোগ করবে। তাই ঈদুল ফিতরের সময় ধনীদের ওপর সাদাকাতুল ফিতর অত্যাবশ্যক করা হয়েছে। সিয়াম সাধনার মাস সফলভাবে সম্পন্ন করার শেষ প্রান্তে উপনীত হওয়া একটি শুভ আলামত। তাই আল্লাহর অপার রহমত ও অনুগ্রহের অধিকারী হওয়ার এবং পাপরাশি থেকে পাকসাফ হয়ে ঈদের আনন্দ ভোগের সুসংবাদ ঘোষণা হতে থাকে রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে।

রমজানের ২৯ বা ৩০ দিন অতিবাহিত করার পর আসে ঈদুল ফিতরের দিন। পুরো এক মাস আনুগত্য, বাধ্যতা ও ইবাদতের পুরস্কারের সিদ্ধান্ত হয় এবং তাকে রোজার পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এই হিসেবে ঈদের রাতকে ‘লাইলাতুল জায়েযা’ বা পুরস্কারের রাত নামে আখ্যায়িত করা হয়। রমজানের রোজা যে ব্যক্তি যথানিয়মে পালন করে, রমজান তাকে এমন পবিত্রতা দান কওে, যা তার সারা বছরের জন্য বরকত ও রহমতের পাথেয় হয় এবং বছর ঘুরে আবার এই বরকতময় মাস আসে। তখন কল্যাণ ও মহিমার এই কর্মসূচি আবার পালনের সুযোগ হয়।

রমজান মাস একজন মুসলমানকে এই উপলব্ধি দান করে যে, এই পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে, যাদের অনাহারের কষ্ট ভোগ করতে হয়। এমন অনেক মানুষ রয়েছে, যাদের মানবীয় চাহিদা পূরণের সামর্থ্যও নেই।

রমজান আরো বলে, মানুষের উচিত তার চারপাশে বসবাসকারী ও স্বজাতির দুঃখ-কষ্ট অনুভব করা এবং তাদের প্রতি যথাসম্ভব সমবেদনা অনুভব করা। এ জন্য অভাবীদের সহায়তা ও ক্ষুধার্তকে আহার করানো রমজানের অত্যন্ত প্রিয় কাজগুলোর অন্তর্গত সাব্যস্ত করা হয়েছে। মানুষ যখন রোজা রেখে ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করে তখন সে নিশ্চয়ই অনুভব করতে পারে ক্ষুধা কী এবং অনাহারী মানুষদের প্রতি সমবেদনা কত উন্নত আচরণ। রোজা রেখে সে যখন প্রবৃত্তির বিভিন্ন চাহিদা পূরণ থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখতে বাধ্য হয়, তখন সে নিজেকে সেসব মন্দ কাজকর্ম থেকে আত্মনিয়ন্ত্রণে অভ্যস্ত হওয়ার সুযোগ পায়। এভাবে রমজান আসে মানুষকে সৎ, সজ্জন ও পবিত্র বানানোর কর্মসূচি নিয়ে। এই কর্মসূচি মানুষের জন্য একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। এতে রয়েছে মানুষের উন্নতি ও কল্যাণের পাশাপাশি মহান প্রভুর সন্তুষ্টি ও প্রীতি লাভের ব্যবস্থা। 

ঈদের দিনে খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, মিসওয়াক করা, মহল্লার (এলাকার) মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ পড়া, গোসল করা, সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা, আতর ব্যবহার করা, নামাজের আগে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা, ঈদুল ফিতর নামাজের আগে কিছু মিষ্টান্ন খাওয়া, তিন, পাঁচ বা বেজোড়সংখ্যক খেজুর বা খুরমা খাওয়া, সকাল সকাল ঈদের নামাজ পড়ার জন্য যাওয়া, ঈদের নামাজ ঈদগাহে গিয়ে পড়া সম্ভব না হলে মহল্লার মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজ পড়া, আস্তে আস্তে নিম্নলিখিত দোয়া পড়তে পড়তে ঈদগাহে যাওয়া- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ। ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া, এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা, শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে খুশি প্রকাশ করা প্রভৃতি ঈদের সুন্নত। 

আল্লাহ তাআলা আমাদের তাঁর সুসংবাদের অধিকারী করুন। প্রকৃত খুশি ও উভয় জগতের কল্যাণ আমাদের নসিব করুন। সবাইকে ঈদ মোবারক।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh