সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে ফের বিক্ষোভ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৫, ১৪:২৮
-684fd5c69e4fd.jpg)
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সকাল থেকে বিক্ষোভ করছেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা।
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে ঈদের ছুটির পর ফের বিক্ষোভে নেমেছেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা।
রবিবার সকাল থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছেন। বিক্ষোভ শেষে সরকারের তিন উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা রয়েছে তাদের।
সকাল ১১টার পর কর্মচারীরা সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে বাদামতলায় জড়ো হয়ে মিছিল শুরু করেন। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন ভবনের নিচে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হন।
কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছে সচিবালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম।
সমাবেশে ফোরামের কো–চেয়ারম্যান মো. বাদিউল কবির ও মো. নুরুল ইসলামসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত আছেন।
সংশোধিত অধ্যাদেশটি বৈষম্যমূলক ও ফ্যাসিবাদী আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে তা বাতিল করার আহ্বান জানান বক্তারা।
কর্মচারীরা ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে, ‘জেগেছে রে জেগেছে, সচিবালয় জেগেছে’, ‘মানি না মানব না, ফ্যাসিবাদী কালো আইন’, ‘ফ্যাসিবাদের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’সহ নানা স্লোগান দিচ্ছেন।
সংশোধিত অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সোমবার স্বরাষ্ট্র, সমাজকল্যাণ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা রয়েছে তাদের। তারপর ঐক্য ফোরামের নেতারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
২২ মে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন হয়।
এরপর থেকে অধ্যাদেশের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। তাদের অভিযোগ, সাড়ে চার দশক আগের বিশেষ বিধানের কিছু ‘নিবর্তনমূলক ধারা’ সংযোজন করে অধ্যাদেশটি করা হয়েছে।
কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে সন্ধ্যায় ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে সরকার।
বর্তমানে দেশে ১৫ লাখের মতো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। আইন অনুযায়ী সবাই কর্মচারী। সংশোধিত অধ্যাদেশে অনুযায়ী, চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই কেবল কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে সরকারি কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা যাবে।
সরকারি কর্মচারীদের যে চার বিষয়কে অপরাধের আওতাভুক্ত করা হয়েছে সেগুলো হলো: সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন, যা অনানুগত্যের শামিল বা যা অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে, অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন, অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন এবং যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। আর অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে কেন দণ্ড আরোপ করা হবে না, সে বিষয়ে আরও সাত কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।
তার ভিত্তিতে দণ্ড আরোপ করা যাবে। এভাবে দণ্ড আরোপ করা হলে দোষী কর্মচারী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। তবে রাষ্ট্রপতির দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করা যাবে।
অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে ঈদের আগে টানা চার দিন সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। নিজেদের দপ্তর ছেড়ে বিপুলসংখ্যক কর্মচারী কর্মসূচিতে অংশ নেন।
ঈদের ছুটি শুরুর আগে কর্মচারীরা অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, খাদ্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, খাদ্য, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও জনপ্রশাসন সচিবকে স্মারকলিপি দিয়েছিল কর্মচারী সংগঠনগুলো।
এরই ধারাবাহিকতায় ঈদের পর দ্বিতীয় কর্মদিবসে তিন উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা রয়েছে তাদের।