খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৫, ১৩:৩৮

গত বছরের ডিসেম্বরের পরে মাত্র তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।
রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ মার্চ শেষে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।
গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, অর্থাৎ মাত্র তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের তুলনায় বিপজ্জনকভাবে বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত এ পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের সময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। তা প্রায় ২০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লাখ কোটির ঘরে পৌঁছেছে।
শীর্ষ গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ
আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ী গ্রুপ বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে তা অব্যবহৃত অথবা বিদেশে পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে এস আলম, বেক্সিমকোসহ অনেকে এখন খেলাপির তালিকায়। কেউ জেলে, অনেকে বিদেশে পালিয়ে আছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ও সমালোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া ব্যাংকগুলো ঋণের প্রকৃত চিত্র দেখাতে শুরু করেছে। তাদের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।
একইভাবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বেশ বেড়েছে।
পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ, নাসা গ্রুপসহ আরও কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এখন ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল তিন লাখ ১৯ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। এই ঋণের ৪৫ শতাংশ খেলাপি। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ ছিল ১৩ লাখ ১০ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা, যার ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ খেলাপি। আর বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ঋণের ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হারও নির্ধারিত মাত্রার অনেক উপরে।
ব্যাংকাররা বলছেন, গুটিকয়েক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতে গিয়ে গোটা ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে গেছে। এতে নতুন ঋণ বিতরণে গতি হ্রাস পাচ্ছে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন অর্থায়ন থেকে এবং সাধারণ আমানতকারীদের মধ্যে আস্থা সংকট বাড়ছে।
খেলাপির বিষয়ে আইএমএফের শর্ত
ডলার সংকটে পড়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের ঋণের দারস্ত হয় বাংলাদেশ। ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের তিনটি কিস্তি পেয়েছে বাকি কিস্তির অর্থ শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ধাপে ধাপে দেবে সংস্থাটি। এর মধ্যে অন্যতম ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি খাতে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশ এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে।