‘নির্ধারিত জায়গায়’ পশু জবাইয়ের আহ্বান, কিন্তু সেটা কোথায়?

আবুল বাসার সাজ্জাদ, দেশকাল নিউজ ডটকম
প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ২২:২৭

প্রতীকী ছবি
বিগত বছরগুলোতে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে কোরবানির পশু জবাইয়ের নির্ধারিত স্থান থাকলেও এবার সেই তালিকা নেই কোথাও। সিটি করপোরেশন কিংবা মন্ত্রণালয়ে কথা বলেও তালিকার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। যদিও পরিবেশ মন্ত্রণালয় আহ্বান জানিয়েছে, নির্ধারিত স্থানে কোরবানির পশু জবাই করতে হবে।
যে আহ্বান পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, উন্মুক্ত বা অনির্ধারিত স্থানে পশু জবাই থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্ধারিত স্থানে কোরবানির পশু জবাই নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছ পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানায়, এ সময় যত্রতত্র পশু জবাই, উচ্ছিষ্ট ফেলা ও বর্জ্য ফেলে রাখার কারণে পরিবেশ দূষণ, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও জনদুর্ভোগ তৈরি হয়, যা প্রতিরোধে সবার সচেতন অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
এ ছাড়া পরিবেশসম্মতভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপরেও তাগিদ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
জবাইয়ের সময় ও পরবর্তী কার্যক্রমে যথাযথ ব্যক্তিগত সুরক্ষা (যেমন: গ্লাভস, মাস্ক, অ্যাপ্রোন) নিশ্চিত করতে হবে। পশুর রক্ত, গোবর ও অন্যান্য পরিত্যক্ত অংশ নির্ধারিত গর্তে ফেলে মাটি চাপা দেওয়ারও অনুরোধ জানিয়েছে তারা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জবাইকৃত পশুর উচ্ছিষ্ট যেমন রক্ত, চামড়া, নাড়িভুঁড়ি, হাড়, শিং, গোবর ইত্যাদি যেন কোনো অবস্থাতেই খোলা জায়গায় না ফেলা হয়, বরং নির্ধারিত ডাস্টবিন বা স্থানেই ফেলা উচিত। কোরবানির মাংস বিতরণ বা বর্জ্য অপসারণে প্লাস্টিক নয়, বরং পরিবেশবান্ধব (বায়োডিগ্রেডেবল) ব্যাগ বা পাত্র ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে।”
নির্ধারিত জায়গাটি কোথায়, ‘লিস্ট নেই’
কিন্তু দুই সিটি করপোরেশনের বাসিন্দারা তাদের কোরবানির পশু নির্ধারিত কোন জায়গায় জবাই করবেন সেই তালিকা এবার করা হয়নি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলররা সক্রিয় না থাকায় এবার জায়গার লিস্টের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই বলে ভাষ্য সিটি করপোরেশনের।
উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. জোবায়ের হোসেন বলেন, “কোরবানির নির্ধারিত স্থান সমূহের লিস্ট তো আমাদের কাছে নির্দিষ্টভাবে নেই। তবে আঞ্চলিক অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে থাকতে পারে।”
এ সময় তিনি আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। তবে আঞ্চলিক অফিসেও এই তথ্য নেই বলা জানা গেছে।
অঞ্চল -১ এর সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আনিচুল হক বলেন, “কোরবানির নির্দিষ্ট জায়গার তথ্য তো আমাদের কাছে নেই। আর আমাদের অঞ্চল-১ এ কোরবানির জায়গা নেই।”
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা দীপংকর বর বলেন, “এই লিস্ট তো এবার আমাদের কাছেও নেই। আগে যখন কাউন্সিলররা ছিলেন তখন এটি আমাদের কাছে আসত।”
এবার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কোরবানির পশু জবাইয়ের নির্ধারিত স্থান আছে কি না জানতে জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রাসেল রহমানকে ফোন করলে তাকে আর পাওয়া যায়নি।
দক্ষিণে ১২ ঘণ্টায় বর্জ্য অপসারণ, প্রস্তুত ১০ হাজার কর্মী
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এবার ১২ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করবে। এ জন্য ১০ হাজার ২৬৭ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, কোরবানির পশুর বর্জ্য ১২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করতে ডিএসসিসির ১০ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ২০৭টি ডাম ট্রাক, ২০০টি মিনি ট্রাক, ৪৪টি কম্পেক্টর, ৩৯টি কন্টেইনার ক্যারিয়ার, ১৬টি পে-লোডার, ৫টি টায়ার ডোজার, ৯টি পানির গাড়ি, ২টি বুলডোজার, ৪টি এক্সেভেটর, ৩টি গাড়িবাহী এয়ার কম্প্রেসার, ২টি ফর্ক লিফ্ট, ৩টি স্কিড লোডারসহ বিভিন্ন যানবাহন ও যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ঈদের দিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৩টার মধ্যে ৭৫টি ওয়ার্ডের বর্জ্য অপসারণ সম্পন্ন হবে।
প্রশাসক বলেন, ‘আমরা এবার ৩০ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণের প্রস্তুতি রেখেছি। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে ১ লাখ ৪০ হাজার বায়ো-ডিগ্রেডেবল ব্যাগ, ৪০ টন ব্লিচিং পাউডার ও ২২২ গ্যালন স্যাভলন বিতরণ করা হয়েছে।
এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন যে ৮টি স্থানে কোরবানীর পশুর হাট বসিয়েছে এগুলো হলো- উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ ক্লাবের খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশান ঘাটের পশ্চিম পাশে খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ ও ছনটেক মহিলা মাদ্রাসার খালি জায়গা, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের দক্ষিণ পাশের খালি জায়গা ও ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল, রহমতগঞ্জ ক্লাবের খালি জায়গা, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা, আমুলিয়া আলীগড় মডেল কলেজের পাশের জায়গা এবং ইন্সটিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা।
উত্তরে প্রস্তুত ১০ হাজার কর্মী
উত্তর সিটি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানিয়েছেন, ঈদে দিনের বর্জ্য দিনের মধ্যেই অপসারণ করে শহর পরিচ্ছন্ন রাখা হবে। সংস্থার প্রায় ১০ হাজার কর্মী ঈদের ৩ দিন এ পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।
এবার ঈদে প্রায় ২০ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হবে বলে ধারণা করছে ডিএনসিসি।
এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে ২২৪টি ডাম্প ট্রাক, ৩৮১টি পিকআপ, ২৪টি পেলোডার নিয়োজিত থাকবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সাড়ে ১২ লাখ পলিব্যাগ, আড়াই হাজার বস্তা ব্লিচিং ও চার হাজার ক্যান স্যাভলন বিতরণ করা হয়েছে।