Logo
×

Follow Us

প্রতিবেদন

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী গ্রেপ্তার

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৫, ১৬:৫৬

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী গ্রেপ্তার

ছবিতে সুব্রত বাইন

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী মোল্লা মাসুদ কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে।

মঙ্গলবার তার গ্রেপ্তারের খবর সেনাবাহিনীর একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সকাল থেকেই এই শীর্ষ সন্ত্রাসীর গ্রেপ্তারের গুঞ্জন ওঠে। তবে আসলেই গ্রেপ্তার কি না সে বিষয়ে দায়িত্বশীল কেউ এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর বিকালে সুব্রত বাইনের গ্রেপ্তারের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করার কথা জানিয়েছে।

কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়ার পর কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মোশাররফ হোসেন বলেন, “বিষয়টি আমরাও শুনেছি। তবে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।”

কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, “আমাদের কোনো অভিযান ছিল না। অন্য কোনো বাহিনী করছে কি না জানি না। জানার চেষ্টা করছি।”

মঙ্গলবার ভোরে কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর সোনার বাংলা সড়ক এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে সুব্রত ও মাসুদকে সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করেছে বলে এলাকবাসীরা জানিয়েছে।

কালিশংকরপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দেড় মাস আগে কালিশংকরপুর সোনার বাংলা সড়ক এলাকার মীর মহিউদ্দিনের বাড়ির নিচ তলা ভাড়া নেন দুই যুবক। ওই বাড়িতেই থাকতেন তারা। বাড়ির নিচতলা ভাড়া নেওয়ার পর থেকে বাড়ির দরজা-জানালা খুলতে দেখেননি স্থানীয় বাসিন্দারা। মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ বাড়িটির তালা ভাঙার শব্দ পেয়ে ছুটে যান তারা। এরপর দেখতে পান সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাড়িটি ঘিরে অভিযান চালাচ্ছে। এর কিছুক্ষণ পর দুজনকে সেনাবাহিনীর গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে দেখে এলাকা মানুষজন।

কে এই সুব্রত বাইন

সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। ১৯৯১ সালে নগরীর আগারগাঁও এলাকায় জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ হত্যার মধ্য দিয়ে তার সন্ত্রাসী জীবনের উত্থান।

২০০১ সালে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। এদের মধ্যে ঢাকার অপরাধ জগতের তখনকার প্রভাবশালী সেভেন স্টার গ্রুপের প্রধান সুব্র্রত বাইনও ছিলেন।

২০০৩ সালের দিকে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর তৎপরতা বেড়ে গেলে সুব্রত ভারতে পালিয়ে যান।

১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ট্রিপল মার্ডারে নেতৃত্ব দেন সুব্রত। এ ছাড়া মগবাজারের রফিক, সিদ্ধেশ্বরীর খোকনসহ বেশ কয়েকজন তার হাতে খুন হন। খুব অল্প সময়ে রাজধানীর দক্ষিণাংশের একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ চলে আসে সুব্রত বাইনের হাতে। তার বিরুদ্ধে সে সময় কমপক্ষে ৩০টি মামলা ছিল। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে আগারগাঁওয়ে জাসদ ছাত্রলীগের নেতা মুরাদ খুনের ঘটনায় তার যাবজ্জীবন সাজা হয়।

১৯৯৭ সালে নয়াপল্টন এলাকার একটি হাসপাতাল থেকে গোয়েন্দা পুলিশ সুব্রত বাইনকে গ্রেপ্তার করে।। বছর দেড়েক জেলে থাকার পর জামিনে বেরিয়ে যান।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০১ সালের ২৫ ডিসেম্বর ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম এবং তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। এ তালিকায় প্রথম নামই ছিল সুব্রত বাইনের। এরপর সুব্রত ঢাকা ছেড়ে কলকাতায় ঘাঁটি গাড়েন। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ায় বিয়েও করেন তিনি।

ভারতে গিয়ে সেখানে জমি কিনে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য যাবতীয় নথিপত্র তৈরি করেন সুব্রত। বৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ২০০৮ সালের ১১ অক্টোবর কলকাতা পুলিশ তাকে আটক করে। তবে বেশি দিন জেলে থাকতে হয়নি। জামিন পেয়ে দুবাই চলে যান। সেখান থেকে ফিরে কলকাতার এক চিত্রনায়িকার কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। সেই ফোন কলের সূত্র ধরে ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স তাকে ধাওয়া করে।

তাড়া খেয়ে সুব্রত নেপালের সীমান্ত শহর কাঁকরভিটায় ঢুকে পড়েন এবং নেপালি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। প্রথমে তাকে ভাদ্রপুর এবং পরে ঝুমকা কারাগারে নেওয়া হয়। ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর সেই কারাগারে ৭৭ ফুট লম্বা সুড়ঙ্গ কেটে পালিয়ে যান। আবার কলকাতায় আসার কয়েক দিন পর ২৭ নভেম্বর বউবাজার এলাকা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর থেকে তিনি কলকাতার জেলেই ছিলেন।

কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া, চব্বিশ পরগনা জেলায় সুব্রত মৎস্য খামারসহ বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন এবং সেখানে সম্পত্তিও কেনেন।

এছাড়াও ভারতের ভোটার পরিচয় পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, রেশন কার্ড ইত্যাদি যোগাড় করে নিজেকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা চালান সুব্রত।

ভারত থেকে সুব্রত কবে দেশে ফিরেছেন এবং কী করতেন সেসব বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫