
শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে নতুনবাজার দিয়ে যান চলাচল বিঘ্ন ঘটছে।
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজধানীর নতুনবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শিক্ষার্থীরা মূল সড়কে অবস্থান নিলে নতুনবাজার-গুলশান-বনশ্রী সংযোগ সড়কে যান চলাচলে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে।
কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাড্ডাগামী পথে গাড়ি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ভাটারা থানার ওসি রাকিবুল হাসান জানান, ইউআইইউ শিক্ষার্থীরা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবিতে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন।
অবরোধস্থলে শিক্ষার্থীরা ‘হয় বহিষ্কার বাদ যাবে, না হয় আমার লাশ যাবে’, ‘প্রত্যাহার বহিষ্কার, তারপর হবে সংস্কার’, ‘অথরিটি স্বৈরাচার, এবার তোরা গদি ছাড়’—সহ বিভিন্ন স্লোগানে প্রতিবাদ জানান।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে নতুনবাজার এলাকা দিয়ে যান চলাচল বিঘ্ন ঘটছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করা লোকজন। এ সময় অনেক পথচারীকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
আনিসুর রহমান নামে এক পথচারী বলেন, “কথায় কথায় সড়ক অবরোধ করা বন্ধ করতে হবে। এই সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের। তারা চাইলে সেখানেই সমস্যা সমাধান করতে পারেন। কিন্তু এভাবে রাস্তা বন্ধ করে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানে হয়। এটা কেমন আন্দোলন।”
বাবার মৃত্যুর কারণে মিডটার্ম পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা এক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফিরে গেলে বিভাগীয় প্রধান কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসসি) বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নুরুল হুদা বাবার মৃত্যুসনদ সত্যায়িত করতে বলেন।
পরে ওই শিক্ষার্থী বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। বিভাগীয় প্রধানের অনুপস্থিতির কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা যায়, তিনি মন্ত্রণালয়ে সরকারি কাজে গেছেন।
এই ঘটনার পর ওই শিক্ষার্থী ফেসবুকে ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ’ গ্রুপে অভিযোগ পোস্ট করেন। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়।
২৬ ও ২৭ এপ্রিল ইউআইইউ ক্যাম্পাসে আন্দোলনের পর উপাচার্যসহ ১১ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। এরপর ২৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
পরে ২০ মে থেকে অনলাইন ক্লাস চালু হলেও শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ তা বর্জন করে সরাসরি ক্লাস ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের যৌক্তিক দাবি উপেক্ষা করে কর্তৃপক্ষ আন্দোলন দমন করতে বহিষ্কার ও তদন্তের ভয় দেখাচ্ছে। যদিও ট্রাস্টি বোর্ড ২৬ মের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করলে পূর্ণ টিউশন ফির আশ্বাস দিয়েছিল।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক সুলতান মাহমুদ ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ইউজিসি ইউআইইউ ট্রাস্টি বোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। তিনি বলেন, “আমরা চাই না কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হোক।”